ব্যবসা-বণিজ্য ও সম্পদ অর্জন :

হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল

১. ব্যবসা-বণিজ্য হালাল :

الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا فَمَنْ جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّهِ فَانْتَهَى فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ وَمَنْ عَادَ فَأُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ ﴿275﴾

যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা এ জন্য যে, তারা বলে, বেচা-কেনা সুদের মতই। অথচ আল্ল­াহ বেচা-কেনা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতএব, যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসার পর সে বিরত হল, যা গত হয়েছে তা তার জন্যই ইচ্ছাধীন। আর তার ব্যাপারটি আল­াহর হাওলায়। আর যারা ফিরে গেল, তারা আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে। [সূলা আল বাকারাহ-২৭৫]

২. ব্যবসা-বণিজ্যের ভিত্তি কুরআন ও সুন্নাহ :

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ (9)

হে মুমিনগণ, যখন জুমু‘আর দিনে সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচা-কেনা বর্জন কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে। [সূরা আলজুমআ-৯]

فِي بُيُوتٍ أَذِنَ اللَّهُ أَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ يُسَبِّحُ لَهُ فِيهَا بِالْغُدُوِّ وَالْآَصَالِ , رِجَالٌ لَا تُلْهِيهِمْ تِجَارَةٌ وَلَا بَيْعٌ عنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ يَخَافُونَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيهِ الْقُلُوبُ وَالْأَبْصَارُ , لِيَجْزِيَهُمُ اللَّهُ أَحْسَنَ مَا عَمِلُوا وَيَزِيدَهُمْ مِنْ فَضْلِهِ وَاللَّهُ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ) [سورة النور-آية 36 ، 37]

সেসব ঘরে যাকে সমুন্নত করতে এবং যেখানে আল্লাহর নাম যিক্র করতে আল্লাহই অনুমতি দিয়েছেন। সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর তাসবীহ পাঠ করে- সেসব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর যিক্র, সালাত কায়েম করা ও যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখে না। তারা সেদিনকে ভয় করে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে। যাতে তাদের কৃত উত্তম আমলের জন্য আল্লাহ তাদেরকে প্রতিদান দেন এবং তিনি স্বীয় অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন অপরিমিত রিয্ক দান করেন।

৩. ব্যবসা-বণিজ্য সুন্নাহ সম্মত :

هُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ ذَلُولًا فَامْشُوا فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُوا مِنْ رِزْقِهِ وَإِلَيْهِ النُّشُورُ (15)

তিনিই তো তোমাদের জন্য যমীনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে-প্রান্তরে বিচরণ কর এবং তাঁর রিয্ক থেকে তোমরা আহার কর। আর তাঁর নিকটই পুনরুত্থান।[সূরা মূলক ১৫]

فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِنْ فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (10)

অতঃপর যখন সালাত সমাপ্ত হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় আর আল্লাহর অনুগ্রহ হতে অনুসন্ধান কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার। [সূরা আলজুমআ-১০]

৪. সৎ ব্যবসায়ীর জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : التَّاجِرُ الصَّدُوقُ الأَمِينُ مَعَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ

আবু সাঈদ খুদরী রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ী (কিয়ামতের দিন) নবীগণ, সিদ্দিকীন ও শহীদদের সাথে থাকবে। [সুনান তিরমীযি]

৫. ব্যবসা-বণিজ্য করা আখেরাত বিমুখীতা নয়

وَابْتَغِ فِيمَا آتَاكَ اللَّهُ الدَّارَ الْآخِرَةَ وَلَا تَنْسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا وَأَحْسِنْ كَمَا أَحْسَنَ اللَّهُ إِلَيْكَ وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ (77)

আর আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন তাতে তুমি আখিরাতের নিবাস অনুসন্ধান কর। তবে তুমি দুনিয়া থেকে তোমার অংশ ভুলে যেয়ো না। তোমার প্রতি আল্লাহ যেরূপ অনুগ্রহ করেছেন তুমিও সেরূপ অনুগ্রহ কর। আর যমীনে ফাসাদ করতে চেয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসাদকারীদের ভালবাসেন না’। কাসাস-৭৭

وَمِنْهُمْ مَنْ يَقُولُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

আর তাদের মধ্যে এমনও আছে, যারা বলে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন। আর আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন।আলবাকারাহ-২০১

৬ সাবলম্বি হওয়ার জন্য ব্যবসা-বণিজ্য সময়ের দাবী

عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ

جَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعُودُنِي وَأَنَا بِمَكَّةَ وَهُوَ يَكْرَهُ أَنْ يَمُوتَ بِالْأَرْضِ الَّتِي هَاجَرَ مِنْهَا قَالَ يَرْحَمُ اللَّهُ ابْنَ عَفْرَاءَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أُوصِي بِمَالِي كُلِّهِ قَالَ لَا قُلْتُ فَالشَّطْرُ قَالَ لَا قُلْتُ الثُّلُثُ قَالَ فَالثُّلُثُ وَالثُّلُثُ كَثِيرٌ إِنَّكَ أَنْ تَدَعَ وَرَثَتَكَ أَغْنِيَاءَ خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَدَعَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُونَ النَّاسَ فِي أَيْدِيهِمْ وَإِنَّكَ مَهْمَا أَنْفَقْتَ مِنْ نَفَقَةٍ فَإِنَّهَا صَدَقَةٌ حَتَّى اللُّقْمَةُ الَّتِي تَرْفَعُهَا إِلَى فِي امْرَأَتِكَ وَعَسَى اللَّهُ أَنْ يَرْفَعَكَ فَيَنْتَفِعَ بِكَ نَاسٌ وَيُضَرَّ بِكَ آخَرُونَ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ يَوْمَئِذٍ إِلَّا ابْنَةٌ

সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদি আল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে এভাবে বলেছেন, তিনি তোমাদের সন্তান সন্তুতিদেরকে সক্ষম ও সাবলম্বি রেখে যাওয়া, তাদেরকে অভাবী ও মানুষের কাছে হাত পাতা অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম। (সহীহ বুখারী)

সম্পদ অর্জন

১. সম্পদ আল্লাহর নিয়ামাত:

قُلْ إِنَّ رَبِّي يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِرُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ (36)

বল, ‘আমার রব যার জন্য ইচ্ছা রিয্ক প্রশস্ত করেন অথবা সঙ্কুচিত করেন। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।’ [সূরা সাবা-৩৬]

২. সম্পদের মূল মালিক আল্লাহ

قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَنْ تَشَاءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَاءُ بِيَدِكَ الْخَيْرُ إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ﴿26﴾

বল, ‘হে আল্লাহ, রাজত্বের মালিক, আপনি যাকে চান রাজত্ব দান করেন, আর যার থেকে চান রাজত্ব কেড়ে নেন এবং আপনি যাকে চান সম্মান দান করেন। আর যাকে চান অপমানিত করেন, আপনার হাতেই কল্যাণ। নিশ্চয় আপনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান’।

لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا فِيهِنَّ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ﴿120﴾

আসমান ও যমীন এবং তাদের মধ্যে যা কিছু আছে তার রাজত্ব আল­াহরই এবং তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। [সূরা আলমায়েদাহ ১২০]

৩. সম্পদ দুনিয়ার শোভা :

الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِنْدَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَخَيْرٌ أَمَلًا (46)

সম্পদ ও সন্তান-সমত্ততি দুনিয়ার জীবনের শোভা ,আর স্থায়ী সৎ কাজ তোমার রবের নিকট প্রতিদানে উত্তম ও প্রত্যাশাতেও উত্তম । সূরা কাহাফ-৪৬

زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنْطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ذَلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاللَّهُ عِنْدَهُ حُسْنُ الْمَآَبِ ﴿14﴾

মানুষের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে প্রবৃত্তির ভালবাসা- নারী, সন্তানাদি, রাশি রাশি সোনা-রূপা, চিহ্নত ঘোড়া, গবাদি পশু ও শস্যক্ষেত। এগুলো দুনিয়ার জীবনের ভোগসামগ্রী। আর আল­াহ, তাঁর নিকট রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল।[সূরা আলেইমরান ১৪]

৪. সম্পদ একটি পরীক্ষা :

وَاعْلَمُوا أَنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ وَأَنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ (28)

আর জেনে রাখ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো ফিতনা। আর নিশ্চয় আল্লাহ, তাঁর নিকট আছে মহা পুরস্কার। আনফাল-২৮

إِنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ وَاللَّهُ عِنْدَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ (15)

তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো কেবল পরীক্ষা বিশেষ। আর আল্লাহর নিকটই মহান প্রতিদান। তাগাবুন-১৫

لَتُبْلَوُنَّ فِي أَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ وَلَتَسْمَعُنَّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَمِنَ الَّذِينَ أَشْرَكُوا أَذًى كَثِيرًا وَإِنْ تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ (186)

অবশ্যই তোমাদেরকে তোমাদের ধন-সম্পদ ও তোমাদের নিজ জীবন সম্পর্কে পরীক্ষা করা হবে। আর অবশ্যই তোমরা শুনবে তোমাদের পূর্বে যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে এবং মুশরিকদের পক্ষ থেকে অনেক কষ্টদায়ক কথা। আর যদি তোমরা ধৈর্য ধর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে নিশ্চয় তা হবে দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা আলে ইমরান ১৮৬)

فَأَمَّا الْإِنْسَانُ إِذَا مَا ابْتَلَاهُ رَبُّهُ فَأَكْرَمَهُ وَنَعَّمَهُ فَيَقُولُ رَبِّي أَكْرَمَنِ (15) وَأَمَّا إِذَا مَا ابْتَلَاهُ فَقَدَرَ عَلَيْهِ رِزْقَهُ فَيَقُولُ رَبِّي أَهَانَنِ

আর মানুষ তো এমন যে, যখন তার রব তাকে পরীক্ষা করেন, অতঃপর তাকে সম্মান দান করেন এবং অনুগ্রহ প্রদান করেন, তখন সে বলে, ‘আমার রব আমাকে সম্মানিত করেছেন।আর যখন তিনি তাকে পরীক্ষা করেন এবং তার উপর তার রিয্ককে সঙ্কুচিত করে দেন, তখন সে বলে, ‘আমার রব আমাকে অপমানিত করেছেন’।(সূরা ফজর ১৪-১৫)

৫.সম্পদ আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার মাধ্যম নয় :

وَمَا أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ بِالَّتِي تُقَرِّبُكُمْ عِنْدَنَا زُلْفَى إِلَّا مَنْ آمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَأُولَئِكَ لَهُمْ جَزَاءُ الضِّعْفِ بِمَا عَمِلُوا وَهُمْ فِي الْغُرُفَاتِ آمِنُونَ

আর তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি এমন বস্ত্ত নয় যা তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করে দেবে। তবে যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে, তারাই তাদের আমলের বিনিময়ে পাবে বহুগুণ প্রতিদান। আর তারা (জান্নাতের) সুউচ্চ প্রাসাদে নিরাপদে থাকবে।

[সূরা সাবা-৩৬]

৬..সম্পদশালী বেশীর ভাগ নাফরমানীতে লিপ্ত :

وَمَا أَرْسَلْنَا فِي قَرْيَةٍ مِنْ نَذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتْرَفُوهَا إِنَّا بِمَا أُرْسِلْتُمْ بِهِ كَافِرُونَ (34)

আর আমি কোন জনপদে সতর্ককারী প্রেরণ করলেই সেখানকার বিত্তবান অধিবাসীরা বলেছে, ‘তোমরা যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছ অবশ্যই আমরা তা প্রত্যাখ্যানকারী’।

[সূরা সাবা-৩৪]

সম্পদ অর্জনে বর্জনীয়

১. লোভ-লালসা :

أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ (1) حَتَّى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ (2) كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُونَ (3) ثُمَّ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُونَ (4

কুরআনে এসেছে, প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে ভুলিয়ে রেখেছে। যতক্ষণ না তোমরা কবরের সাক্ষাৎ করবে। কখনো নয়, শীঘ্রই তোমরা জানবে (সূরা আত তাকাসুর ১-৩)

২. সুদ ঘুষ দেয়া নেয়া :

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ (278) فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَإِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ (279)

হে মুমিনগণ, তোমরা আল­াহকে ভয় কর এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা মুমিন হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না কর তাহলে আল­াহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও, আর যদি তোমরা তাওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই থাকবে। তোমরা যুলম করবে না এবং তোমাদের যুলম করা হবে না। আলবাকারাহ -২৭৮-২৭৯

৩. যূলম করা

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ : أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : أَتَدْرُونَ مَنِ الْمُفْلِسُ ؟ قَالُوا : الْمُفْلِسُ فِينَا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ لاَ دِرْهَمَ لَهُ ، وَلاَ مَتَاعَ لَهُ ، فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : الْمُفْلِسُ مِنْ أُمَّتِي يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلاَتِهِ وَصِيَامِهِ وَزَكَاتِهِ ، فَيَأْتِي وَقَدْ شَتَمَ هَذَا ، وَأَكَلَ مَالَ هَذَا ، وَسَفَكَ دَمَ هَذَا وَضَرَبَ هَذَا ، فَيَقْعُدُ ، فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ ، وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ ، فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُعْطِيَ مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ ، فَطُرِحَ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرِحَ فِي النَّارِ.

আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি জান গরীব কে? সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে যার সম্পদ নাই সে হলো গরীব লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে হলো গরীব যে, কিয়ামতের দিন নামায, রোযা ও যাকাত নিয়ে আসবে অথচ সে অমুককে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, অন্যায়ভাবে লোকের মাল খেয়েছে, সে লোকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। কাজেই এসব নির্যাতিত ব্যক্তিদেরকে সেদিন তার নেক আমল নামা দিয়ে দেয়া হবে। [ সহিহ মুসলিম ]

৫. খেয়ানত করা :

فَإِنْ أَمِنَ بَعْضُكُمْ بَعْضًا فَلْيُؤَدِّ الَّذِي اؤْتُمِنَ أَمَانَتَهُ وَلْيَتَّقِ اللَّهَ رَبَّهُ وَلَا تَكْتُمُوا الشَّهَادَةَ وَمَنْ يَكْتُمْهَا فَإِنَّهُ آثِمٌ قَلْبُهُ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ

কুরআনে এসেছে, আর যদি তোমরা একে অপরকে বিশ্বস্ত মনে কর, তবে যাকে বিশ্বস্ত মনে করা হয়, সে যেন স্বীয় আমানত আদায় করে এবং নিজ রব আল্ল­াহর তাকওয়া অবলম্বন করে। আলবাকারাহ -২৮৩

৬. অপচয় ও অপব্যয় করা

وَآتِ ذَا الْقُرْبَى حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا (26) إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا (27)

আর আত্মীয়কে তার হক দিয়ে দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরকেও। আর কোনভাবেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ।

يَا بَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ (31)

হে বনী আদম, তোমরা প্রতি সালাতে তোমাদের বেশ-ভূষা গ্রহণ কর এবং খাও, পান কর ও অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সুরা আরাফ-৩১)

৭. শুধু দুনিয়াকে প্রাধান্য দেয়া :

يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللَّهِ الْغَرُورُ

হে মানুষ, নিশ্চয় আল­াহর ওয়াদা সত্য; অতএব দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে; আর বড় প্রতারক (শয়তান) যেন তোমাদেরকে আল­াহর ব্যাপারে প্রতারণা না করে। ফাতির-৫

اعْلَمُوا أَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَزِينَةٌ وَتَفَاخُرٌ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِي الْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُونُ حُطَامًا وَفِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَمَغْفِرَةٌ مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانٌ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ (20

তোমরা জেনে রাখ যে, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্ব-অহঙ্কার এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র। এর উপমা হল বৃষ্টির মত, যার উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে আনন্দ দেয়, তারপর তা শুকিয়ে যায়, তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও, তারপর তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। আর আখিরাতে আছে কঠিন আযাব এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা হাদিদ ২০)

আশুরার গুরুত্ব ও ফযিলাত

হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল

الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على نبينا محمد خاتم الأنبياء وسيد المرسلين وعلى آله وصحبه أجمعين وبعد:
ইসলামে এমন কিছু দিন রয়েছে যেগুলোতে আল্লাহ তাআলা নেক আমল করার জন্য তার বান্দাহদেরকে সুযোগ করে দিয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো: মুহাররাম মাসের দশম দিবস যা আশুরা হিসাবে পরিচিত । এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এ দিনে নবী মুসা আলাইহিস সালামের বিজয় হয়েছিল। পতন হয়েছিল তখনকার সবচেয়ে শক্তিশালী জালেম সম্রাট ফেরআউন ও তার সম্রাজ্যের। আশুরাসহ যে কোন ইবাদাত অবশ্যই আল্লাহকে রাজী খুশি করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশিত পদ্ধতিতে হতে হবে। এ বিষয়ে কুরআনে এসেছে,
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
‘এবং রাসূল তোমাদের জন্য যা দিয়েছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর যা সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও, আল্লাহকে ভয় কর,নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা’ [সূরা হাশর:৭]। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ
“যে এমন ইবাদত করল যাতে আমাদের কোন নির্দেশনা নেই তা পরিত্যাজ্য” [সহীহ মুসলিম : ৪৫৯০]। নিম্নে আশুরা সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:

আশুরার গুরুত্ব ও ফযিলাত :

এক. মুহাররাম একটি বিশেষ ও নিষিদ্ধ মাস:

ইসলামে চারটি মাসকে বিশেষভাবে নিষিদ্ধ ও পবিত্র ঘোষণা করা হয়েছে। কুরআনে এসেছে,
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ
‘নিশ্চয় মাসসমূহের সংখ্যা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোন যুল্ম করো না” [সূরা আত-তাওবাহ: ৩৬]।
মুহাররাম মাস সম্পর্কে হাদীসে এসেছে,
السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ: ثَلاثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ، وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ
অর্থ: “এক বৎসরে বার মাস, তন্মধ্যে নিষিদ্ধ হলো চারটি। তিনটি পর্যায় ক্রমিক যিলক্বদ, যিলহজ্জ ও মুহররম। আর অন্যটি হল ‘মুদার’ গোত্রের রজব মাস, যার অবস্থান জুমাদা ও শা’বান মাসের মাঝখানে’’ [সহীহ বুখারী:২৯৫৮]।

দুই. মুহাররাম মাসের সিয়াম আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ :

মুহাররাম মাসের সিয়াম আল্লাহর নিকট খুবই প্রিয়। “আবু হুরাইরাহ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
أَفْضَلُ الصِّيَامِ، بَعْدَ رَمَضَانَ، شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ. وَأَفْضَلُ الصََّلاةِ، بَعْدَ الْفَرِيضَةِ، صََلاةُ اللَّيْلِ
“রমজানের পর সর্বোত্তমসওম হল আল্লাহ তাআলার মাস মুহাররাম মাসের সওম। এবং ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের সালাত” [সহীহ মুসলিম:২৮১২]।

তিন.আশুরার দিনটি শুকরিয়া আদায়ের দিন:

