কোরআন সর্বকালের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মানবকল্যাণের জন্য

শেখ আবুল কাসেম মিঠুন।

আধুনিক শিক্ষায় যারা শিক্ষিত তারা যদি পবিত্র কোরআন থেকে জ্ঞান আহরণ করতে চান তবে একবার দু’বার কোরআন পড়লে সেই জ্ঞান অর্জিত হবেনা, বার বার পড়তে হবে। কারণ আল্লাহ নিজেই কোরআনে তা বলেছেন, সকল সমুদ্র যদি কালি হতো, সকল গাছ যদি কলম হয় আল্লাহর কথা শেষ হবে না। একটামাত্র কোরানের সংক্ষিপ্ত পরিসরে তার কিছু বর্ণনা দেয়া হয়েছে। একবার পড়লে বুঝা যায়?
ইসলামী শাসন ব্যবস্থা, হযরত হাসান বছরী (র:)-এর ”যুহদ” তথা দুনিয়াবিমুখ আন্দোলনের সময়, পরবর্তীতকালের দুনিয়া বিমুখদের সময়, আরো পরে যখন সেই আন্দোলন বিকৃত হয়ে সূফীবাদ হয়ে পড়ে ও প্রকৃত ইসলাম অর্থাৎ রাসূল (স:) প্রচারিত এবং প্রতিষ্ঠিত ইসলামের মধ্যে ঢুকে পড়ে, সেইসব সময়কার এবং আধুনিক জাহেলিয়াত ও তাগুত শাসন ব্যবস্থায় বসে রাসূল (স:) প্রচারিত, প্রতিষ্ঠিত ইসলামকে সেইসব থেকে যুক্তি সহকারে রচিত তফসীর পড়তে হবে। পার্থক্য বুঝতে পারবেন। তাছাড়া আপনার কিছুই মুখস্ত হবে না, এটাই স্বাভাবিক, তবে চেষ্টা থাকলে যে জ্ঞান জন্মাবে তার নাম অনুধ্যান। কোনটা আল্লাহতায়ালার পছন্দ অথবা কোরআন হাদিসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ আর কোনটা নয় অথবা কে সঠিক বা বেঠিক পথে চলছে তা সেই অনুধ্যান জ্ঞান দিয়ে আপনি বুঝতে পারবেন।
ইসলামী শাসন এবং যুহদ আন্দোলনের সময় রচিত ফিকাহশাস্ত্র আজো চলছে। নতুন কোন জ্ঞানী আজো তৈরি হয়নি। যারা আধুনিক সমস্যাকে দূর করার জন্য সময় উপযোগি ফিকাহ রচনা করবেন। অথচ কোরআন এসেছে সর্বকালের মানুষের কল্যাণ সাধনের জন্য। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ফিলিপ কে হিট্টি স্বীকার করেছেন, মুসলমানরাই পাশ্চাত্যকে জ্ঞান বিজ্ঞান শিখিয়েছে, অন্ধকারাচ্ছন্ন পাশ্চাত্যে সভ্যতা-সংস্কৃতির আলো জ্বেলেছে। সেই ইসলাম কোথায়! কেউ কিছু না জেনেবুঝে আধুনিক ইসলামের নামে জাহেলিয়াত চর্চা করছে, কেউ আধুনিকতাকে বর্জন করছে। এভাবে ইসলাম এগোয়? আমার স্থির বিশ্বাস, বিশ্বের মুসলমানরা এ কারণেই পিছিয়ে পড়েছে। পরাজিত হচ্ছে। মার খাচ্ছে এবং খোদ ইসলামকেই ঘৃণ্য করে তুলেছে।
মুসলমানরাই উড়োজাহাজ তৈরির প্রাথমিক ধারণা, ক্যামেরার ধারণা দিয়েছে। বারুদ আবিষ্কার করেছে, কাগজ, হাসপাতাল, মোজাইক, সোফা, বই বাধানো শিখিয়েছে, ব্যানারে লেখার রঙ, চিনি, ইষ্পাত, কায়রোর রাস্তার দুপাশে দুশ বইয়ের দোকান দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যায়, পাঠ্যপুস্তক, মেডিকেল সাইয়েন্স, কেমিকেল, কায়রোর রাস্তায় সারারাত যখন আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা হয়েছে তার সাতশত বছর পরে ইংল্যান্ড শহরে সারা রাত আলো জ্বালানো হয়েছে। মোটকথা আধুনিক শিক্ষা ও সভ্যতার প্রায় সবই মুসলমানদের আবিষ্কার এবং অবদান। এসব ৭০০ সাল থেকে ইউরোপে শিল্প-বিপ্লব পর্যন্ত হয়েছে।
পাশ্চাত্য যখন চাদকে ছাড়িয়ে মঙ্গোলে মুসলিমদের নামে পতাকা ওড়াচ্ছে তখন আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করি ফরজ নামাজের পর মোনাজাত করা হারাম হালাল নিয়ে, রাসূল স: মাটির তৈরি না নূরের তৈরি, নামাজে ইয়াদাইন করা নিয়ে। এসব বিষয়ে তো দোযখ বেহেশত নির্ধারিত হয়নি! তবে? আমাদের তরুণরাই ভরসা, তারা মাদ্রাসা পার হয়ে ভার্সিটি পড়েছে। তাদের উপর মহান দয়াময় আল্লাহতায়ালার রহমত বর্ষিত হোক, তিনি তাদেরকে তার রহমতের ছায়ায় সকল প্রকার অপচ্ছায়া এবং বিপদ থেকে হেফাজত করুণ। আশা এবং বিশ্বাস হিংসা-বিদ্বেষপ্রবণ, প্রতিহিংসাপরায়ণ সৃজনশীলতা নষ্ট হয়ে যাওয়া নেশাগ্রস্ত খুনী মানসিকতার নষ্ট প্রজন্মের বিপরীতে আমাদের আলোকজ্জ্বল তরুণ সমাজ নিজেদেরকে ফিরে পাবে এবং আগামী নেতৃত্বের জন্য নিজেদেরকে তৈরি করবে।
নেপোলিয়ন তার সৈন্যদের বলেছিলেন, প্রত্যেক সৈন্য মন দিয়ে শোন, ”তোমাদেরকে তৈরি করা হচ্ছে সেনাপতি হওয়ার জন্য। সবাই সেনাপতি হবে এই উদ্দেশ্যে কাজে ঝাপিয়ে পড়ো।”
আমি সামান্য গোনাহগার একজন বান্দা, আমার বিনীত অনুরোধ তরুণ সমাজের কাছে, তোমার সৃজনশীল কাজই তোমাকে নেতৃত্বের আসনে বসাবে, নেতৃত্ব সৃজনশীল কাজের জন্ম দিতে পারে না।” ইয়া আল্লাহ সর্বদা সকল ভুল-ত্রুটি শুধরে সঠিক পথে আমাদের তরুণদের চালিত করুন। আমিন।

Leave a comment