এ দিনে আল্লাহ তায়ালা তার নবী মুসা আলাইহিস সালামের ও তার অনুসারী ঈমানদারদের ফেরআউনের জুলুম থেকে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরআউনকে তার বাহিনীসহ সমুদ্রে ডুবিয়ে মেরেছেন। হাদিসে বলা হয়েছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ – رضى الله عنهما – أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَدِمَ الْمَدِينَةَ فَوَجَدَ الْيَهُودَ صِيَامًا يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- مَا هَذَا الْيَوْمُ الَّذِى تَصُومُونَهُ فَقَالُوا هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ أَنْجَى اللَّهُ فِيهِ مُوسَى وَقَوْمَهُ وَغَرَّقَ فِرْعَوْنَ وَقَوْمَهُ فَصَامَهُ مُوسَى شُكْرًا فَنَحْنُ نَصُومُهُ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَنَحْنُ أَحَقُّ وَأَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ. فَصَامَهُ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ
“ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় এসে দেখলেন যে, ইহুদীরা আশুরার দিনে সওম পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন “এটা কোন দিন যে তোমরা সওম পালন করছ? তারা বললঃ এটা এমন এক মহান দিবস যেদিন আল্লাহ মুছা আলাইহি সালাম ও তার সম্প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরআউনকে তার দলবলসহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। মুছা আলাইহি সালাম শুকরিয়া হিসেবে এ দিনে সওম পালন করেছেন। এ কারণে আমরাও সওম পালন করে থাকি। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ “তোমাদের চেয়ে আমরা মুছা আলাইহি সালাম এর অধিকতর ঘনিষ্ট ও নিকটবর্তী।” অতঃপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সওম পালন করলেন ও অন্যদেরকে সওম পালনের নির্দেশ দিলেন [ সহীহ বুখারী:১৮৬৫]।

চার. আশুরা বনিইসরাঈল তথা মুসলিম জাতির বিজয়ের দিন:

দীর্ঘদিন যাবত আল্লাহর নবী মুছা আলাইহিস সালাম ও তার অনুসারী ঈমানদারদের উপর ফেরাউন ও তার বাহিনীর নির্যাতন ও নিপীড়ন চলছিল। আশুরার এই দিনে সেই নির্যাতন ও নিপীড়নের হাত থেকে মুসা আলাইহিস সালাম ও তার অনুসারীগণ মুক্তি পেয়েছিলেন। সাথে সাথে ফেরাউন ও তার বাহিনীর পরাজয় হয়েছিল। এজন্য এ দিনটি মুসলিম জাতির একটি বিজয়ের দিন। কুরআনে এসেছে,
وَجَاوَزْنَا بِبَنِي إِسْرَائِيلَ الْبَحْرَ فَأَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ وَجُنُودُهُ بَغْيًا وَعَدْوًا حَتَّى إِذَا أَدْرَكَهُ الْغَرَقُ قَالَ آمَنْتُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا الَّذِي آمَنَتْ بِهِ بَنُو إِسْرَائِيلَ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ (৯০) آلْآنَ وَقَدْ عَصَيْتَ قَبْلُ وَكُنْتَ مِنَ الْمُفْسِدِينَ (৯১) فَالْيَوْمَ نُنَجِّيكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُونَ لِمَنْ خَلْفَكَ آيَةً وَإِنَّ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ عَنْ آيَاتِنَا لَغَافِلُونَ
‘আর আমি বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করিয়ে নিলাম। আর ফির‘আউন ও তার সৈন্যবাহিনী ঔদ্ধত্য প্রকাশ ও সীমালঙ্ঘনকারী হয়ে তাদের পিছু নিল। অবশেষে যখন সে ডুবে যেতে লাগল, তখন বলল, ‘আমি ঈমান এনেছি যে, সে সত্তা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, যার প্রতি বনী ইসরাঈল ঈমান এনেছে। আর আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত। এখন অথচ ইতঃপূর্বে তুমি নাফরমানী করেছ, আর তুমি ছিলে ফাসাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং আজ আমি তোমার দেহটি রক্ষা করব, যাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হয়ে থাক। আর নিশ্চয় অনেক মানুষ আমার নিদর্শনসমূহের ব্যাপারে গাফেল’ [সূরা ইউনুস:৯০-৯২] ।
وَإِذْ فَرَقْنَا بِكُمُ الْبَحْرَ فَأَنْجَيْنَاكُمْ وَأَغْرَقْنَا آلَ فِرْعَوْنَ وَأَنْتُمْ تَنْظُرُونَ
অর্থ: “আর যখন তোমাদের জন্য আমি সমুদ্রকে বিভক্ত করেছিলাম, অতঃপর তোমাদেরকে নাজাত দিয়েছিলাম এবং ফিরআউন দলকে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম, আর তোমরা দেখছিলে” [ সূরা আলবাকারাহ:৫০]।

পাচ.আশুরার সিয়াম পালন এক বছরের গুনাহের কাফফারা:

আশুরার সিয়াম পালনের ফজীলত সম্পর্কে হাদীসে এসেছে,
وعَنْ أَبِي قَتَادَةَ رضي الله عنه ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : صِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ.
আবু কাতাদাহ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আশুরার সিয়াম পালন আল্লাহর নিকট আমি বিগত এক বছরের গুনাহের কাফফারা হিসেবে আশাবাদ ব্যক্ত করছি”। [সহীহ মুসলিম : ২৮০৪] । হাদীসে আরো এসেছে“যে আশুরার সওম পালন করবে আল্লাহ তার এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন” [মুসনাদুল বাযযার]।

ছয়.সিয়াম শুকরিয়া আদায়েম অন্যতম মাধ্যম :

আর শুকরিয়া আদায়ের অন্যতম মাধ্যম হলো সিয়াম পালন করা। সেজন্য আল্লাহর নবী নুহ আলাইহিস সালাম এর জাহাজ জুদি পাহাড়ে স্থীর হওয়ায় সিয়াম পালন করার মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করে ছিলেন। আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে,
وهو اليوم الذي استوت فيه السفينة على الجودي فصامه نوح شكراً
‘এ দিনেই (আশুরায়) নূহ আলাইহিস সালাম এর কিস্তি জুদি পর্বতে স্থির হয়েছিল, তাই নুহ আলাইহিস সালাম শুকরিয়া আদাযের উদ্দেশ্যে সে দিন সিয়াম পালন করেছিলেন’ [ফাতহুল বারী: ১৯০০,মুসনাদ আহমাদ]। ইবন হাজার বর্ণনাটিকে হাসান বলেছেন, তবে শায়খ আলবানী এ টিকে দুর্বল বলেছেন।
শুকরিয়া আদায়ের বিষয়ে কুরআন মাজীদে এসেছে,
لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ
‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন’[ ইবরাহীম:০৭ ]।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দাউদ আলাইহিস সালাম এর পরিবারকে শুকরিয়া আদায় করার নির্দেশ দিয়ে বলেন,
اعْمَلُوا آلَ دَاوُودَ شُكْرًا وَقَلِيلٌ مِنْ عِبَادِيَ الشَّكُورُ
‘হে দাউদ পরিবার! শুকরিয়া হিসেবে তোমরা নেক আমল করতে থাক। আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই শুকরিয়া আদায়কারী রয়েছে”[সূরা সাবা: ১৩]।

আশুরা সম্পর্কিত যেসব বিষয়গুলো বিশুদ্ধ তথ্য নির্ভর নয়:

অনেকে আশুরা সম্পর্কে এমন বক্তব্য উপস্থাপন করেন যাতে নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। অথচ কুরআনে বলা হয়েছে,
وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ
অর্থ: ‘আর যে বিষয় তোমার জানা নাই তার অনুসরণ করো না’ [সূরা বনি ইসরাঈল:৩৬]।

নিম্নোক্ত বিষয়গুলো কুরআন হাদীসের আলোকে বিশুদ্ধ তথ্য নির্ভর নয় :

১. আসমান-জমিন সৃষ্টির কাজ সম্পন্ন হয়েছিলো আশুরার দিনে
২. এ দিনে আদম আলাইহিস সালাম আল্লাহর খলীফা হিসেবে ধুলার ধরণিতে আগমন করেছিলেন
৩. এ দিনেই আদম আলাইহিস সালাম এর তাওবা কবুল হয়েছিলো
৪. এদিন দাউদ আলাইহিস সালাম এর তাওবা কবুল হয়েছিলো
৫. এদিন নমরূদের অগ্নিকুণ্ড হতে ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম উদ্ধার পেয়েছিলেন
৬. এদিন আইয়ুব আলাইহিস সালাম দুরারোগ্য ব্যাধি হতে মুক্ত-সুস্থতা অর্জন করেছিলেন
৭. এদিনে আল্লাহ তাআ’লা ঈসা আলাইহিস সালামকে উর্ধ্বাকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন
৮. এদিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে ইত্যাদি

কারবালা ও আশুরা

হিজরী ৬১ সালের ১০ই মুহাররম রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দৌহিত্র হুসাইন ইবন আলী রাদিআল্লাহু আনহু কারবালার প্রান্তরে শহীদ হন। এটি একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা। হুসাইন ইবন আলী রাদিআল্লাহু আনহু এর কারবালার প্রান্তরে শাহাদতের ঘটনার মধ্যে মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে। এ ধরণের কোন মুসিবত যদি এসে যায় তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ হচ্ছে সবর করা ও আল্লাহর কাছে ফিরে আসা এবং সাওয়াবের আশা করা। আল্লাহ বলেন,
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ (১৫৫) الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ (১৫৬) أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ (১৫৭)
“আর আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জানÑমাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলগণকে,‘যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। এরাই তারা যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে বিশেষ অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষিত হয়, আর এরাই সৎপথে পরিচালিত” [সূরা আল বাকারাহ: ১৫৫-১৫৭]। উল্লেখ্য যে, আশুরার ফযিলত ও মর্যাদার সাথে এ ঘটনার কোন সম্পর্ক নেই।

আশুরার বিভ্রান্তিসমূহ

১. মুহাররাম মাসকে শোক, মাতম, দুঃখের মাস হিসেবে স্বাগত জানানো: বিভিন্ন আঙ্গিকে হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু এর উদ্দেশে শোক পালন অনুষ্ঠান করা। আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু বর্নিত হাদীসে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لَيْسَ مِنَّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُودَ وَشَقَّ الْجُيُوبَ وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ
“ঐ ব্যক্তি আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয় যে গালে চপোটাঘাত করে, বক্ষাদেশ আঘাত করে তা দীর্ণ-বিদীর্ণ করে এবং জাহেলিয়াতের ডাকের মত আহবান করে” [সহীহ বুখারী :১২৯৭]।
২. মুহররম মাসের প্রথম দিন থেকেই বাড়ি ঘর ঝেড়ে-মুছে, ধুয়ে পরিষ্কার করা এবং খাবার তৈরি করে তাতে সূরা ফাতিহা, বাকারাহ প্রথম অংশ, সূরা কাফিরুন, ইখলাছ, ফালাক ও নাছ পাঠ করা। অতঃপর নবী সা. এর ওপর দরূদ পড়ে খাবারের সওয়াব মৃতদের বখশে দেয়া।
৩. এ মাসে মহিলাদের সৌন্দর্যচর্চা থেকে বিরত থাকা।
৪. এ মাসে জন্মগ্রহণকারী নবজাতককে দুর্ভাগা মনে করা।
৫. মুহাররম ও আশুরার ফজিলত বর্ণনায় দুর্বল কথা, মিথ্যা বাণীর আশ্রয় নেয়া।

আশুরায় করণীয়

১.আশুরার দিন সিয়াম পালন করা:
আশুরার দিন সিয়াম পালন করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
وعَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: أَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِصَوْمِ عَاشُورَاءَ: يَوْمُ الْعَاشِرِ
অর্থ: ইবনে আব্বাস রা.থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন [সুনান তিরমীযি:৭৫৫]।
عَنِ الرُّبَيِّعِ بِنْتِ مُعَوِّذِ بْنِ عَفْرَاءَ قَالَتْ أَرْسَلَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- غَدَاةَ عَاشُورَاءَ إِلَى قُرَى الأَنْصَارِ الَّتِى حَوْلَ الْمَدِينَةِ ্র مَنْ كَانَ أَصْبَحَ صَائِمًا فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ وَمَنْ كَانَ أَصْبَحَ مُفْطِرًا فَلْيُتِمَّ بَقِيَّةَ يَوْمِهِ গ্ধ. فَكُنَّا بَعْدَ ذَلِكَ نَصُومُهُ وَنُصَوِّمُ صِبْيَانَنَا الصِّغَارَ مِنْهُمْ إِنْ شَاءَ اللَّهُ وَنَذْهَبُ إِلَى الْمَسْجِدِ فَنَجْعَلُ لَهُمُ اللُّعْبَةَ مِنَ الْعِهْنِ فَإِذَا بَكَى أَحَدُهُمْ عَلَى الطَّعَامِ أَعْطَيْنَاهَا إِيَّاهُ عِنْدَ الإِفْطَارِ.
অর্থ: ‘মহিলা সাহাবী রুবাঈ বিনতে মুয়াওয়াজ রা. থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার দিনে ভোরে মদীনার নিকটবর্তী আনসারদের মহল্লায় খবর পাঠালেন যে, তোমাদের মধ্যে যে সওম শুরু করেছে সে যেন তা পূর্ণ করে। আর যে সওম শুরু না করে খাওয়া-দাওয়া করেছে সে যেন দিনের বাকী সময়টা পানাহার থেকে বিরত থাকে। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শোনার পর আমরা সওম পালন করলাম এবং আল্লাহর ইচ্ছায় ছোট ছেলে-মেয়েদের দিয়ে সওম পালন করালাম। আমরা তাদেরকে মসজিদে নিয়ে যেতাম। বাজার থেকে খেলনা কিনে নিতাম। যখন খাবার চাইত তখন হাতে খেলনা তুলে দিতাম, যেন তারা খাবারের কথা ভুলে গিয়ে সওম পূর্ণ করতে পারে’ [ সহীহ মুসলিম:২৭২৫]।
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَتَحَرَّى صِيَامَ يَوْمٍ فَضَّلَهُ عَلَى غَيْرِهِ إَِلا هَذَا الْيَوْمَ، يَوْمَ عَاشُورَاءَ، وَهَذَا الشَّهْرَ، يَعْنِي: شَهْرَ رَمَضَانَ.
অর্থ: ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুমা বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ সওম ছাড়া অন্য কোন সওমকে এত গুরুত্ব দিতে দেখিনি। আর তা হল আশুরার সওম ও এই রমজান মাসের সওম”[ সহীহ বুখারী: ১৮৬৭] ।

২. আশুরার একদিন আগে অথবা একদিন পরে সিয়াম পালন:
ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
صُومُوا يَوْمَ عَاشُورَاءَ، وَخَالِفُوا فِيهِ الْيَهُودَ صُومُوا قَبْلَهُ يَوْمًا وَبَعْدَهُ يَوْمًا ”
“তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখ। আর এ ব্যাপারে ইহুদীদের সাথে পার্থক্য স্থাপন করে আশুরার একদিন আগে অথবা একদিন পরে রোজা রাখ” [সুনান তিরমীযি:২১৫৪, সনদ দুর্বল]।
ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুমা বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
” لَئِنْ بَقِيتُ إِلَى قَابِلٍ لَأَصُومَنَّ الْيَوْمَ التَّاسِعَ
“আমি যদি আগামী বৎসর বছর বেচে থাকি তাহলে আমি অবশ্যই নয় তারিখেও রোজা রাখব” [ মুসনাদ আহমাদ:৩২১৩]।
৩. সুন্নাহকে আকড়ে ধরা:
প্রতিটি বিষয়ে সুন্নাতকে আকড়ে ধরতে হবে । কেননা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي , وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ
“তোমরা আমার সুন্নাত এবং আমার পরবর্তী খোলাফায়ে রাশেদীনদের সুন্নাতকে খুবই শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো। [শারহুল মাআনী আলআসর:১৫৩৭]

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সুন্নাহ মোতাবেক আশুরার সিয়াম পালন করার তাওফিক দিন। আমীন ।
وصلى الله على نبينا محمد وعلي اله وأصحبه و من تبعه بإحسان إلى يوم الدين- وأخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين

যুলুমের ভয়াবহ পরিণাম ও বাচার উপায়

-হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল

যুলম শব্দটি আরবী। বাংলায় এর অর্থ অত্যাচার করা, অবিচার করা, নির্যাতন করা বা সীমা অতিক্রম করা। অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ দখল করা, কারো চারত্র হনন করা, কারো অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, কাওকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রমাণ করার ব্যবস্থা করা , মিথ্যা মামলা দেয়া, কাউকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা, কারো জমি দখল করা, অন্যায়ভাবে চাকুরীচ্যুত করাসহ ইত্যাদি কাজ যুলুমের অন্তর্ভুক্ত। যুলম এমন একটি ভয়ানক বিষয় যে, আল্লাহ তায়ালা যালেমকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। এটি একটি জঘন্য অপরাধ, মানবতাবিরোধী কাজ, গুরতর পাপকাজ। কোন ইমানদার ব্যক্তি কারো উপর যুলম করতে পারেনা। যুলুমের কারণে দুনিয়া এবং আখেরাতে ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
فَقَدْ كَذَّبُوكُمْ بِمَا تَقُولُونَ فَمَا تَسْتَطِيعُونَ صَرْفًا وَلَا نَصْرًا وَمَنْ يَظْلِمْ مِنْكُمْ نُذِقْهُ عَذَابًا كَبِيرًا
‘অতঃপর তোমরা যা বল তারা তা মিথ্যা বলেছে। অতএব তোমরা আযাব ফেরাতে পারবে না এবং কোন সাহায্যও করতে পারবে না। আর তোমাদের মধ্যে যে যুলম করবে তাকে আমি মহাআযাব আস্বাদন করাব।’ (সূরা আলফুরকান-১৯ )
আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের বিভিন্ন দিকে যুলুম এমনভাবে ব্যাপকতা লাভ করেছে, যা থেকে উত্তোরণ হওয়া খুবই জরুরী।
যুলুমের কারণে দুনিয়াতে যেসব ভয়াবহ পরিণামের সম্মুখীন হতে হবে তাহলো:

ক) যুলুমের কারণে ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দিবে।
এ বিপর্যয় কোন বিশেষ গোষ্ঠী বা ব্যক্তির উপর আসবে না, বরং সকেলই এর ভুক্তভুগি হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَاتَّقُوا فِتْنَةً لَا تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْكُمْ خَاصَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
‘আর তোমরা ভয় কর ফিতনাকে যা তোমাদের মধ্য থেকে বিশেষভাবে শুধু যালিমদের উপরই আপতিত হবে না। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর।’ সূরা আনফাল -২৫।
খ) যালেমদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু অপেক্ষা করছে
। সূরা আনআমের ৯৩ নং আয়াতে এসেছে,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ قَالَ أُوحِيَ إِلَيَّ وَلَمْ يُوحَ إِلَيْهِ شَيْءٌ وَمَنْ قَالَ سَأُنْزِلُ مِثْلَ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَلَوْ تَرَى إِذِ الظَّالِمُونَ فِي غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَالْمَلَائِكَةُ بَاسِطُو أَيْدِيهِمْ أَخْرِجُوا أَنْفُسَكُمُ الْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُونِ بِمَا كُنْتُمْ تَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ غَيْرَ الْحَقِّ وَكُنْتُمْ عَنْ آيَاتِهِ تَسْتَكْبِرُونَ
‘ আর যদি তুমি দেখতে, যখন যালিমরা মৃত্যু কষ্টে থাকে, এমতাবস্থায় ফেরেশতারা তাদের হাত প্রসারিত করে আছে (তারা বলে), ‘তোমাদের জান বের কর। আজ তোমাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে লাঞ্ছনার আযাব, কারণ তোমরা আল্লাহর উপর অসত্য বলতে এবং তোমরা তার আয়াতসমূহ সম্পর্কে অহঙ্কার করতে।’

গ) যুলুমের কারণে জাতির সফলতা আসে না । আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِآيَاتِهِ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ
নিশ্চয় যালিমরা সফলকাম হয় না। সূরা আনআম-২১। সূরা ত্ব-হার ১১১নং আয়াতে এসছে,
وَعَنَتِ الْوُجُوهُ لِلْحَيِّ الْقَيُّومِ وَقَدْ خَابَ مَنْ حَمَلَ ظُلْمًا
‘ আর চিরঞ্জীব, চিরপ্রতিষ্ঠিত সত্তার সামনে সকলেই অবনত হবে। আর সে অবশ্যই ব্যর্থ হবে যে যুল্ম বহন করবে।’

ঘ) সমাজ ও রাষ্ট্রে যখন যুলুম চলতে তাকে তখন আল্লাহর নেয়ামত সংকুচিত হয়ে যায়।
সূরা নিসার ১৬০ নং আয়াতে এসেছে,
فَبِظُلْمٍ مِنَ الَّذِينَ هَادُوا حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ طَيِّبَاتٍ أُحِلَّتْ لَهُمْ وَبِصَدِّهِمْ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ كَثِيرًا
‘সুতরাং ইয়াহূদীদের যুলমের কারণে আমি তাদের উপর উত্তম খাবারগুলো হারাম করেছিলাম, যা তাদের জন্য হালাল করা হয়েছিল এবং আল্লাহর রাস্তা থেকে অনেককে তাদের বাধা প্রদানের কারণে।’

ঙ) যালেমদের জন্য দুনিয়াতে বিভিন্ন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا بِهِ أَنْجَيْنَا الَّذِينَ يَنْهَوْنَ عَنِ السُّوءِ وَأَخَذْنَا الَّذِينَ ظَلَمُوا بِعَذَابٍ بَئِيسٍ بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ
‘অতঃপর যে উপদেশ তাদেরকে দেয়া হয়েছিল, যখন তারা তা ভুলে গেল তখন আমি মুক্তি দিলাম তাদেরকে যারা মন্দ হতে নিষেধ করে। আর যারা যুলম করেছে তাদেরকে কঠিন আযাব দ্বারা পাকড়াও করলাম। কারণ, তারা পাপাচার করত।’ সূরা আরাফ -১৬৫ ।

চ) যালিমের শক্তি যতই শক্তিশালী হোক না কেন তার পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।
সূরা আনআমের ৪৫ নং আয়াতে এসছে,
فَقُطِعَ دَابِرُ الْقَوْمِ الَّذِينَ ظَلَمُوا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
‘অতএব যালিম সম্প্রদায়ের মূল কেটে ফেলা হল।’

দুনিয়ার পাশাপাশি আখেরাতেও যুলুমের কারণে যেসব ভয়াবহ অবস্থা হবে তাহলো:

ক) আল্লাহ তায়ালা যালেমদেরকে আখেরাতে ভয়ানক শাস্তি দিবেন।
সূরা বুরুজের ১০ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ فَتَنُوا الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَتُوبُوا فَلَهُمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَلَهُمْ عَذَابُ الْحَرِيقِ
নিশ্চয় যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে নির্যাতন করে, তারপর তাওবা করে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব। আর তাদের জন্য রয়েছে আগুনে দগ্ধ হওয়ার আযাব।”
সূরা ফুরকানের ৩৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
وَأَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِينَ عَذَابًا أَلِيمًا
“আমি যালেমদের জন্য কঠিন পিড়াদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করেছি”।

খ) যালেমের জন্য কিয়ামতের দিন বিরাট মুসিবত রয়েছে, তার জন্য শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার ।
ইমাম বুখারী ও মুসলিম (রহ.) আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الظُّلْمُ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

অর্থ: যুলুম-অত্যাচার যালিমের জন্য অন্ধকারের কারণ হবে। অর্থাৎ হাশরের ময়দানে যালিমের চারপাশে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার থাকবে।

গ) যুলুম করে সাময়িক আনন্দ, কোন প্রাচুর্য বা কোন পদোন্নতি হলে ও যালেমের মত হতভাগা আর কেহ নেই।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ : أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : أَتَدْرُونَ مَنِ الْمُفْلِسُ ؟ قَالُوا : الْمُفْلِسُ فِينَا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ لاَ دِرْهَمَ لَهُ ، وَلاَ مَتَاعَ لَهُ ، فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : الْمُفْلِسُ مِنْ أُمَّتِي يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلاَتِهِ وَصِيَامِهِ وَزَكَاتِهِ ، فَيَأْتِي وَقَدْ شَتَمَ هَذَا ، وَأَكَلَ مَالَ هَذَا ، وَسَفَكَ دَمَ هَذَا وَضَرَبَ هَذَا ، فَيَقْعُدُ ، فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ ، وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ ، فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُعْطِيَ مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ ، فَطُرِحَ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرِحَ فِي النَّارِ.

আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি জান গরীব কে? সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে যার সম্পদ নাই সে হলো গরীব লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে হলো গরীব যে, কিয়ামতের দিন নামায, রোযা ও যাকাত নিয়ে আসবে অথচ সে অমুককে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, অন্যায়ভাবে লোকের মাল খেয়েছে, সে লোকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। কাজেই এসব নির্যাতিত ব্যক্তিদেরকে সেদিন তার নেক আমল নামা দিয়ে দেয়া হবে। এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।(সহীহ ইবনে হিব্বান)

ঘ) যে নিজের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত বা দুনিয়া উপার্জন করার জন্য কারো উপর যুলুম করলো কিয়ামতের দিন সে হবে নিকৃষ্ট ব্যক্তি।
ইবনে মাজাহ আবু উমামা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, কিয়ামতের দিন মর্যাদার দিক দিয়ে সে হবে সর্বাধিক নিকৃষ্ট যে নিজের পরকালকে অন্যের দুনিয়ার কারণে ধ্বংস করে দিয়েছে। ঙ) আখেরাতে যালেমের ভাল আমল ছিনিয়ে নেয়া হবে । ইমাম বুখারী (রহ.) আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি কারো মানহানি বা অন্যকোন বিষয়ে অত্যাচার করে তাহলে সে যেন জীবিত থাকতেই তা ক্ষমা চেয়ে নেয় অথবা অত্যাচার পরিমান বিনিময় পরিশোধ করে দেয়। কেননা সে দিন (কিয়ামত) তার নিকট কোন দীনার ও দিরহাম কিছুই থাকবেনা। যদি তার ভাল কোন আমল থাকে তাহলে অত্যাচার অনুপাতে তার থেকে ভাল আমল ছিনিয়ে নেয়া হবে। আর যদি কোন নেক আমল না থাকে অত্যাচারিত ব্যক্তির পাপকে এনে তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। আবু মূসা আল -আশ‘য়ারী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা অত্যাচারীকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে তাকে এমনভাবে পাকড়াও করেন যে, সে আর ছুটে যেতে পারে না। (বুখারী ও মুসলিম) ।

যুলুম থেকে বাচার উপায়

ক) যুলুম থেকে বাচার জন্য আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা মহাপরাক্রমশালী এবং যালিমের যুলুম থেকে তিনিই একমাত্র রক্ষাকারী। এজন্য বেশী বেশী আল্লাহর নিকট ধরণা দিতে হবে । আল্লাহ বলেন,
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ
তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দিব, যারা আমার ইবাদতে অহংকার করে তারা অচিরে জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্চিত হয়ে।’ (আল-মু‘মিন-৬০) ।
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ
আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুত: আমি রয়েছি সন্নিকটে। (১৮৬ আল বাকারা)

খ) যুলুম থেকে বাচার জন্য ধৈর্যধারণ করতে হবে ।
বিশ্ব নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পার্থিব জগতে মোমিনদের অবস্থার একটি উদাহরণ সহীহ মুসলিম সহীহ বুখারীতে আবু হুরায়রা রা.-র সূত্রে বর্ণিত আরেকটি উদাহরণে আছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ – رضى الله عنه – أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم – قَالَ ্র مَثَلُ الْمُؤْمِنِ كَمَثَلِ خَامَةِ الزَّرْعِ ، يَفِىءُ وَرَقُهُ مِنْ حَيْثُ أَتَتْهَا الرِّيحُ تُكَفِّئُهَا ، فَإِذَا سَكَنَتِ اعْتَدَلَتْ ، وَكَذَلِكَ الْمُؤْمِنُ يُكَفَّأُ بِالْبَلاَءِ ، وَمَثَلُ الْكَافِرِ كَمَثَلِ الأَرْزَةِ صَمَّاءَ مُعْتَدِلَةً حَتَّى يَقْصِمَهَا اللَّهُ إِذَا شَاءَ গ্ধ
“ইমানদার ব্যক্তির উদাহরণ শস্যের নরম ডগার ন্যায়, বাতাস যে দিকেই বয়ে চলে, সেদিকেই তার পত্র-পল্লব ঝুঁকে পড়ে। বাতাস যখন থেমে যায়, সেও স্থির হয়ে দাঁড়ায়। ইমানদারগণ বালা-মুসিবত দ্বারা এভাবেই পরীক্ষিত হন। কাফেরদের উদাহরণ দেবদারু (শক্ত পাইন) বৃক্ষের ন্যায়, যা একেবারেই কঠিন ও সোজা হয়। আল্লাহ যখন ইচ্ছা করেন, তা মূলসহ উপড়ে ফেলেন।” শস্যের শিকড় মাটি আঁকড়ে ধরে। তার সাথে একাকার হয়ে যায়। যদিও বাতাস শস্যকে এদিক-সেদিক দোলায়মান রাখে। কিন্তু ছুঁড়ে মারতে, টুকরা করতে বা নীচে ফেলে দিতে পারে না। তদ্রুপ মুসিবত যদিও মোমিনকে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত ও চিন্তামগ্ন রাখে, কিন্তু সে তাকে হতবিহ্বল, নিরাশ কিংবা পরাস্ত করতে পারে না। কারণ, আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস তাকে প্রেরণা দেয়, তার মধ্যে শক্তি সঞ্চার করে, সর্বোপরি তাকে হেফাজত করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
হে মুমিনগণ, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল¬াহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। সুরা বাকারাহ-১৫৩। হাদিসে এসেছে ,
وَلَنْ تُعْطَوْا عَطَاءً خَيْرًا وَأَوْسَعَ مِنَ الصَّبْر
“ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপকতর কল্যাণ কাউকে প্রদান করা হয়নি।’ (সহিহ বুখারী)
সহিহ মুসলিমে বর্ণিত আছে,
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى عَنْ صُهَيْبٍ قَالَ
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَجَبًا لِأَمْرِ الْمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ وَلَيْسَ ذَاكَ لِأَحَدٍ إِلَّا لِلْمُؤْمِنِ إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ

“মোমিনের ব্যাপারটি চমৎকার, নেয়ামত অর্জিত হলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, যা তার জন্য মঙ্গলজনক এতে কৃতজ্ঞতার সওয়াব অর্জিত হয়। মুসিবতে পতিত হলে ধৈর্যধারণ করে, তাও তার জন্য কল্যাণকর এতে ধৈর্যের সওয়াব লাভ হয়।’ হাসান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন : “আমাদের অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানীদেরও অভিজ্ঞতা, ধৈর্যের চেয়ে মূল্যবান বস্তু আর পায়নি। ধৈর্যের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করা যায়, তবে তার সমাধান সে নিজেই।” অর্থাৎ প্রত্যেক জিনিসের জন্য ধৈর্যের প্রয়োজন, আবার ধৈর্যের জন্যও ধৈর্য প্রয়োজন।

গ) যালেমের যুলুমকে ভয় না পেয়ে আল্লাহর উপর দৃঢ় আস্থা এবং তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে ।

দুনিয়ার উত্থান-পতন সুখ-দুঃখ স্বাভাবিক ও নগন্য মনে করতে হবে । তদুপরি চিরসত্যবাদী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে বিশ্বাস তো আছেই : “জেনে রেখ, সমস্ত মানুষ জড়ো হয়ে যদি তোমার উপকার করতে চায়, কোনও উপকার করতে পারবে না, তবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। আবার তারা সকলে মিলে যদি তোমার ক্ষতি করতে চায়, কোনও ক্ষতি করতে পারবে না, তবে যততুটু আল্লাহ তোমার কপালে লিখে রেখেছেন। কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, কিতাব শুকিয়ে গেছে।” (সুনান তিরমিিয) ঘ) আল্লাহর রহমাতের প্রশস্থতা ও তার করূণার কথা বেশী বেশী স্মরণ করা । কেননা যুলুমের কষ্টের তুলনায় আল্লাহর রহমাতের প্রশস্থতা অনেক বড় বিষয়। ইমাম বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,“আমার ব্যাপারে আমার বান্দার ধারণা অনুযায়ী, আমি ব্যবহার করি।”যুলুম দৃশ্যত অসহ্য-কষ্টদায়ক হলেও পশ্চাতে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। এরশাদ হচ্ছে : “এবং হতে পারে কোন বিষয় তোমরা অপছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হতে পারে কোন বিষয় তোমরা পছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।” বাকারাহ-১১৬। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “মোমিনের বিষয়টি চমৎকার, আল্লাহ তাআলা যা ফয়সালা করেন, তা-ই তার জন্য কল্যাণকর।”মুসনাদ আনাস বিন মালিক

ঙ) মোমিনের কর্তব্য বিপদের মুহূর্তে প্রতিদানের কথা স্মরণ করা।

এতে মুসিবত সহনীয় হয়। কারণ কষ্টের পরিমাণ অনুযায়ী সওয়াব অর্জিত হয়। সুখের বিনিময়ে সুখ অর্জন করা যায় নাÑ সাধনার ব্রিজ পার হতে হয়। প্রত্যেককেই পরবর্তী ফলের জন্য নগদ শ্রম দিতে হয়। ইহকালের কষ্টের সিঁড়ি পার হয়ে পরকালের স্বাদ আস্বাদান করতে হয়। এরশাদ হচ্ছে : “কষ্টের পরিমাণ অনুযায়ী প্রতিদান প্রদান করা হয়।” সুনান তিরমীযি।
একদা হজরত আবু বকর রা. ভীত-ত্রস্ত হালতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর কীভাবে অন্তরে স্বস্তি আসে? “না তোমাদের আশায় এবং না কিতাবীদের আশায় (কাজ হবে)। যে মন্দকাজ করবে তাকে তার প্রতিফল দেয়া হবে। আর সে তার জন্য আল্লাহ ছাড়া কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না।” নিসা-১২৩। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :“হে আবু বকর, আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন, তুমি কি অসুস্থ হও না? তুমি কি বিষণœœ হও না? মুসিবত তোমাকে কি পিষ্ট করে না? উত্তর দিলেন, অবশ্যই। বললেন :“এগুলোই তোমাদের অপরাধের কাফফারা-প্রায়শ্চিত্ত।” মুসনাদ আবী বকর
চ) যুলুম থেকে বাচার জন্য মাযলুমের পক্ষাবলম্বন করা ।
কারণ আল্লাহ তায়ালা মাযলুমের উপর রহমত করেন এবং তার দোয়া কবুল করেন । রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ فَإِنَّهَا لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللَّهِ حِجَابٌ গ্ধ.
তোমরা মাযলুমের ফরিয়াদ থেকে বেচে থাক। কেননা, মাযলুম এবং আল্লাহর মাঝে কোন দেয়াল নেই । (সহিহ বূখারী)

ছ) মাযলুমের ক্রন্দন আকাশ-বাতাশ ভারী করে। তাই যুলুমের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করা ইমানের দাবী।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ نَصِيرًا
আর তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছ না! অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুরা বলছে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করুন এ জনপদ থেকে’ যার অধিবাসীরা যালিম এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন। আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী। (সূরা নিসা-৭৫)

জ) যালিমের পক্ষ ত্যাগ করা এবং তাকে যুলুম করা থেকে বিরত রাখা ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ مِنْ أَوْلِيَاءَ ثُمَّ لَا تُنْصَرُونَ
আর যারা যুলম করেছে তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না; অন্যথায় আগুন তোমাদেরকে স্পর্শ করবে এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোন অভিভাবক থাকবে না। অতঃপর তোমরা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না।
(সূরা হুদ-১১৩)।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথা প্রতিয়মান হয় যে, যূলুম একটি পাপকাজ এবং এর জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে সবাইকে জবাবদিহীর কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে। তাই আমাদেরকে মাযলুমের পক্ষালম্বন করে যালিমের বিপক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ انْصُرْ أَخَاكَ ظَالِمًا أَوْ مَظْلُومًا
তোমার ভাই যালিমকে (যুলুম করা থেকে বিরত রাখার মাধ্যমে) সাহায্য কর এবং মাযলুমকে ( যুলুমের হাত থেকে বাচানো মাধ্যমে) সাহায্য কর।

وصلى الله على نبينا محمد وعلي اله وأصحابه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين
وأخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين

মিথ্যা সাক্ষ্য ও অপবাদ-এর পরিণাম

হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল

ভুমিকা:

আল্লাহ তায়ালা মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিশ্চিতকরণে দিয়েছেন ইসলামী জীবনবিধান। এ বিধানের মূল লক্ষ্য মানুষকে সত্যিকারে আল্লাহর বান্দা তৈরি করা। সে জন্য ইসলাম মানুষকে তার জীবনে বেশ কিছু বিধিবিধান মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছে এবং কিছু কাজ থেকে সর্বাবস্থায় বিরত থাকার কঠোর নির্দেশ প্রদান করেছে। মানবজীবনে অপরিহার্যভাবে দূরে থাকার ব্যাপারে যে নির্দেশ এসেছে তন্মধ্যে কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করা এবং অপবাদ দেয়া অন্যতম। এ দু‘টিকে কবীরা গুনাহর এর অন্তর্ভুক্ত বলা হয়েছে। কোন ইমানদার ব্যক্তি এ ধরণের কাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে না। ইমানদারদের বৈশিষ্ট্য হলো তারা কখনো মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না । আলকুরআনে বলা হয়েছে,
وَٱلَّذِينَ لَا يَشۡهَدُونَ ٱلزُّورَ وَإِذَا مَرُّواْ بِٱللَّغۡوِ مَرُّواْ كِرَامٗا
“আর যারা মিথ্যার সাক্ষ্য হয় না এবং যখন তারা অনর্থক কথা-কর্মের পাশ দিয়ে চলে তখন সসম্মানে চলে যায়।” [সূরা আলফুরকান:৭২] যুগ যুগ ধরে প্রকৃত ইমানদারদের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য ও অপবাদ দেয়া হয়েছে। আলকুরআনে এসেছে,
وَكَذَٰلِكَ جَعَلۡنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوّٗا شَيَٰطِينَ ٱلۡإِنسِ وَٱلۡجِنِّ يُوحِي بَعۡضُهُمۡ إِلَىٰ بَعۡضٖ زُخۡرُفَ ٱلۡقَوۡلِ غُرُورٗاۚ وَلَوۡ شَآءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوهُۖ فَذَرۡهُمۡ وَمَا يَفۡتَرُونَ
“আর এভাবেই আমি প্রত্যেক নবীর শত্রু করেছি মানুষ ও জিনের মধ্য থেকে শয়তানদেরকে, তারা প্রতারণার উদ্দেশ্যে একে অপরকে চাকচিক্যপূর্ণ কথার কুমন্ত্রণা দেয় এবং তোমার রব যদি চাইতেন, তবে তারা তা করত না। সুতরাং তুমি তাদেরকে ও তারা যে মিথ্যা রটায়, তা ত্যাগ কর।” [ আনআম ১১২] আজকে আমাদের সমাজে নানাভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য ও অপবাদ দেয়ার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। একজন অপরজনকে ঘায়েল করার জন্য এ দু‘টি মানবতাবিরোধী কাজ অহরহ চলছে। মিথ্যা সাক্ষ্য ও অপবাদের মাধ্যমে হয়ত সাময়িক লাভবান বা আনন্দিত হওয়া যায়, কিন্তু এর ভয়াবহ পরিণাম দুনিয়াতে যেমনি রয়েছে, তেমনিভাবে আখেরাতেও রয়েছে কঠিন শাস্তি। এসব থেকে বিরত থাকতে আলকুরআনে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে,
فَٱجۡتَنِبُواْ ٱلرِّجۡسَ مِنَ ٱلۡأَوۡثَٰنِ وَٱجۡتَنِبُواْ قَوۡلَ ٱلزُّورِ
“সুতরাং মূর্তিপূজার অপবিত্রতা থেকে বিরত থাক এবং মিথ্যা কথা পরিহার কর।” [সূরা হাজ্জ:৩০]
মানুষের ব্যক্তি ও সামষ্টিক জীবনে মিথ্যা সাক্ষ্য ও অপবাদ দেয়ার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। তাকে জীবনের সকল পর্যায়ে বিপর্যস্থ ও সমস্যাগ্রস্থ করতে এ দু‘টি পাপই যথেষ্ট- যা বলার অপেক্ষা রাখে না। মানবেতিহাসের পরিক্রমায় এ সত্যটিই বার বার আমাদের কাছে প্রতিভাত হয়েছে, প্রমাণিত হয়েছে নানাভাবে। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত বহুজাতি জ্ঞান-গরিমা, সম্পদ-সমৃদ্ধি, কৃষ্টি-কালচারে আকাশচুম্বি সফলতা অর্জন করার পরও এই একটি কারণে তারা সমূলে ধ্বংস হয়েছে। কুরআন কারীমে আদ ও সামূদ জাতিসহ অনেক জাতিগোষ্ঠীর বিপর্যয় ও ধ্বংসের সংবাদ আমাদেরকে অবহিত করা হয়েছে।

এ পর্যায়ে ইসলামী শরীয়াতের দৃষ্টিতে মিথ্যা সাক্ষ্য ও অপবাদ দেয়ার অপরাধের মাত্রা এবং কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে কয়েকটি পরিণাম সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলো:
১. মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান শিরক সমতুল্য গুনাহ:

শিরক সবচেয়ে বড় ও কঠিন গুনাহ। আল্লাহ তায়ালা শিরক ছাড়া সব ধরণের গুণাহ ক্ষমা করবেন। মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া এমন বড় গুনাহের কাজ, যা শিরকের গুনাহের সমতুল্য। হাদীসে এসেছে,
: قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ ثَلاَثًا قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ الإِشْرَاكُ بِاللَّهِ وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ وَجَلَسَ ، وَكَانَ مُتَّكِئًا فَقَالَ أَلاَ وَقَوْلُ الزُّورِ قَالَ فَمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا حَتَّى قُلْنَا لَيْتَهُ سَكَتَ.
“একবার রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেলান দিয়ে বসে ছিলেন এ অবস্থায় তিনি সাহাবাদের বললেন, বড় গোনাহ সম্পর্কে কি আমি তোমাদের বলব? সাহাবাগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ বলুন। রাসূলূল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বড় গোনাহের অন্তর্ভুক্ত হল কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করা তথা শিরক করা, মাতা-পিতার নাফরমানী করা। অতঃপর সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন, মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া (একথা তিনবার বললেন)। [সহীহ বুখারী: ২৬৫৪]
২. মিথ্যা সাক্ষ্যদাতার ভাল আমল কবুল হবে না:

মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার কারণে তার জীবনের মুক্তি ও কল্যাণলাভের সকল পথ চিররুদ্ধ করে দেয়া হয়। দুনিয়ার জীবনে কোন বিচারকাজে তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় না। আখিরাতের জীবনের জন্য তার ভাল কোন আমল আল্লাহর নিকট কবুল হবে না। এ বিষয়ে রাসূলূল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ وَالْجَهْلَ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ.
“যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মুর্খতা পরিত্যাগ করতে পারলনা, তার রোযা রেখে শুধুমাত্র পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।” [সহীহ বুখারী:৬০৫৭]

৩. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া কবীরাহ গুনাহ:

মানবজীবনের দুনিয়ার শান্তি এবং আখিরাতের মুক্তি ও কল্যাণলাভের জন্য কবীরা গুনাহ পরিত্যাগ করা অপরিহার্য। কেউ যদি মিথ্যা সাক্ষী দেয় তবে তা হবে কবীরা গুনাহ। তাওবাহ করা ছাড়া তার উপায় নেই। ইচ্ছাকৃত কবীরাগুনাহকারী ঈমান নিয়ে কবরে যেতে পারে না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ سُئِلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: عَنِ الْكَبَائِرِ قَالَ الإِشْرَاكُ بِاللَّهِ وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ وَقَتْلُ النَّفْسِ وَشَهَادَةُ الزُّورِ.
“আনাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলূল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কবীরা গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো । উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করা তথা শিরক করা, মাতা-পিতার নাফরমানী করা, মানুষ হত্যা করা ও মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া।” [সহীহ বুখারী:২৬৫৩]

৪. মিথ্যা সাক্ষ্য ও অপবাদ দেয়া বড় যুলূম:

কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করা ও অপবাদ রটনার মাধ্যমে ব্যক্তির উপর যুলুম করা হয়। আর যুলুমের কারণে সমাজ ও রাষ্ট্রে ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দেয়। এ বিপর্যয় কোন বিশেষ গোষ্ঠী বা ব্যক্তির উপর আসে না, বরং সকেলই এর ভুক্তভুগি হয়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদেরকে মজলুমের বদ দু‘আ থেকে বেঁচে থাকার জন্য বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন। কারণ আল্লাহ তায়ালা মজলুমের দু‘আ কখনও ফেরত দেন না। কুরআনে বলা হয়েছে,
وَٱتَّقُواْ فِتۡنَةٗ لَّا تُصِيبَنَّ ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ مِنكُمۡ خَآصَّةٗۖ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ
“আর তোমরা ভয় কর ফিতনাকে যা তোমাদের মধ্য থেকে বিশেষভাবে শুধু যালিমদের উপরই আপতিত হবে না। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর।” [ সূরা আনফাল : ২৫]

৫. মিথ্যা সাক্ষ্যদাতা ও গ্রহণকারী উভয়ে সমান অপরাধী :

মিথ্যা সাক্ষ্যদাতা তার সাক্ষ্য দেয়ার মাধ্যমে যে অপরাধ করেছে, আর সে অপরাধ যে গ্রহণ করেছে সেও সমান অপরাধী হিসাবে বিবেচিত হবে। কারণ মিথ্যা সাক্ষ্য বিচারের নামে প্রতারণার নামান্তর। এখানে সাক্ষ্যদাতা ও বিচারক উভয়েই প্রতারণা ও জুলুমের দায়ে দোষী বিবেচিত হবে। ইবনে হাজর রা. বলেন,
عدّ شهادة الزّور وقبولها، كلاهما من الكبائر
“মিথ্যা সাক্ষ্যদাতা ও গ্রহণকারী উভয় সমান অপরাধী ও তারা কাবীরাগুনাহকারী হিসাবে সাব্যস্ত হবে।”

৬. মিথ্যা সাক্ষ্যদাতা ও গ্রহণকারী খেয়ানতকারী হিসাবে অভিযুক্ত:

একজন মুসলমানের ঈমানের প্রধান দাবি ¯্রষ্টা ও সৃষ্টির সকল আমানত যথাযথভাবে রক্ষা করা। যারা বিচার শালিস করে থাকেন তাদের ওপর এক বিরাট আমানতের দায়িত্ব থাকে। জেনে শুনে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান ও গ্রহণের মাধ্যমে উভয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে আমানতের খেয়ানত করে থাকে। কেননা কুরআনে এসেছে,
وَلَا تَكُن لِّلۡخَآئِنِينَ خَصِيمٗا
“নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি যথাযথভাবে কিতাব নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষের মধ্যে ফয়সালা কর সে অনুযায়ী যা আল্লাহ তোমাকে দেখিয়েছেন। আর তুমি খিয়ানতকারীদের পক্ষে বিতর্ককারী হয়ো না”। [ সূরা আননিসা:১০৫] আর খেয়ানতকারীর শাস্তি ভয়াবহ হবে।

৭.মিথ্যা অপবাদকারী হতভাগা:

মিথ্যা অপবাদকারী সাময়িক আনন্দ, কোন প্রাচুর্য পেলে বা তার কোন পদোন্নতি হলেও মিথ্যা অপবাদকারীর চেয়ে হতভাগা আর কেহ নেই। সে দুনিয়াতে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং আখিরাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সকল অপরাধের বোঝা বহন করবে এবং এক পর্যায়ে নি:স্ব অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
قَالَ أَتَدْرُونَ مَنِ الْمُفْلِسُ ؟ ” قَالُوا: الْمُفْلِسُ مَنْ لَا دِرْهَمَ لَهُ وَلَا مَتَاعَ ، فَقَالَ: ” إِنَّ الْمُفْلِسَ مِنْ أُمَّتِي يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلَاةٍ وَصِيَامٍ وَزَكَاةٍ، وَيَأْتِي قَدْ شَتَمَ هَذَا وَقَذَفَ هَذَا، وَأَكَلَ مَالَ هَذَا، وَسَفَكَ دَمَ هَذَا، وَضَرَبَ هَذَا فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ، وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ، فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُقْضَى مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ، ثُمَّ طُرِحَ فِي النَّارِ
“তোমরা কি জান গরীব কে? সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে যার সম্পদ নাই সে হলো গরীব লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে হলো গরীব যে, কিয়ামতের দিন নামায, রোযা ও যাকাত নিয়ে আসবে অথচ সে অমুককে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, অন্যায়ভাবে লোকের মাল খেয়েছে, সে লোকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। কাজেই এসব নির্যাতিত ব্যক্তিদেরকে সেদিন তার নেক আমল নামা দিয়ে দেয়া হবে। এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।” [সুনান আততিরমীযি: ২৪১৮]

৮. বানোয়াট অভিযোগকারীর স্থান জাহান্নাম:

কেউ কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠির বিরুদ্ধে কোন বানোয়াট অভিযোগ আনলে তা অভিযোগকারীর জাহান্নামে যাওয়ার জন্য যথেষ্ঠ হবে। আবু যার রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
وَمَنِ ادَّعَى قَوْمًا لَيْسَ لَهُ فِيهِمْ نَسَبٌ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
“যে ব্যক্তি কোন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোন বানোয়াট অভিযোগ আনল, সেযেন নিজেই নিজের স্থান জাহান্নামে করে নিল।” [সহীহ বুখারী:৩৫০৮]
৯. মিথ্যা রটনাকারীর উপর আল্লাহর গযব:

কোন ব্যক্তি নিজের ব্যাপারে মিথ্যা কথা বললে সে নিজে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আর অন্যের ব্যাপারে বললে সে অনেককে ক্ষতিগ্রস্থ করে এবং নিজেও তার শিকার হয়। এটি মহাপাপ। তাই মিথ্যা রটনাকারীর উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে গযব অনিবার্য হয়ে যায়। আলকুরআনে বলা হয়েছে,
إِنَّ ٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُواْ ٱلۡعِجۡلَ سَيَنَالُهُمۡ غَضَبٞ مِّن رَّبِّهِمۡ وَذِلَّةٞ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۚ وَكَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلۡمُفۡتَرِينَ
“নিশ্চয় যারা গো বাছুরকে (উপাস্য হিসাবে) গ্রহণ করেছে, দুনিয়ার জীবনে তাদেরকে আক্রান্ত করবে তাদের রবের পক্ষ থেকে গযব ও লাঞ্ছনা। আর এভাবে আমি মিথ্যা রটনাকারীদের প্রতিফল দেই।” [সূরা আলআরাফ:১৫২]

১০. মিথ্যা রটনাকারী ব্যর্থ হয়:

মিথ্যা কখনও সত্যে পরিণত হয় না। মিথ্যা আরোপ করে সাময়িক সাফল্য পাওয়া গেলেও চূড়ান্তভাবে সফল হওয়া যায় না, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সাময়িকভাবে কাওকে হেয় করা যায় বা কাওকে পাকড়াও করা যায়। প্রকৃতপক্ষে মিথ্যা অপবাদ চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়। কুরআনে বলা হয়েছে,
وَقَدۡ خَابَ مَنِ ٱفۡتَرَىٰ
“আর যে ব্যক্তি মিথ্যা আরোপ করে, সে-ই ব্যর্থ হয়।” [সূরা তাহা :৬১]

১১. অপবাদ ক্ষণস্থায়ী :

মানুষের জীবন দুনিয়াতেই শেষ নয়। আখিরাতের অনন্ত জীবনই মানুষের প্রকৃত বা আসল জীবন। সেখানেই তাকে চিরকাল অবস্থান করতে হবে। সত্য চিরস্থায়ী। আর অপবাদ সবসময় ক্ষণস্থায়ী, এর স্থায়িত্ব একান্তই সাময়িক। পরিণতি অত্যস্ত ভয়াবহ। আলকুরআনে বলা হয়েছে,
ٱنظُرۡ كَيۡفَ كَذَبُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡۚ وَضَلَّ عَنۡهُم مَّا كَانُواْ يَفۡتَرُونَ
“দেখ, তারা কীভাবে মিথ্যা বলেছে নিজদের উপর, তারা যে মিথ্যা রটনা করত, তা তাদের থেকে হারিয়ে গেল।” [আনআম : ২৪]

১২. আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অন্তরায়:

মিথ্যা সাক্ষ্য এবং অপবাদ কোন সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠালাভ করলে সেখানে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায় না। সামাজিক অনুশাসন এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে এর যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া অপরিহার্য।

১৩. সামাজিক শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়:
মিথ্যা সাক্ষ্য এবং অপবাদ কোন সমাজে ব্যাপকভিত্তি পেলে সেখানের সামাজিক শৃঙ্খলা দ্রুত বিনষ্ট হয়। সমাজের সর্বত্র অশান্তি বিরাজ করে। পারস্পরিক কলহ বিবাদ বেড়ে যায়। ফলে সমন্বিত কোন কল্যাণকাজের উদ্যোগ গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। সমাজ ও রাষ্ট্রের বন্ধন শিথিল হয়ে পড়ায় বহি:শত্রুর আক্রমণ সহজতর হয়।

১৪. সামাজিক ঐক্য ও সংহতির প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়:
মিথ্যা সাক্ষ্য এবং অপবাদ-এর কারণে সমাজ ও রাষ্ট্রে বসবাসরতদের মাঝে স্থায়ী শত্রুতার জন্ম নেয়। ফলে সামাজিক বা রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব হয় না।

১৫. রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ব্যাহত হয় :

একটি সমাজ ও রাষ্ট্রের অধিবাসীরা যখন পারস্পরিক বিষয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান এবং একে অন্যকে অপবাদ দেয়া শুরু করে, তখন সেখানে কোন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। কেননা আস্থাহীনতা কোন কল্যাণকর উদ্যোগকেই সফল হতে দেয় না। একে অন্যে কাদা ছোঁড়াছুড়িতে ব্যস্ত থাকে।
ইসলামে বিশ্বাসী সকল মানুষের জন্য উপরে বর্ণিত অতি গর্হিত এবং সভ্যতা ও মানবতা বিরোধী পাপাচার থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। সমাজ ও রাষ্ট্রে কল্যাণ নিশ্চিতকরণে এই অপরাধমুক্ত হওয়া জরুরী। বিশ্বমানবতাকে অনিবার্য ধ্বংসের হাত হতে বাঁচানোর একমাত্র রক্ষাকবচ। এটি মানবচরিত্রের সকল ভালগুণাবলী বিনষ্টকারী। মানবসমাজে শান্তি ও স্বস্তি প্রতিষ্ঠার পথে প্রধান অন্তরায়। পক্ষান্তরে পৃথিবীর সকল বিপর্যয়ের নিয়ামক। মানুষে মানুষে সবধরণের অন্যায় ও জুলুম পরিচালনার মূল কারণ। আজকের সমাজে যারা মিথ্যা সাক্ষ্য ও অপবাদ দেয়ার মত জঘন্য কাজে সম্পৃক্ত তাদেরকে সতর্ক হওয়া এবং এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। আল্লাহ তায়ালা অনেক জাতিতে তাদের এ দুটি কুকর্মের কারণে ধ্বংস করে দিয়েছেন।
আলকুরআনে এসেছে,
أَلَمۡ يَرَوۡاْ كَمۡ أَهۡلَكۡنَا قَبۡلَهُم مِّنَ ٱلۡقُرُونِ أَنَّهُمۡ إِلَيۡهِمۡ لَا يَرۡجِعُونَ
“তারা কি লক্ষ্য করেনি যে, আমি তাদের পূর্বে কত প্রজন্মকে ধ্বংস করেছি, নিশ্চয় যারা তাদের কাছে ফিরে আসবে না।” [সূরা ইয়াছিন : ৩১] আমরা যারা এসব অন্যায় কাজ হতে দেখছি তাদেরকেও এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। যারা মিথ্যা সাক্ষ্য ও মিথ্যা অপবাদ দেয়ার মত জঘন্য কাজে সম্পৃক্ত তাদেরকে এসব কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য সর্বাত্বক প্রচেষ্টা চালাবে হবে।

ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথে পরীক্ষা

-হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য সৃষ্টি করেছেন,যা সূরা মুলকের ২ নং আয়াতে বলা হয়েছে এভাবে, “যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল।” সেজন্য আমরা দেখতে পাই যে, আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা রাসূলদেরকেও তিনি পরীক্ষা করেছেন। যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব,ইসলামকে নিজের জীবন বিধান এবং নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসুল হিসাবে মেনে নিয়েছেন, তার পরীক্ষা হবেই। এটাই আল্লাহর সুন্নাত বা নীতি। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,“আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জানÑমাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও” [সূরা আলবাকারাহ: ১৫৫]। এ কথা বলার কোন যুক্তি নেই যে, উনি খুব আল্লাহওয়ালা,বুযুর্গ ব্যক্তি, অথবা কোন বড় নেতা,দায়িত্বশীল তাই তার কোন পরীক্ষা হবে না বা কোন জেল-যুলুম,নির্যাতন বা হত্যার সম্মুখীন হতে হবে না। কারণ এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, একদা সাহাবী সাদ বিন ওয়াক্কাস রা. রসূল সা.কে জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রসূল, দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার সম্মুখীন কে? উত্তরে তিনি বলেন :“নবীগণ, অতঃপর যারা তাদের সাথে কাজ-কর্ম-বিশ্বাসে সামঞ্জস্যতা রাখে, অতঃপর যারা তাদের অনুসারীদের সাথে সামঞ্জস্যতা রাখে। মানুষকে তার দ্বীন অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয়। দ্বীনি অবস্থান পাকাপোক্ত হলে পরীক্ষা কঠিন হয়। দ্বীনি অবস্থান দুর্বল হলে পরীক্ষাও শিথিল হয়। মুসিবত মুমিন ব্যক্তিকে পাপশূন্য করে দেয়, এক সময়ে দুনিয়াতে সে নিষ্পাপ বিচরণ করতে থাকে” [সুনান আত-তিরমিযি: ২৩২২ সহীহ]। এজন্য আমরা দেখতে পাই যে, আমাদের প্রিয় নবীকেও পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে এসেছে, আর যখন কাফিররা তোমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছিল, তোমাকে বন্দী করতে অথবা তোমাকে হত্যা করতে কিংবা তোমাকে বের করে দিতে। আর তারা ষড়যন্ত্র করে এবং আল্লাহও ষড়যন্ত্র করেন। আর আল্লাহ হচ্ছেন ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে উত্তম। [ সূরা আলআনফাল-৩০]
আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাহদেরকে ভয়-ভীতি, ক্ষুধায় কষ্ট, ফলফলাদি ও সম্পদের স্বল্পতা, জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি, নিন্দা, অপপ্রচার গাল-মন্দ, আঘাত দেয়া, জেল-যুলুম, নির্যাতন, হামলা-মামলা, হত্যা, সুযোগ-সুবিধা দেয়া-নেয়ার মাধ্যমে,মানসিক চাপ প্রয়োগে, সরাসরি যুদ্ধের মাধ্যমে, দেশ ত্যাগ/ হিজরাত, অভাব-অনটন, জয়-পরাজয় দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন । আল্লাহ তায়ালা বলেন, এবং আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছি ভাল ও মন্দ দ্বারা, হয়তো তারা ফিরে আসবে [আলআরাফ-১৬৮] । আল্লাহর পছন্দের বান্দাহদেরকে পরীক্ষা করার বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “আল্লাহ তাআলা যখন কোন সম্প্রদায়কে পছন্দ করেন, তখন তাদেরকে বিপদ দেন ও পরীক্ষা করেন”[ সুনান ইবন মাজাহ:৪০২১, হাসান] । যেসব কারণে আল্লাহ তায়ালা পরীক্ষা করেন সেগুলো হলো:
এক. পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা জেনে নিতে চান কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী। কুরআনে এসেছে, আর আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি। ফলে আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন, কারা সত্য বলে এবং অবশ্যই তিনি জেনে নেবেন, কারা মিথ্যাবাদী। [সূরা আনকাবুত- ০২]
দুই. আল্লাহ তায়ালা পরীক্ষার মাধ্যমে মর্যাদার তারতম্য নির্ধারিত করেন। এ বিষযে কুরআনে এসেছে, আর তিনি সে সত্তা, যিনি তোমাদেরকে যমীনের খলীফা বানিয়েছেন এবং তোমাদের কতককে কতকের উপর মর্যাদা দিয়েছেন, যাতে তিনি তোমাদেরকে যা প্রদান করেছেন, তাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন। নিশ্চয় তোমার রব দ্রুত শাস্তিদানকারী এবং নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (আনআম-১৬৫)
তিন. পরীক্ষার মাধ্যমে কারা মুমিন এবং কারা মুনাফিক তা বের করা সম্ভব। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, আর কিছু লোক আছে যারা বলে, ‘আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি’, অতঃপর যখন আল্লাহর ব্যাপারে তাদের কষ্ট দেয়া হয়, তখন তারা মানুষের নিপীড়নকে আল্লাহর আযাবের মত গণ্য করে। আর যদি তোমার রবের পক্ষ থেকে কোন বিজয় আসে, তখন অবশ্যই তারা বলে, ‘নিশ্চয় আমরা তোমাদের সাথে ছিলাম’। সৃষ্টিকুলের অন্তরসমূহে যা কিছু আছে আল্লাহ কি তা সম্পর্কে সম্যক অবগত নন? আর আল্লাহ অবশ্যই জানেন, কারা ঈমান এনেছে এবং তিনি মুনাফিকদেরকেও জানেন। (আনকাবুত- ১০-১১)
চার. কারা ভাল আর কারা খারাপ তা বের করার জন্য পরীক্ষা করে খাকেন। এ বিষয়ে কুরআনে বলা হয়েছে, আল্ল¬াহ এমন নন যে, তিনি মুমিনদেরকে (এমন অবস্থায়) ছেড়ে দেবেন যার উপর তোমরা আছ। যতক্ষণ না তিনি পৃথক করবেন অপবিত্রকে পবিত্র থেকে। (আলে ইমরান -১৭৯)
পাচ. পরীক্ষার অন্যতম কারণ হলো মুজাহিদদের মধ্যে ধৈর্যশীলদেরকে ংবষবপঃ করা : কুরআনে এসেছে, যদি তোমাদেরকে কোন আঘাত স্পর্শ করে থাকে তবে তার অনুরূপ আঘাত উক্ত কওমকেও স্পর্শ করেছে। আর এইসব দিন আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন করি এবং যাতে আল¬াহ ঈমানদারদেরকে জেনে নেন এবং তোমাদের মধ্য থেকে শহীদদেরকে গ্রহণ করেন। আর আল¬াহ যালিমদেরকে ভালবাসেন না। (মুহাম্মাদ-৩১)
ছয়. শাহাদাতের মর্যাদা দেয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাহদেরকে পরীক্ষা করে থাকেন :কুরআনে এসেছে, যদি তোমাদেরকে কোন আঘাত স্পর্শ করে থাকে তবে তার অনুরূপ আঘাত উক্ত কওমকেও স্পর্শ করেছে। আর এইসব দিন আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন করি এবং যাতে আল¬াহ ঈমানদারদেরকে জেনে নেন এবং তোমাদের মধ্য থেকে শহীদদেরকে গ্রহণ করেন। আর আল¬াহ যালিমদেরকে ভালবাসেন না। (আলে ইমরান-১৪০)
সাত. যুগ যুগ ধরে হক প্রতিষ্ঠা এবং বাতিল ধ্বংস করার জন্য ইমানদানদেরকে পরীক্ষা করা হয়েছে । আল্লাহ তায়ালা বলেন, যাতে তিনি সত্যকে সত্য প্রমাণিত করেন এবং বাতিলকে বাতিল করেন, যদিও অপরাধীরা তা অপছন্দ করে। (আনফাল-৮)। তাই প্রত্যেক ইমানদার বান্দাহকে যে কোন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, অর্থ: নাকি তোমরা ভেবেছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ এখনো তোমাদের নিকট তাদের মত কিছু আসেনি, যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে। তাদেরকে স্পর্শ করেছিল কষ্ট ও দুর্দশা এবং তারা কম্পিত হয়েছিল। এমনকি রাসূল ও তার সাথি মুমিনগণ বলছিল, ‘কখন আল¬াহর সাহায্য (আসবে)’? জেনে রাখ, নিশ্চয় আল¬াহর সাহায্য নিকটবর্তী।(বাকারাহ-২১৪)। বর্তমানে বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিতদের উপর যে যুলুম-নির্যাতন এসেছে, তা যুগে যুগে নবী-রাসুল,সাহাবী,তাবেয়ী, তাবে-তাবয়ী, সলফে সালেহীনদের উপর যে যুলুম-নির্যাতন এসেছিল , তারই ধারাবাহিকতা মাত্র। এ বিষয়ে খাব্বাব ইবনে আরত রা. হতে বর্ণিত হাদিসটি আমাদেরকে সে কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।“ তিনি বলেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবা ঘরের ছায়াতলে একটি চাদরকে বালিশ বানিয়ে শুয়ে ছিল। আমরা তাকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করবেন না? আমাদের জন্য দোয়া করবেন না? তখন রাসূল আমাদের বললেন,তোমাদের পূর্বের উম্মতদের অবস্থা ছিল, তাদের একজন লোককে ধরে আনা হত, তারপর জমিনে তার জন্য গর্ত খনন করা হত এবং তাতে তাকে নিক্ষেপ করত। তারপর তার জন্য করাত আনা হত, আর সে করাত দ্বারা তার মাথাকে দ্বি-খণ্ড করে তাকে হত্যা করা হত। আবার কোন কোন সময় কাউকে কাউকে লোহার চিরুনি দিয়ে আচড় দিয়ে তার হাড় থেকে মাংস ও চামড়া তুলে নিয়ে আলাদা করা হত। এত বড় নির্যাতন সহ্য করা সত্ত্বেও তাদেরকে দ্বীন থেকে এক চুল পরিমাণও এদিক সেদিক করতে পারত না। [রাসূল বলেন] আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই এ দ্বীনকে পরিপূর্ণ করবে। এমনকি একজন সফরকারী সুনায়া থেকে হাজরা-মওত পর্যন্ত নিরাপদে ভ্রমণ করবে, সে তার নিরাপত্তার জন্য একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করবে না। তবে তোমরা হলে এমন জাতি, যারা তাড়াহুড়াকে পছন্দ কর [ সহীহ আল-বুখারি:৬৯৪৩] আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তার দেয়া সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার তাওফীক দিন । আমীন।

মা-বাবার মৃত্যুর পর তাদের জন্য করণীয় আমলসূমহ

-হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল

إن الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وصحبه أجمعين، أما بعد:
মা-বাবা ছোট শব্দ, কিন্তু এ দুটি শব্দের সাথে কত যে আদর, স্নেহ, ভালবাসা রয়েছে তা পৃথিবীর কোন মাপযন্ত্র দিয়ে নির্ণয় করা যাবে না। মা-বাবা কত না কষ্ট করেছেন, না খেয়ে থেকেছেন, অনেক সময় ভাল পোষাকও পরিধান করতে পারেন নি, কত না সময় বসে থাকতেন সন্তানের অপেক্ষায়। সেই মা বাবা যাদের চলে গিয়েছেন, তারাই বুঝেন মা বাবা কত বড় সম্পদ। যেদিন থেকে মা বাবা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন সেদিন থেকে মনে হয় কী যেন হারিয়ে গেল,তখন বুক কেঁপে উঠে, চোখ থেকে বৃষ্টির মত পানি ঝরে, কী শান্তনাই বা তাদেরকে দেয়া যায়! সেই মা বাবা যাদের চলে গিয়েছে তারা কি মা-বাবার জন্য কিছুই করবে না?। এত কষ্ট করে আমাদের কে যে মা-বাবা লালন পালন করেছেন তাদের জন্য আমাদের কি কিছুই করার নেই? অবশ্যই আছে। আলোচ্য প্রবন্ধে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মৃত মা-বাবা জন্য কী ধরনের আমল করা যাবে এবং যে আমলের সওয়াব তাদের নিকট পৌছবে তা উল্লেখ করা হলো:

১. বেশী বেশী দু‘আ করা

মা-বাবা দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পর সন্তান মা-বাবার জন্য বেশী বেশী দু‘আ করবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দু‘আ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কী দু‘আ করবো তাও শিক্ষা দিয়েছেন । আল-কুরআনে এসেছে,
﴿ رَبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ٢٤ ﴾ [الاسراء: ٢٤]
‘‘হে আমার রব, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন’’ [সূরা বানী ইসরাঈলঃ ২৪]
﴿رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ يَوۡمَ يَقُومُ ٱلۡحِسَابُ ٤١﴾ [ابراهيم: ٤١]
‘‘হে আমাদের রব, রোজ কিয়ামতে আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল মুমিনকে ক্ষমা করে দিন’’ [সুরা ইবরাহীম ঃ৪১]। এছাড়া আলস্নাহ রাববুল আলামীন পিতা-মাতার জন্য দূ‘আ করার বিশেষ নিয়ম শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেনঃ
﴿ رَّبِّ ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيۡتِيَ مُؤۡمِنٗا وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِۖ وَلَا تَزِدِ ٱلظَّٰلِمِينَ إِلَّا تَبَارَۢا ٢٨ ﴾ [نوح: ٢٨]
‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি যালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না ’[সূরা নুহ: ২৮] ।

মা-বাবা এমন সন্তান রেখে যাবেন যারা তাদের জন্য দোয়া করবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ ».
অর্থ: মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩ টি আমল বন্ধ হয় না-১. সদকায়ে জারিয়া ২. এমন জ্ঞান-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দু‘আ করে [সহিহ মুসলিম: ৪৩১০]

মূলত: জানাযার নামায প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ স্বরূপ।

২. দান-ছাদকাহ করা,
বিশেষ করে সাদাকায়ে জারিয়াহ প্রদান করাঃ
মা-বাবা বেচে থাকতে দান-সাদকাহ করে যেতে পারেন নি বা বেচে থাকলে আরো দান-সদকাহ করতেন, সেজন্য তাদের পক্ষ থেকে সন্তান দান-সদকাহ করতে পারে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَجُلاً أَتَى النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أُمِّىَ افْتُلِتَتْ نَفْسَهَا وَلَمْ تُوصِ وَأَظُنُّهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ أَفَلَهَا أَجْرٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ عَنْهَا قَالَ « نَعَمْ »
অর্থ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ ‘‘জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমার মা হঠাৎ মৃতু বরণ করেছেন। তাই কোন অছিয়ত করতে পারেন নি। আমার ধারণা তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন তাহলে দান-ছাদকা করতেন। আমি তাঁর পক্ষ থেকে ছাদকা করলে তিনি কি এর ছাওয়াব পাবেন ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হ্যাঁ, অবশ্যই পাবেন।’’ [সহীহ মুসলিম:২৩৭৩]
তবে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে সাদাকায়ে জারিয়া বা প্রবাহমান ও চলমান সাদাকা প্রদান করা। যেমন পানির কুপ খনন করা, (নলকুপ বসানো, দ্বীনী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, কুরআন শিক্ষার জন্য মক্তব ও প্রতিষ্ঠান তৈরী করা, স্থায়ী জনকল্যাণমূলক কাজ করা। ইত্যাদি।

৩. মা-বাবার পক্ষ থেকেসিয়াম পালনঃ

মা-বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় যদি তাদের কোন মানতের সিয়াম কাযা থাকে, সন্তান তাদের পক্ষ থেকে সিয়াম পালন করলে তাদের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
«مَنْ مَاتَ وَعَلَيْهِ صِيَامٌ صَامَ عَنْهُ وَلِيُّهُ»
অর্থ: ‘‘যে ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করল এমতাবস্থায় যে তার উপর রোজা ওয়াজিব ছিল। তবে তার পক্ষ থেকে তার ওয়ারিসগণ রোজা রাখবে’’ [সহীহ বুখারী:১৯৫২]। অধিকাংশ আলেমগণ এ হাদীসটি শুধুমাত্র ওয়াজিব রোযা বা মানতের রোযার বিধান হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তাদের পক্ষ থেকে নফল সিয়াম রাখার পক্ষে দলীল নাই।

৪. হজ্জ বা উমরাহ করাঃ

মা-বাবার পক্ষ থেকে হজ্জ বা উমরাহ করলে তা আদায় হবে এবং তারা উপকৃত হবে। ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,
«أَنَّ امْرَأَةً مِنْ جُهَيْنَةَ جَاءَتْ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ إِنَّ أُمِّي نَذَرَتْ أَنْ تَحُجَّ فَلَمْ تَحُجَّ حَتَّى مَاتَتْ أَفَأَحُجُّ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ حُجِّي عَنْهَا أَرَأَيْتِ لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّكِ دَيْنٌ أَكُنْتِ قَاضِيَةً اقْضُوا اللَّهَ فَاللَّهُ أَحَقُّ بِالْوَفَاءِ»

অর্থ: ‘‘ জুহাইনা গোত্রের একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আগমণ করে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা হজ্জ করার মানত করেছিলেন কিন্তু তিনি হজ্জ সম্পাদন না করেই মারা গেছেন। এখন আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করতে পারি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি তোমার মায়ের পক্ষ থেকে হজ্জ কর। তোমার কি ধারণা যদি তোমার মার উপর ঋণ থাকতো তবে কি তুমি তা পরিশোধ করতে না ? সুতরাং আল্লাহর জন্য তা আদায় কর। কেননা আল্লাহর দাবী পরিশোধ করার অধিক উপযোগী’’ [সহীহ বুখারী: ১৮৫২] । তবে মা-বাবার পক্ষ থেকে যে লোক হজ্জ বা ওমরাহ করতে চায় তার জন্য শর্ত হলো সে আগে নিজের হজ্জ-ওমরাহ করতে হবে।

৫. মা-বাবার পক্ষ থেকে কুরবানী করাঃ

মা-বাবার পক্ষ থেকে কুরবানী করলে তার ছাওয়াব দ্বারা তারা উপকৃত হবে। এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَمَرَ بِكَبْشٍ أَقْرَنَ يَطَأُ فِى سَوَادٍ وَيَبْرُكُ فِى سَوَادٍ وَيَنْظُرُ فِى سَوَادٍ فَأُتِىَ بِهِ لِيُضَحِّىَ بِهِ فَقَالَ لَهَا « يَا عَائِشَةُ هَلُمِّى الْمُدْيَةَ » ثُمَّ قَالَ « اشْحَذِيهَا بِحَجَرٍ ». فَفَعَلَتْ ثُمَّ أَخَذَهَا وَأَخَذَ الْكَبْشَ فَأَضْجَعَهُ ثُمَّ ذَبَحَهُ ثُمَّ قَالَ « بِاسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ ». ثُمَّ ضَحَّى بِهِ.
অর্থ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি শিংযুক্ত দুম্বা উপস্থিত করতে নির্দেশ দিলেন, যার পা কালো, চোখের চতুর্দিক কালো এবং পেট কালো। অতঃপর তা কুরবানীর জন্য আনা হলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, হে আয়েশা! ছুরি নিয়ে আস, তারপর বললেন, তুমি একটি পাথর নিয়ে তা দ্বারা এটাকে ধারালো কর। তিনি তাই করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছুরি হাতে নিয়ে দুম্বাটিকে শুইয়ে দিলেন। পশুটি যবেহ্ করার সময় বললেন, বিসমিল্লাহ, হে আল্লাহ তুমি এটি মুহাম্মাদ, তাঁর বংশধর এবং সকল উম্মাতে মুহাম্মাদীর পক্ষ থেকে কবুল কর”। এভাবে তিনি তা দ্বারা কুরবানী করলেন।
[ সহীহ মুসলিম:৫২০৩] ।

৬. মা-বাবার ওসিয়ত পূর্ণ করা

মা-বাবা শরীয়াহসম্মত কোন ওসিয়ত করে গেলে তা পূর্ণ করা সন্তানদের উপর দায়িত্ব। রাশীদ ইবন সুয়াইদ আসসাকাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
«قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، إِنَّ أُمِّي أَوْصَتْ أَنْ نُعْتِقُ عَنْهَا رَقَبَةً ، وَعِنْدِي جَارِيَةٌ سَوْدَاءُ ، قَالَ : ادْعُ بِهَا ، فَجَاءَتْ ، فَقَالَ : مَنْ رَبُّكِ ؟ قَالَتِ : اللَّهُ ، قَالَ : مَنْ أَنَا ؟ قَالَتْ : رَسُولُ اللَّهِ ، قَالَ : أَعْتِقْهَا ، فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ».
অর্থ: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা একজন দাসমুক্ত করার জন্য ওসিয়ত করে গেছেন। আর আমার নিকট কালো একজন দাসী আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ডাকো, সে আসল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার রব কে ? উত্তরে সে বলল, আমার রব আল্লাহ। আবার প্রশ্ন করলেন আমি কে ? উত্তরে সে বলল, আপনি আল্লাহর রাসুল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে মুক্ত করে দাও; কেন না সে মু’মিনা [সহীহ ইবন হিববান :১৮৯]

৭. মা-বাবার বন্ধুদের সম্মান করা

মা-বাবার বন্ধুদের সাথে ভাল ব্যবহার করা, সম্মান করা, তাদেরকে দেখতে যাওয়া,তাদেরকে হাদিয়া দেয়া। এ বিষয়ে হাদীসে উল্লেখ আছে,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَجُلاً مِنَ الأَعْرَابِ لَقِيَهُ بِطَرِيقِ مَكَّةَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ عَبْدُ اللَّهِ وَحَمَلَهُ عَلَى حِمَارٍ كَانَ يَرْكَبُهُ وَأَعْطَاهُ عِمَامَةً كَانَتْ عَلَى رَأْسِهِ فَقَالَ ابْنُ دِينَارٍ فَقُلْنَا لَهُ أَصْلَحَكَ اللَّهُ إِنَّهُمُ الأَعْرَابُ وَإِنَّهُمْ يَرْضَوْنَ بِالْيَسِيرِ. فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ إِنَّ أَبَا هَذَا كَانَ وُدًّا لِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ وَإِنِّى سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ « إِنَّ أَبَرَّ الْبِرِّ صِلَةُ الْوَلَدِ أَهْلَ وُدِّ أَبِيهِ ».
অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার রাদিয়াল্লাহু আনহু আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, একবার মক্কার পথে চলার সময় আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর এক বেদুঈন এর সাথে দেখা হলে তিনি তাকে সালাম দিলেন এবং তাকে সে গাধায় চড়ালেন যে গাধায় আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা উপবিষ্ট ছিলেন এবং তাঁর (আব্দুল্লাহ) মাথায় যে পাগড়িটি পরা ছিলো তা তাকে প্রদান করলেন। আব্দুল্লাহ ইবান দীনার রাহেমাহুল্লাহ বললেন, তখন আমরা আব্দুল্লাহকে বললাম: আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক! এরা গ্রাম্য মানুষ: সামান্য কিছু পেলেই এরা সন্তুষ্ট হয়ে যায়-(এতসব করার কি প্রয়োজন ছিলো?) উত্তরে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তার পিতা, (আমার পিতা) উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বন্ধু ছিলেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি “পুত্রের জন্য পিতার বন্ধু-বান্ধবের সাথে ভাল ব্যবহার করা সবচেয়ে বড় সওয়াবের কাজ’’ [সহীহ মুসলিম:৬৬৭৭]।
মৃতদের বন্ধুদের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমলও আমাদেরকে উৎসাহিত করে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,
«إِذَا ذَبَحَ الشَّاةَ فَيَقُولُ « أَرْسِلُوا بِهَا إِلَى أَصْدِقَاءِ خَدِيجَةَ »
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোন বকরী যবেহ করতেন, তখনই তিনি বলতেন, এর কিছু অংশ খাদীজার বান্ধবীদের নিকট পাঠিয়ে দাও [সহীহ মুসলিম: ৬৪৩১]

৮. মা-বাবার আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখা

সন্তান তার মা-বাবার আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَصِلَ أَبَاهُ فِي قَبْرِهِ ، فَلْيَصِلْ إِخْوَانَ أَبِيهِ بَعْدَهُ»
‘যে ব্যক্তি তার পিতার সাথে কবরে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ভালবাসে, সে যেন পিতার মৃত্যুর পর তার ভাইদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখে’ [সহীহ ইবন হিববান:৪৩২]

৯. ঋণ পরিশোধ করা

মা-বাবার কোন ঋণ থাকলে তা দ্রুত পরিশোধ করা সন্তানদের উপর বিশেষভাবে কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণের পরিশোধ করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«نَفْسُ الْمُؤْمِنِ مُعَلَّقَةٌ بِدَيْنِهً حَتَّى يُقْضَى عَنْهُ».
অর্থ: ‘‘মুমিন ব্যক্তির আত্মা তার ঋণের সাথে সম্পৃক্ত থেকে যায়; যতক্ষণ তা তা তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হয়”। [সুনান ইবন মাজাহ:২৪১৩]
ঋণ পরিশোধ না করার কারণে জান্নাতের যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়; এমনকি যদি আল্লাহর রাস্তায় শহীদও হয় । হাদীসে আরো এসেছে,
«مَا دَخَلَ الْجَنَّةَ حَتَّى يُقْضَى دَيْنُهُ»
অর্থ: যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দার ঋণ পরিশোধ না করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। [নাসায়ী ৭/৩১৪; তাবরানী ফিল কাবীর ১৯/২৪৮; মুস্তাদরাকে হাকিম ২/২৯]

১০. কাফফারা আদায় করা

মা-বাবার কোন শপথের কাফফারা,ভুলকৃত হত্যাসহ কোন কাফফারা বাকী থাকলে সন্তান তা পূরণ করবে। আল-কুরআনে বলা হয়েছে,
﴿وَمَن قَتَلَ مُؤۡمِنًا خَطَ‍ٔٗا فَتَحۡرِيرُ رَقَبَةٖ مُّؤۡمِنَةٖ وَدِيَةٞ مُّسَلَّمَةٌ إِلَىٰٓ أَهۡلِهِۦٓ إِلَّآ أَن يَصَّدَّقُواْۚ ﴾ [النساء: ٩٢]
অর্থ: যে ব্যক্তি ভুলক্রমে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তাহলে একজন মুমিন দাসকে মুক্ত করতে হবে এবং দিয়াত (রক্ত পণ দিতে হবে) যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিজনদের কাছে। তবে তারা যদি সদাকা (ক্ষমা) করে দেয় (তাহলে সেটা ভিন্ন কথা)
[ সূরা আন-নিসা:৯২]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
« مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ فَرَأَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَلْيَأْتِهَا وَلْيُكَفِّرْ عَنْ يَمِينِهِ ».
অর্থ: ‘‘ যে ব্যক্তি কসম খেয়ে শপথ করার পর তার থেকে উত্তম কিছু করলেও তার কাফফারা অদায় করবে’’
[সহীহ মুসলিম: ৪৩৬০] ।
এ বিধান জীবিত ও মৃত সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। দুনিয়ার বুকে কেউ অন্যায় করলে তার কাফফারা দিতে হবে। অনুরূপভাবে কেউ অন্যায় করে মারা গেলে তার পরিবার-পরিজন মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কাফফারা প্রদান করবেন।

১১. ক্ষমা প্রার্থনা করাঃ

মা-বাবার জন্য আল্লাহর নিকট বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ আমল। সন্তান মা-বাবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় আল্লাহ তা‘আলা তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। হাদীসে বলা হয়েছে,
«عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : تُرْفَعُ لِلْمَيِّتِ بَعْدَ مَوْتِهِ دَرَجَتُهُ . فَيَقُولُ : أَيْ رَبِّ ، أَيُّ شَيْءٍ هَذِهِ ؟ فَيُقَالُ : وَلَدُكَ اسْتَغْفَرَ لَكَ»
অর্থ: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মৃত্যুর পর কোন বান্দাহর মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে হে আমার রব, আমি তো এতো মর্যাদার আমল করিনি, কীভাবে এ আমল আসলো ? তখন বলা হবে, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় এ মর্যাদা তুমি পেয়েছো’’ [আল-আদাবুল মুফরাদ:৩৬]।
মা-বাবা দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার পর তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার বিষয়ে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসে এসেছে,
«عَنْ عُثْمَانَ ، قَالَ : وَقَفَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى قَبْرِ رَجُلٍ وَهُوَ يُدْفَنُ فَلَمَّا فَرَغَ مِنْهُ قَالَ : اسْتَغْفِرُوا لأَخِيكُمْ وَسَلُوا اللَّهَ لَهُ بالثَّبَاتِ ؛ فَإِنَّهُ يُسْأَلُ الآنَ».
অর্থ: উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার কবরের পার্শ্বে দাঁড়ালেন এবং বললেন ‘‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার জন্য ঈমানের উপর অবিচলতা ও দৃঢ়তা কামনা কর, কেননা এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে’’ [মুসনাদুল বাজ্জার :৪৪৫]।
তাই সুন্নাত হচ্ছে, মৃত ব্যক্তিকে কবরে দেয়ার পর তার কবরের পার্শ্বে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তার জন্য প্রশ্নোত্তর সহজ করে দেয়া, প্রশ্নোত্তর দিতে সমর্থ হওয়ার জন্য দো‘আ করা।

১২. মান্নত পূরণ করা

মা-বাবা কোন মান্নত করে গেলে সন্তান তার পক্ষ থেকে পূরণ করবে। ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,
«أَنَّ امْرَأَةً نَذَرَتْ أَنْ تَصُومَ شَهْرًا فَمَاتَتْ فَأَتَى أَخُوهَا النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ :« صُمْ عَنْهَا ».
অর্থ: কোন মহিলা রোজা রাখার মান্নত করেছিল, কিন্তু সে তা পূরণ করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করল। এরপর তার ভাই এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলে তিনি বলরেন, তার পক্ষ থেকে সিয়াম পালন কর। [সহীহ ইবন হিববান:২৮০]

১৩. মা-বাবার ভাল কাজসমূহ জারী রাখা

মা-বাবা যেসব ভাল কাজ অর্থাৎ মসজিদ তৈরী করা, মাদরাসা তৈরী করা, দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরীসহ যে কাজগুলো করে গিয়েছেন সন্তান হিসাবে তা যাতে অব্যাহত থাকে তার ব্যবস্থা করা। কেননা এসব ভাল কাজের সওয়াব তাদের আমলনামায় যুক্ত হতে থাকে। হাদীসে এসেছে,
«مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ »
‘‘ভাল কাজের পথপ্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে’’। [সুনান আততিরমীযি : ২৬৭০]
«مَنْ سَنَّ فِى الإِسْلاَمِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَىْءٌ»
যে ব্যক্তির ইসলামের ভাল কাজ শুরু করল, সে এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে। অথচ তাদেও সওয়াব থেকে কোন কমতি হবে না’’ [সহীহ মুসলিম:২৩৯৮]।

১৪. কবর যিয়ারত করা

সন্তান তার মা-বাবার কবর যিয়ারত করবে। এর মাধ্যমে সন্তান এবং মা-বাবা উভয়ই উপকৃত হবে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَقَدْ أُذِنَ لِمُحَمَّدٍ فِى زِيَارَةِ قَبْرِ أُمِّهِ فَزُورُوهَا فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الآخِرَةَ»
অর্থ: আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম,অত:পর মুহাম্মাদের মায়ের কবর যিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন তোমরা কবর যিয়রাত কর, কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয় [সুনান তিরমীযি :১০৫৪]।
যিয়রাত কর, কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয় [সুনান তিরমীযি :১০৫৪]।
কবর যিয়ারত কোন দিনকে নির্দিষ্ট করে করা যাবে না। কবর যিযারত করার সময় বলবে,
«السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ ، نَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ».
অর্থ: কবরবাসী মুমিন-মুসলিম আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক । নিশ্চয় আমরা আপনাদের সাথে মিলিত হবো। আমরা আল্লাহর কাছে আপনাদের এবং আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। [সুনান ইবন মাজাহ :১৫৪৭]

১৫. ওয়াদা করে গেলে তা বাস্তবায়ন করা

মা-বাবা কারো সাথে কোন ভাল কাজের ওয়াদা করে গেলে বা এমন ওয়াদা যা তারা বেচে থাকলে করে যেতেন, সন্তান যথাসম্ভব তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,
﴿وَأَوۡفُواْ بِٱلۡعَهۡدِۖ إِنَّ ٱلۡعَهۡدَ كَانَ مَسۡ‍ُٔولٗا ٣٤ ﴾ [الاسراء: ٣٤]
অর্থ: আর তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ কর, নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। [ সূরা বনী ইসরাঈল:৩৪]

১৬.কোন গুনাহের কাজ করে গেলে তা বন্ধ করা

মা-বাবা বেচে থাকতে কোন গুনাহের কাজের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে তা বন্ধ করবে বা শরীয়াহ সম্মতভাবে সংশোধন করে দিবে। কেননা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا ».
এবং যে মানুষকে গুনাহের দিকে আহবান করবে, এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ গুনাহ তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের গুনাহ থেকে কোন কমতি হবে না’’ [সহীহ মুসলিম:৬৯৮০]।

১৭.মা-বাবার পক্ষ থেকে মাফ চাওয়া

মা-বাবা বেচে থাকতে কারো সাথে খারাপ আচরণ করে থাকলে বা কারো উপর যুলুম করে থাকলে বা কাওকে কষ্ট দিয়ে থাকলে মা-বাবার পক্ষ থেকে তার কাছ থেকে মাফ মাফ চেয়ে নিবে অথবা ক্ষতি পূরণ দিয়ে দিবে। কেননা হাদীসে এসেছে,
«عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ : أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : أَتَدْرُونَ مَنِ الْمُفْلِسُ ؟ قَالُوا : الْمُفْلِسُ فِينَا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ لاَ دِرْهَمَ لَهُ ، وَلاَ مَتَاعَ لَهُ ، فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : الْمُفْلِسُ مِنْ أُمَّتِي يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلاَتِهِ وَصِيَامِهِ وَزَكَاتِهِ ، فَيَأْتِي وَقَدْ شَتَمَ هَذَا ، وَأَكَلَ مَالَ هَذَا ، وَسَفَكَ دَمَ هَذَا وَضَرَبَ هَذَا ، فَيَقْعُدُ ، فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ ، وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ ، فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُعْطِيَ مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ ، فَطُرِحَ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرِحَ فِي النَّارِ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি জান নিঃস্ব ব্যক্তি কে? সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে যার সম্পদ নাই সে হলো গরীব লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে হলো গরীব যে, কিয়ামতের দিন নামায, রোযা ও যাকাত নিয়ে আসবে অথচ সে অমুককে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, অন্যায়ভাবে লোকের মাল খেয়েছে, সে লোকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। কাজেই এসব নির্যাতিত ব্যক্তিদেরকে সেদিন তার নেক আমল নামা দিয়ে দেয়া হবে। এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। [সুনান আততিরমিযি :২৪২৮]
সুতরাং এ ধরনের নিঃস্ব ব্যক্তিকে মুক্ত করার জন্য তার হকদারদের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়া সন্তানের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
অল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে মা বাবার জন্য আমলগুলো করার তাওফীক দিন। আমীন!
وصلى الله على نبينا محمد وعلي اله وأصحابه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين- وأخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين

যে আমলের সাওয়াব মৃত্যুর পরও জারি থাকে

-হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল

إن الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وصحبه أجمعين أما بعد:
মানব জীবনের দু’টি অধ্যায়, একটি দুনিয়ার জীবন অপরটি আখিরাতের জীবন। দুনিয়ার জীবনে যা আমল করবে তার প্রতিদান আখিরাতের জীবনে পাবে। আর আল্লাহ তা‘আলা জীবন ও মৃত্যু এ দু’টি সৃষ্টি করেছেন এজন্য যে, কে কত ভাল আমল দুনিয়াতে করতে পারে। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلۡمَوۡتَ وَٱلۡحَيَوٰةَ لِيَبۡلُوَكُمۡ أَيُّكُمۡ أَحۡسَنُ عَمَلٗاۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡغَفُورُ ٢ ﴾ [الملك: ٢]
অর্থ : “যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল।” [সূরা আলমুলক : ০২]
ভাল আমল না করার কারণে আযাবপ্রাপ্তরা আফসোস করতে থাকবে। কিন্তু কোন আফসোস সেদিন কাজে আসবে না। কুরআনে এসেছে,
﴿ يَقُولُ يَٰلَيۡتَنِي قَدَّمۡتُ لِحَيَاتِي ٢٤ ﴾ [الفجر: ٢٤]
অর্থ : “সে বলবে, ‘হায়! যদি আমি কিছু আগে পাঠাতাম আমার এ জীবনের জন্য!” [সূরা আলফাজর : ২৪]
মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথে তার আমল করার কোন ক্ষমতা থাকে না। অর্থাৎ সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কিছু কিছু আমল রয়েছে যেগুলো মৃত ব্যক্তি দুনিয়ার জীবনে করলে কবরেও সে আমলের সাওয়াব পেতে থাকবে। এ বিষয়ে কুরআনে বলা হয়েছে
﴿ إِنَّا نَحۡنُ نُحۡيِ ٱلۡمَوۡتَىٰ وَنَكۡتُبُ مَا قَدَّمُواْ وَءَاثَٰرَهُمۡۚ وَكُلَّ شَيۡءٍ أَحۡصَيۡنَٰهُ فِيٓ إِمَامٖ مُّبِينٖ ١٢ ﴾ [يس: ١٢]
অর্থ : “আমিই তো মৃতকে জীবিত করি, আর লিখে রাখি যা তারা অগ্রে প্রেরণ করে এবং যা পিছনে রেখে যায়। আর প্রতিটি বস্তুকেই আমি সুস্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষণ করে রেখেছি।” [ সূরা ইয়াছিন : ১২]

যেসব আমলের সাওয়াব মৃত্যুর পরও জারী থাকবে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. ইলম শিক্ষা দেয়া
এমন ইলম শিক্ষা দেয়া যা মানুষের জন্য উপকারী এবং কল্যাণকর। যে ইলম মানুষকে হিদায়াতের দিকে নিয়ে যায়। মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয় এবং জান্নাতের পথে চলতে নির্দেশ করে। এ ধরনের ইলম শিক্ষা দেয়ার কারণে মৃত ব্যক্তি কবরে এর সওয়াব পাবেন। কুরআন, হাদীস, তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত, হালাল-হারাম, আক্কীদাহ, মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা দেয়া এবং দুনিয়া পরিচালনা বিষয়ক বিভিন্ন বিষয় শিক্ষা দেয়া এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত । এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ عَلَّمَ عِلْمًا فَلَهُ أَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهِ لَا يَنْقُصُ مِنْ أَجْرِ الْعَامِلِ
অর্থ : “যে মানুষকে ইলম শিক্ষা দিল এ ইলম অনুযায়ী আমলকারীর অনুরূপ সাওয়াব তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের সাওয়াব থেকে কোন কমতি হবে না।” [সুনান ইবন মাজাহ : ২৪০]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন,
من علم آية من كتاب الله عز وجل كان له ثوابها ما تليت
অর্থ : “যে আল্লাহর কিতাব থেকে একটি আয়াত শিক্ষা দিবে, যত তিলাওয়াত হবে তার সাওয়াব সে পাবে।” [সহীহ কুনুযুস সুন্নাহ আননবুবিয়্যাহ : ০৭]
হাদীস শিক্ষা দেয়ার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً
অর্থ : “একটি বাক্য হলেও আমার পক্ষ থেকে পৌঁছে দাও।” [সহীহ বুখারী : ৩৪৬১]

২. নেক সন্তান রেখে যাওয়া
নেক সন্তান বলতে ঈমানদার সন্তান রেখে যাওয়া। যারা মাতা-পিতা বেচে থাকা অবস্থায় তাদের অনুগত যেমনটি ছিল, তাদের মৃত্যুর পরও তারা মাতা-পিতার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আবু উমামাতা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

أَرْبَعَةٌ تَجْرِى عَلَيْهِمْ أُجُورُهُمْ بَعْدَ الْمَوْتِ مُرَابِطٌ فِى سَبِيلِ اللَّهِ وَمَنْ عَمِلَ عَمَلاً أُجْرِىَ لَهُ مِثْلُ مَا عَمِلَ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَجْرُهَا لَهُ مَا جَرَتْ وَرَجُلٌ تَرَكَ وَلَدًا صَالِحًا فَهُوَ يَدْعُو لَهُ.
অর্থ : “মানুষ মৃত্যুবরণ করার পর ৪ টি আমলের সাওয়াব অব্যাহত থাকে : ১. যে ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দিল তার সাওয়াব, ২. ভাল কাজ চালু করার ফলে তাকে যারা অনুসরণ করল তার সাওয়াব, ৩. যে ব্যক্তি এমন সাদাকাহ করলো, যা প্রবাহমান থাকে তার সাওয়াব, ও ৪. এমন নেক সন্তান রেখে যাওয়া- যে তার জন্য দু‘আ করে।” [মুসনাদ আহমাদ : ২২২৪৭]
এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : تُرْفَعُ لِلْمَيِّتِ بَعْدَ مَوْتِهِ دَرَجَتُهُ . فَيَقُولُ : أَيْ رَبِّ أَيُّ شَيْءٍ هَذِهِ فَيُقَالُ : وَلَدُكَ اسْتَغْفَرَ لَكَ.
অর্থ : “আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মৃত্যুর পর কোন বান্দাহর মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে, হে আমার রব, আমিতো এতো মর্যাদার আমল করিনি, কীভাবে এ আমল আসলো? তখন বলা হবে, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় এ মর্যাদা তুমি পেয়েেেছা।” [আলআদাবুল মুফরাদ : ৩৬]

৩. মাসজিদ তৈরি করা
মুসলিম জাতির প্রাণকেন্দ্র হলো মাসজিদ। আলকুরআনে মাসজিদকে হিদায়াত বা সঠিক পথ নির্দেশকেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মাসজিদে সালাত আদায়ের ব্যবস্থার সাথে সাথে সবার জন্য কুরআন শিক্ষা কার্যক্রম, দ্বীনি বিষয়ক শিক্ষা দান ও কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে। সেজন্য যে ব্যক্তি আল্লাহর ঘর নির্মাণ করবে এবং তাতে যারা সালাত আদায় করবে তার সাওয়াব তিনিও পেতে থাকবেন। উসমান রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেেেছন,
مَنْ بَنَى مَسْجِدًا لِلَّهِ بَنَى اللَّهُ لَهُ فِى الْجَنَّةِ مِثْلَهُ গ্ধ.
অর্থ : “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মাসজিদ তৈরি করল, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর তৈরি করবেন।” [সহীহ মুসলিম : ১২১৮]
এ বিষয়ে হাদীসে আরো এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : أَمَرَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِبِنَاءِ الْمَسَاجِدِ فِي الدُّورِ وَأَنْ تُنَظَّفَ وَتُطَيَّبَ.

অর্থ : “আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাসজিদ তৈরির জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।” [সুনান আবূ দাউদ : ৪৫৫]

৪. মুসহাফ বিতরণ করা ঃ
কোন ব্যক্তি যদি কুরআন মাজীদ কোন মাসজিদ, মাদরাসা বা কোন প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করে, ওয়াক্ফ করে এবং সেগুলো পড়ে তবে তার সাওয়াবের অংশ সে পাবে। আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” سَبْعَةٌ يَجْرِي لِلْعَبْدِ أَجْرُهُنَّ وَهُوَ فِي قَبْرِهِ بَعْدَ مَوْتِهِ: مَنْ عَلَّمَ عِلْمًا، أَوْ كَرَى نَهَرًا، أَوْ حَفَرَ بِئْرًا، أَوْ غَرَسَ نَخْلًا، أَوْ بَنَى مَسْجِدًا، أَوْ وَرَّثَ مُصْحَفًا، أَوْ تَرَكَ وَلَدًا يَسْتَغْفِرُ لَهُ بَعْدَ مَوْتِهِ

অর্থ : “মানুষ মৃত্যুবরণ করার পর কবরে ৭টি আমলের সাওয়াব অব্যাহত থাকে : ১. যে ইলম শিক্ষা দিল, ২. যে পানি প্রবাহিত করল, ৩. কুপ খনন করল, ৪. খেজুর গাছ লাগালো (গাছ রোপন), ৫. মাসজিদ তৈরি করল, ৬. কারো দায়িত্বে কিতাব দিয়ে গেল ও ৭. এমন নেক সন্তান রেখে গেল- যে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে।” [মুসনাদুল বাজ্জার :৭২৮৯]

৫. গাছ রোপন করা
গাছ আমাদের বন্ধু। গাছ যেমনিভাবে আমাদেরকে বিভিন্ন ফল-মূল দিয়ে থাকে তেমনিভাবে আমাদের পরিবেশকে ভাল রাখে। সেজন্য জাবির রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا إِلاَّ كَانَ مَا أُكِلَ مِنْهُ لَهُ صَدَقَةٌ وَمَا سُرِقَ مِنْهُ لَهُ صَدَقَةٌ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ مِنْهُ فَهُوَ لَهُ صَدَقَةٌ وَمَا أَكَلَتِ الطَّيْرُ فَهُوَ لَهُ صَدَقَةً وَلاَ يَرْزَؤُهُ أَحَدٌ إِلاَّ كَانَ لَهُ صَدَقَةٌ গ্ধ
অর্থ : “কোন মুসলিম যদি কোন বৃক্ষরোপন করে, আর তা থেকে কোন ফল কেউ খায় তবে সেটি তার জন্য সাদাকাহ, যদি কেউ চুরি করে খায় তাও তার জন্য সদাকাহ, কোন পাখিও খায় তাও তার জন্য সেটি সদাকাহ। এমনকি যদি কেউ তা কেটে ফেলে তাও সেটি তার জন্য সাদকাহ।” [ সহীহ মুসলিম : ৪০৫০]

৬. অভাবগ্রস্থদের জন্য ঘর তৈরি করে দেয়া
একজন মানুষের বসবাসের জন্য ছোট হলেও ঘর-বাড়ি অতীব প্রয়োজন। যে ব্যক্তি কোন মানুষের জন্য ঘর তৈরি করে দিবে তার সাওয়াব মৃত্যুর পরও সে কবরে পেতে থাকবে। এ বিষয়ে আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

إِنَّ مِمَّا يَلْحَقُ الْمُؤْمِنُ مِنْ عَمَلِهِ وَحَسَنَاتِهِ بَعْدَ مَوْتِهِ عِلْمًا عَلِمَهُ وَنَشَرَهُ ، أَوْ وَلَدًا صَالِحًا تَرَكَهُ ، أَوْ مَسْجِدًا بَنَاهُ ، أَوْ بَيْتًا لاِبْنِ السَّبِيلِ بَنَاهُ ، أَوْ نَهَرًا كَرَاهُ ، أَوْ صَدَقَةً أَخْرَجَهَا مِنْ مَالِهِ فِي صِحَّتِهِ وَحَيَاتِهِ ، تَلْحَقُهُ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهِ.

অর্থ : “মুমিন মৃত্যুবরণ করার পর তার সাথে যে আমলের সাওয়াব সম্পৃক্ত থাকবে, তা হলো ইলম শিক্ষা দেয়া ও কিতাব রচনা করা, নেক সন্তান রেখে যাওয়া, মাসজিত তৈরি করা, অভাবগ্রস্থদের জন্য ঘর তৈরি করে দেয়া, পানি প্রবাহিত হওয়ার ব্যবস্থা করা এবং তার সম্পদ থেকে সাদাকাহ করা।” [সহীহ ইবন খুযাইমাহ : ২৪৯]

৭. খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করা
পানি আমাদের জীবনের অতীব প্রয়োজনীয় একটি খাদ্য। সেজন্য খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করা একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِي بِطَرِيقٍ اشْتَدَّ عَلَيْهِ الْعَطَشُ فَوَجَدَ بِئْرًا فَنَزَلَ فِيهَا فَشَرِبَ ثُمَّ خَرَجَ فَإِذَا كَلْبٌ يَلْهَثُ يَأْكُلُ الثَّرَى مِنَ الْعَطَشِ فَقَالَ الرَّجُلُ لَقَدْ بَلَغَ هَذَا الْكَلْبَ مِنَ الْعَطَشِ مِثْلُ الَّذِي كَانَ بَلَغَ بِي فَنَزَلَ الْبِئْرَ فَمَلأَ خُفَّهُ ثُمَّ أَمْسَكَهُ بِفِيهِ فَسَقَى الْكَلْبَ فَشَكَرَ اللَّهُ لَهُ فَغَفَرَ لَهُ قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ وَإِنَّ لَنَا فِي الْبَهَائِمِ أَجْرًا فَقَالَ فِي كُلِّ ذَاتِ كَبِدٍ رَطْبَةٍ أَجْرٌ.

অর্থ : “আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একটি লোক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল, তার পানির খুব পিপাসা পেল, পথিমধ্যে সে একটি কুপ পেল এবং সেখান থেকে পানি পান করল। অতঃপর দেখতে পেল একটি কুকুর পানির পিপাসায় ময়লা খাচ্ছে, সেখানে সে মোজা দিয়ে পানি ভরে কুকুরকে পানি পান করাল এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা তাকে মাফ করে দিলেন। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! প্রাণীকে পানি পান করালেও কি সাওয়াব আছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রত্যেক সজীব অন্তরকে পানি পান করানোর জন্য সাওয়াব রয়েছে।” [সহীহ বুখারী : ৬০০৯]

৮. সীমান্ত রক্ষা করা
ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দেয়া অর্থাৎ মানুষকে নিরাপদ ও শান্তিতে রাখার জন্য শত্র“র হাত থেকে ইসলামী রাষ্ট্রকে পাহারা দেয়ার সাওয়াব ব্যক্তির মৃত্যুর পরও জারি থাকবে। এ বিষয়ে হাদীসে উল্লেখ আছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ قَالَ : مَنْ مَاتَ مُرَابِطًا فِي سَبِيلِ اللهِ أَجْرَى عَلَيْهِ أَجْرَ عَمَلِهِ الصَّالِحِ الَّذِي كَانَ يَعْمَلُ ، وَأَجْرَى عَلَيْهِ رِزْقَهُ ، وَأَمِنَ مِنَ الْفَتَّانِ ، وَبَعَثَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ آمِنًا مِنَ الْفَزَعِ.

অর্থ : “আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা অবস্থায় মারা যায় তাহলে যে কাজ সে করে যাচ্ছিল মরার পরও তা তার জন্য সাওয়াব জারি থাকবে, তার রিযিকও জারি থাকবে, কবরের পরীক্ষা থেকে সে থাকবে নিরাপদ এবং আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতে তাকে ভয় থেকে মুক্ত অবস্থায় উঠাবেন।” [সহীহ ইবন মাজাহ : ২২৩৪]
ফাদালাতা ইবন উবাইদ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
كُلُّ مَيِّتٍ يُخْتَمُ عَلَى عَمَلِهِ إِلاَّ الَّذِي مَاتَ مُرَابِطًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ، فَإِنَّهُ يَنْمُو لَهُ عَمَلُهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ ، وَيَأْمَنُ فِتْنَةَ الْقَبْرِ.

অর্থ : “মৃত্যুর পর প্রত্যেক মৃতের কর্মের ধারা শেষ করে দেয়া হয়। তবে যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দেয় তার আমল কিয়ামত পর্যন্ত বাড়তে থাকবে এবং কবরের ফিতনা থেকেও সে নিরাপদ থাকবে।” [সহীহ ইবন হিব্বান : ৪৬২৪]
৯. প্রবাহিত পানির ব্যবস্থা করা
ফল-ফসল উৎপাদন করার জন্য প্রবাহিত পানির ব্যবস্থা থাকা খুবই জরুরী। সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষি জমি আবাদযোগ্য করা যায় এবং ফসল ভালভাবে উৎপাদন সম্ভব হয়। আর প্রতিটি জীবনে রয়েছে পানির ব্যবহার। সেজন্য এটি একটি এমন সাওয়াবের কাজ-যা ব্যক্তির মৃত্যুর পরও জারি থাকবে । উসমান রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ حَفَرَ رُومَةَ فَلَهُ الْجَنَّةُ

অর্থ : “যে পানির ঝর্ণা খনন করল, তার জন্য জান্নাত রয়েছে।” [সহীহ বুখারী : ২৭৭৮]

১০. আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া
মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা উত্তম কাজ। এজন্য এ মাসে মানুষকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসার জন্য আলোচনা করা, কুরআন ও হাদীসের দারস প্রদান, বই বিতরণ, কুরআন বিতরণ ইত্যাদি কাজ বেশি বেশি করা। আর এর সাওয়াব কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে। আলকুরআনের ঘোষণা :
وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ

অর্থ : “ঐ ব্যক্তির চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, নেক আমল করলো এবং ঘোষণা করলো আমি একজন মুসলমান।” [সূরা হা-মীম সাজদাহ : ৩৩]
আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়ার কাজটি এতো ফযিলাতপূর্ণ যে, নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাদিআল্লাহু আনহুকে বললেন,
فَوَاللَّهِ لَأَنْ يُهْدَى بِكَ رَجُلٌ وَاحِدٌ خَيْرٌ لَكَ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ
অর্থ : “তোমার মাধ্যমে একজনও যদি হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়, তবে তা হবে তোমার জন্য লালবর্ণের অতি মূল্যবান উট থেকেও উত্তম।” [সহীহ বুখারী : ২৯৪২]
مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا
অর্থ : “যে মানুষকে হিদায়াতের দিকে আহ্বান করবে, এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের সাওয়াব থেকে কোন কমতি হবে না।” [সহীহ মুসলিম : ৬৯৮০]

১১. কিতাব রচনা করা
এমন কিতাব রচনা করা, যার মাধ্যমে কল্যাণ সাধিত হয়। মানুষ সত্যিকার পথের সন্ধ্যান পায়। কিতাব পড়ে দ্বীনের অনেক দায়ী তৈরি হবে, ইলম অর্জনের জন্য সহায়ক হবে। যিনি এ ধরনের কিতাব রচনা করবেন, তিনি মৃত্যুর পরও এর সাওয়াব পেতে থাকবেন।
হাদীসে এসেছে,
مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ গ্ধ
অর্থ : “ভাল কাজের পথপ্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে।” [সুনান আততিরমীযি : ২৬৭০]
১২. সাদাকায়ে জারিয়াহ
সাদাকা শব্দের অর্থ দান করা এবং জারিয়া অর্থ প্রবাহমান, সদাস্থায়ী প্রভৃতি। আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে শরীয়া অনুমোদন করে এমন কল্যাণকর কাজে দান করা। যেমন : মাদ্রাসা তৈরি, এতিমখানা প্রতিষ্ঠা, পাঠাগার এর ব্যবস্থা করা, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, রাস্তাঘাট নির্মাণ অন্যতম। আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ গ্ধ.
অর্থ : “মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩ টি আমল বন্ধ হয় না- ১. সাদাকায়ে জারিয়া, ২. এমন ইলম-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ও ৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দু‘আ করে।” [সহীহ মুসলিম : ৪৩১০]

ইবাদাত কবুলের শর্তসমূহ
আমাদেরকে ইবাদাত করার সময় অবশ্যই খেয়াল করতে হবে যে, ইবাদাত কবুলের শর্তগুলো পুরণ হয়েছে কি না। ইবাদাত কবুলের সকল শর্ত পূরণ ছাড়া ইবাদাতের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। যদি কোন একটি শর্ত অনুপস্থিত থাকে তবে ইবাদাত কবুল হয় না। শর্তগুলো হলো :
১. নিয়ত শুদ্ধ করা ঃ
ইবাদাতের পূর্বে নিয়ত শুদ্ধ করতে হবে। আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

إنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ يَنْزِلُ إِلَى الْعِبَادِ لِيَقْضِىَ بَيْنَهُمْ وَكُلُّ أُمَّةٍ جَاثِيَةٌ فَأَوَّلُ مَنْ يَدْعُو بِهِ رَجُلٌ جَمَعَ الْقُرْآنَ وَرَجُلٌ قُتِلَ فِى سَبِيلِ اللَّهِ وَرَجُلٌ كَثِيرُ الْمَالِ فَيَقُولُ اللَّهُ لِلْقَارِئِ أَلَمْ أُعَلِّمْكَ مَا أَنْزَلْتُ عَلَى رَسُولِى قَالَ بَلَى يَا رَبِّ. قَالَ فَمَاذَا عَمِلْتَ فِيمَا عُلِّمْتَ قَالَ كُنْتُ أَقُومُ بِهِ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ. فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ كَذَبْتَ وَتَقُولُ لَهُ الْمَلاَئِكَةُ كَذَبْتَ وَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ بَلْ أَرَدْتَ أَنْ يُقَالَ إِنَّ فُلاَنًا قَارِئٌ فَقَدْ قِيلَ ذَاكَ.
অর্থ : “যখন কিয়ামতের দিন হবে, আল্লাহ তাবারাকা ওয়াতা‘আলা তাঁর বান্দাদের বিচারের উদ্দেশে আবির্ভূত হবেন। তখন প্রতিটি জাতি ভয়ে নতজানু হয়ে পড়বে। বান্দাদের মধ্যে প্রথমে ডাকা হবে কুরআনের বাহক, আল্লাহর পথে শহীদ ও সম্পদশালী ব্যক্তিকে। ক্বারীর উদ্দেশে আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাকে তা শিখায়নি যা আমার রাসূলের ওপর নাজিল করেছিলাম? বলবে, জি, হে আমার রব। অল্লাহ তা‘আলা বলবেন, সুতরাং তুমি যা শিখেছো তার কী আমল করেছো ? সে বলবে, আমি দিন-রাতের নানা প্রহরে নামাজে এ কুরআন তিলাওয়াত করেছি। অল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছো। ফেরেশতারাও তার উদ্দেশে বলবে, তুমি মিথ্যা বলেছো। তাকে লক্ষ্য করে অল্লাহ বলবেন, বরং তোমার অভিপ্রায় ছিল লোকেরা তোমাকে ক্বারী বলে ডাকবে। আর তা তো তোমাকে বলা হয়েছেই। ফলে তুমি দুনিয়াতেই তোমার প্রতিদান পেয়ে গেছো। তুমি দুনিয়াতেই তোমার প্রতিদান পেয়ে গেছো।’ (হাদীসের পরের অংশে রয়েছে, এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।” আল্লাহ তা‘আলা আমাদের হেফাজত করুন) [সুনান আততিরমীযি : ২৩৮৬]

২. সুন্নাহ পদ্ধতিতে ইবাদাত করা
আমল কবুল হওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুকরণ ও অনুসরণ প্রয়োজন। কোন ব্যক্তির মনগড়া বা বিদআতী পদ্ধতিতে ইবাদাত করলে তা কবুল হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآَخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
অর্থ : “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন বিধান তালাশ করে, কম্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং পরকালেও সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত।” [সূরা আলে ইমরান : ৮৫]
এ বিষয়ে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ গ্ধ.
অর্থ : “যে এমন ইবাদাত করল যাতে আমাদের কোন নির্দেশনা নেই তা পরিত্যাজ্য হিসাবে গণ্য হবে।” [সহীহ মুসলিম : ৪৫৯০]
কুরআনে এসেছে,
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
অর্থ : “এবং রাসূল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও।” [সূরা হাশর :৭]
৩. শিরক মুক্ত থাকা
শিরক সকল ভাল আমল নষ্ট করে দেয়। কোন প্রকার শিরকের সাথে সম্পৃক্ত থাকা যাবে না। শিরকের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আমল কবুল হয় না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
অর্থ : “আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার আমল নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।” [সূরা যুমার : ৬৫]

৪. হালাল উপার্জন করা
আমল কবুল হওয়ার জন্য হালাল উপার্জন শর্ত। আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا، وَإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ، فَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا، إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ} [المؤمنون: ৫১] وَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ} [البقرة: ১৭২] ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ، يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ، يَا رَبِّ، يَا رَبِّ، وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ؟গ্ধ

অর্থ : ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র। তিনি শুধু পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন। তিনি মুমিনদের সেই আদেশই দিয়েছেন, যে আদেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসূলগণের।’’ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘হে ঈমানদারগণ তোমরা পবিত্র বস্তু-সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসেবে দান করেছি।’’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলি-ধুসরিত ক্লান্ত-শ্রান্ত বদনে আকাশের দিকে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করে ডাকছে : হে আমার প্রভু, হে আমার প্রভু অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারা সে পুষ্টি অর্জন করে। তার প্রার্থনা কিভাবে কবুল হবে?’’ [ সহীহ মুসলিম : ২৩৯৩]

আল্লাহ তা‘আলা আমলগুলো করার তাওফীক দিন। আমীন!
وصلى الله على نبينا محمد وعلي اله وأصحابه أجمعين – وأخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অবমাননার পরিণাম ও শাস্তি

-হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল

আল্লাহ তা’আলা মানবজাতির হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে এ ধরায় নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন। আর নবী ও রাসূল প্রেরণের এ ধারাবাহিকতা আদম আলাইহিস সালামকে দিয়ে শুরু হয়েছে এবং আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিয়ে এর সমাপ্তি ঘটেছে। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন সকল নবী ও রাসূলের নেতা। কুরআন মাজীদে তাঁর মর্যাদাকে সমুন্নত করা হয়েছে। কিয়ামাতের দিন তাঁর শাফায়াত আল্লাহ গ্রহণ করবেন। তাঁর আনুগত্য করা মুসলিম হওয়ার পূর্ব শর্ত। তাঁকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসা একজন মুসলিমের ঈমানের দাবী। তাঁর উত্তম চরিত্রের সার্টিফিকেট স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা দিয়েছেন। যার দরূন তাঁর নবুওয়্যাত প্রাপ্তির শুরু থেকেই অনেক বিরোধিতা সত্ত্বেও কেউ তাঁর চরিত্র নিয়ে কোন কটূক্তি করতে পারেনি। বর্তমানে মুসলিম নামধারী একদল পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত, জ্ঞানপাপী রাসূলুল্লাহ্ সা.-এর বিরূদ্ধে কাল্পণিক কিচ্ছা-কাহিনী তৈরী ও ইসলামের গুরুত্বপূর্ন বিধান ও আহকামকে নিয়ে এমন কিছু কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছে যা কোনো সভ্য মানুষ ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না। মূলত এ ধৃষ্টতার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের অন্তর থেকে আল−াহর প্রতি ঈমান, রাসূলুল্লাহ্ সা.-এর প্রতি ভালোবাসা, ইসলামের বিধানের প্রতি আনুগত্যের বিষয়গুলোকে মূছে দিয়ে ঘৃণা-বিদ্বেষ তৈরী করা এবং পৃথিবীর মানচিত্র থেকে ইসলাম ও মুসলিমকে নির্মূল করাই এদের উদ্দেশ্য। এ সম্পর্কে মুসলিম উম্মাহকে সচেতন করা এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা প্রদানই এ প্রবন্ধের উদ্দেশ্য।

আল-কুর’আন ও হাদীসের আলোকে রাসুল সা.-এর মর্যাদা
দুনিয়ার নিয়ম হলো কাউকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার আগে তার চারিত্রিক সনদ তলব করা হয়। এজন্য এলাকার কমিশনার অথবা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার বা চেয়ারম্যানগণ সার্টিফিকেট প্রদান করেন। যাতে লেখা থাকে, ‘আমার জানা মতে লোকটি সৎ চরিত্রের অধিকারী’। অথচ রাসুলুল−াহ সা.-এর চারিত্রিক সার্টিফিকেট দিয়েছেন স্বয়ং আল−াহ তা‘আলা। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বলেছেন,“নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের উপর অধিষ্ঠিত।” [সূরা আল-কালাম: ৪]। অন্য এক আয়াতে তিনি আরো বলেন : “নিশ্চয়ই আপনি সঠিক, সহজ ও সরল পথ এবং হিদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন” [সূরা আলহাজ্জ:৬৭]। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহ তা’আলা নির্ধারণ করেছেন। তাই ইচ্ছা করে তার মর্যাদা কেউ কমাতে পারবে না যতই বিরুদ্ধবাদীরা নবীকে নিয়ে কটূক্তি এবং অবমাননাকর কর্মকান্ডে ব্যস্ত থাকুক না কেন। কেননা মহান আল্লাহই তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। এ প্রসঙ্গে কুরআনের বক্তব্য হলো “আর আমরা আপনার খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি। [সূরা ইনশিরাহ:৪] । এছাড়া রাসূল সা. ছিলেন বিশ্ববাসীর জন্য একটি আদর্শ মডেল। যার আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে জাতি-ধর্ম নির্মিশেষ সকল স্তরের মানুষ সন্তুষ্টি ছিল। আর এ কারণেই বিশ্ববাসীর জন্য রাসূল সা.কে অনুসরণ ও অনুকরণ করা মহান আল্লাহ্ তা‘আলা ফরজ করে দিয়েছেন, যা অন্য কারো ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এ দিকে লক্ষ্য করেই তিনি বলেন : “তোমাদের জন্য রাসূলের চরিত্রেই রয়েছে উত্তম আদর্শ”[সূরা আল-আহযাব:২১]। রাসূলুল্লাহ্ সা.-এর একটি উল্লেখযোগ্য মর্যাদা হলো যে, তাঁর উপর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ গ্রন্থ কুর‘আন অবতীর্ণ করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা যুগে যুগে মানবতার হিদায়াতের জন্য যেসব কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, তার মধ্যে আল-কুর‘আন হলো সর্বশেষ আসমানী কিতাব, যা রাসূলুল্লাহ্ সা.-এর উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে। কুর‘আন মাজীদ অবতীর্ণ হওয়ায় তাঁর সম্মান ও মর্যাদাকে আরো সমুন্নত করেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আর যারা ঈমান এনেছে, সৎকর্ম করেছে এবং মুহাম্মাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছে, আর তা তাদের রবের পক্ষ হতে (প্ররিত) সত্য, তিনি তাদের থেকে তাদের মন্দ কাজগুলো দূর করে দেবেন এবং তিনি তাদের অবস্থা সংশোধন করে দেবেন”[সূরা মুহাম্মাদ :০২] । আল্লাহ তা’আলা তার মর্যাদাকে সমুন্নত করার জন্য তাঁর প্রতি সালাত ও সালাম পাঠের নির্দেশ প্রদান করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহাগ্রন্থ আল-কুর’আনের ঘোষণা : “হে মুমিনগণ, তোমরাও নবীর উপর দরূদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।” [ সূরা আল-আহযাব:৫৬]
যুগে যুগে যেসব নবী ও রাসূল আগমন করেছেন তাদের উপর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদীসের এক বর্ণনায় এসেছে, আবূ হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন; রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন : ছয়টি দিক থেকে সকল নবীর উপর আমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। আমাকে জাওয়ামিউল কালিম তথা ব্যাপক অর্থবোধক বাক্য বলার যোগ্যতা দেয়া হয়েছে, আমাকে রোব (ভীতিপূর্ণ গুরুগম্ভীর) দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে, গনীমতের মাল (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) আমার জন্যে বৈধ করা হয়েছে, আমার জন্যে যমীনকে পবিত্র ও সিজদার উপযুক্ত করা হয়েছে, আমি সকল মানুষের তরে প্রেরিত হয়েছি এবং আমার মাধ্যমে নবুওয়াত পরষ্পরা শেষ করা হয়েছে [সহীহ মুসলিম: ১১৯৫] । তিনি সর্বপ্রথম শাফায়াত করবেন এবং সর্বপ্রথম তাঁর শাফায়াত কবুল করা হবে। কিয়ামাতের কঠিন মুসিবতের দিনে আল্লাহ তা’আলার অনুমতিক্রমে তিনি গুনাহগার উম্মাতের জন্য শাফায়াত করবেন। আবু সাঈদ খুদরী রাস. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন : কিয়ামতের দিন আমি সকল আদম সন্তানের নেতা। এতে কোন গর্ব-অহঙ্কার নেই। আমি হলাম প্রথম ব্যক্তি যাকে কিয়ামতের দিন জমিন থেকে প্রথম বের করা হবে। এতে কোন গর্ব-অহঙ্কার নেই। আমি হচ্ছি প্রথম সুপারিশকারী এবং আমার সুপারিশই সর্ব প্রথম কবুল করা হবে। এতে কোন গর্ব-অহঙ্কার নেই [সহীহ মুসলিম:৫০৭]। এভাবে অনেক মর্যাদা তাকে দেয়া হয়েছে।

ইসলামী আইনে রাসূলুল্লাহ্ সা.-এর প্রতি কটুক্তি করলে তার হুকুম
যারা রাসুল সা.কে নিয়ে উপহাস বা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে তারা কাফের হয়ে যায়। যদিও তারা সালাত, সাওম ইত্যাদি আদায় করুক না কেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন : মুনাফিকরা ভয় করে যে, তাদের বিষয়ে এমন একটি সূরা অবতীর্ণ হবে, যা তাদের অন্তরের বিষয়গুলি জানিয়ে দেবে। বল : তোমরা উপহাস করতে থাক। নিশ্চয় আল−াহ বের করবেন, তোমরা যা ভয় করছ। আর যদি তুমি তাদেরকে প্রশ্ন কর, অবশ্যই তারা বলবে : আমরা আলাপচারিতা ও খেল-তামাশা করছিলাম। বল : আল−াহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলের সাথে তোমরা বিদ্রƒপ করছিলে? তোমরা ওযর পেশ করো না। তোমরা তোমাদের ঈমানের পর অবশ্যই কাফের হয়ে গেছো। [সূরা আত-তাওবাহ:৬৪-৬৬] । এ আয়াতে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে তোমরা তোমাদের ঈমানের পরে কাফের হয়ে গেছো। এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে, আবদুল−াহ ইবনে আমর থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : তাবুক যুদ্ধের সময় কোন এক মজলিশে এক ব্যক্তি (মুনাফিক) বললো, আমাদের এই আলেমদের মতো অন্য কাউকে এতটা পেটপূজারী (লোভী), এতটা মিথ্যাবাদী এবং শত্রুর মোকাবেলায় এতটা কাপুরুষ আর কাউকে দেখিনি। তখন ঐ মজলিশের একজন ব্যক্তি বললেন : তুমি মিথ্যা বলেছ। বরং তুমি একটা মুনাফেক। আমি অবশ্যই, তোমার এই বিষয়টি রাসূলুল্লাহ্ সা. কে জানাব। পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহ্ সা. জানলেন এবং এদের ব্যাপারে উপরোক্ত আয়াতটিও নাজিল হয়ে গেল। হাদীসের বর্ণনাকারী আব্দুল−াহ ইবনে আমর রা. বলেন : আমি দেখেছি ঐ লোকটি রাসূলুল্লাহ্ সা.-এর উটের রশি ধরে ঝুলছে আর বলছে, ইয়া রাসূলাল−াহ! আমরা তো এইগুলো শুধুমাত্র কৌতুক ও খেলনাচ্ছলে বলেছিলাম (অন্তর থেকে বলিনি)। উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ সা. বললেন : আল−াহ, আল−াহর আয়াত এবং আল−াহর রাসূল সা. কে নিয়ে উপহাস করছো? [তাফসীর ইব্ন কাছীর] এ হাদীসেও দেখা গেল, যারা রাসূলুল্লাহ্ সা. ও সাহাবীদের নিয়ে কটুক্তি করেছিল তারা কোনো ইয়াহুদি বা খ্রিস্টান ছিল না বরং নামধারী মুনাফেক মুসলমান ছিল। যারা শুধু নামাজ, রোজা ইত্যাদি করতো না বরং রাসূলুল্লাহ্ সা.-এর সাথে তাবুকের যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছিল। রাসূলুল্লাহ্ সা. ও সাহাবীদের নিয়ে কটাক্ষ করার কারণে আল−াহ্ তা‘আলা পবিত্র কুরআনের আয়াত নাজিল করে তাদেরকে কাফের বলে ঘোষণা করলেন।
রাসূলুল্লাহ্ সা. শানে কটুক্তি করার শাস্তি
যে রাসূলের অবমাননা করবে সে দুনিয়াতে আল্লাহর লানতপ্রাপ্ত ও আখিরাতে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে । এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ বলেন : নিশ্চয় যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ্ তাদের প্রতি দুনিয়া ও আখিরাতে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি। [সূরা আল-আহযাব:৫৭]
রাসূলের অবমাননা করার পর যদি সামর্থ থাকার পরও শাস্তি না দেয়া হয় তবে গোটা জাতি আল্লাহর গযবে পতিত হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন : অতএব যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে [সূরা আন-নুর:৫৭] । এ ছাড়া যারা রাসুলের অবমাননার কাজে জড়িত থাকবে তাদের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন : আর যে তোমাদের মধ্য থেকে তাঁর দ্বীন থেকে ফিরে যাবে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে, বস্তুত এদের আমলসমূহ দুনিয়া ও আখিরাতে বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং তারাই আগুনের অধিবাসী [সূরা আলবাকারাহ:২১৭] । আর রাসূলকে অবমাননা এবং তাঁকে বিদ্রুপ করার মাধ্যমে তাঁকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয়া হয়। এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে, আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন. এক ব্যক্তি নাসারা ছিল সে ইসলাম গ্রহণ করল এবং সূরা আল-বাকারা ও আল ইমরান শিখল। সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কেরানীর কাজ করত। সে পুণরায় নাসারা হয়ে গেল এবং বলতে লাগল মোহাম্মদ আমি যা লিখি তাই বলে এর বাহিরে সে আর কিছুই জানে না। এরপর সে মারা গেল, তখন তার সাথীরা তাকে দাফন করল, সকালে উঠে দেখল তার লাশ বাইরে পড়ে আছে, তখন নাসারারা বলতে লাগল, মোহাম্মদের সাথীরা এই কাজ করেছে; কেননা সে তাদের ধর্ম ত্যাগ করেছিল। তখন তারা আরো গভীর করে কবর খনন করে তাকে আবার দাফন করল, আবার সকালে উঠে দেখল তার লাশ বাইরে পড়ে আছে। তখন তারা বলল : এটা মোহাম্মদ এবং তার সাথীদের কাজ; কেননা সে তাদের ধর্ম ত্যাগ করে এসেছিল। তখন তারা আবার আরো গভীর করে কবর খনন করল এবং তাকে দাফন করল, আবার সকালে উঠে দেখল তার লাশ আবার বাইরে পড়ে আছে, তখন তারা বুঝল, এটা কোনো মানুষের কাজ নয়, তখন তারা তার লাশ বাইরেই পড়ে থাকতে দিল। [সহীহ বুখারী:-৩৪২১]। উপরের আয়াত ও হাদীস থেকে জানা গেল যে, যারা আল−াহকে নিয়ে অথবা আল−াহর আয়াত ও রাসূল সা. কে নিয়ে কটাক্ষ করে তারা আর মুসলিম থাকে না বরং তারা কাফের ও মুরতাদ হয়ে যায়। আর ইসলাম ত্যাগ করে যারা কাফের ও মুরতাদ হয়ে যায় তাদের শাস্তি হলো মৃত্যুদন্ড। এ প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে : রাসূলুল্লাহ্ সা. ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তার দ্বীন (ইসলামকে) পরিবর্তন করলো তাকে তোমরা হত্যা কর। [সহীহ বুখারী:-১৪৫৮]। এ হাদীসে পরিষ্কারভাবে মুরতাদদের হত্যা করতে বলা হয়েছে। শুধু তাই না রাসূলুল্লাহ্ সা.-এর যুগেই এই নির্দেশ বাস্তবায়নও করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি ঘটনা নিম্নে উলে−খ করা হলো:ইবনে খাতাল নামক জনৈক ব্যক্তি মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করে। পরবর্তীতে সে মুরতাদ হয়ে আবার মক্কায় ফিরে আসে এবং রাসূলুল্লাহ্ সা. কে নিয়ে কটুক্তি করে। যার পুরো আলোচনা নিম্নের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে : ‘আব্দুল−াহ ইবনে খাতাল তার নিজস্ব দুটি গায়িকা নারীর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ্ সা.-এর বিরূদ্ধে কুৎসা মূলক গান গাওয়াতে লাগলো। রাসূলুল্লাহ্ সা. যখন মক্কা বিজয় করলেন তখন অন্যান্য কাফেরদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেও রাসূলুল্লাহ্ সা.-এর বিরূদ্ধে কটাক্ষকারী ইবনে খাতাল ও তার মতো আরো কয়েকজন যারা একই অপরাধে অপরাধী যেমন তার ঐ দুই দাসী, আব্দুল−াহ ইবনে সা’দ ইবনে আবী সারাহ, মাকিস ইবনে সুবাবা আল লাইসি গংদের ক্ষমা করা হয়নি। তাদের জন্য কোনো নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি। বরং তাদের সকলকেই হত্যা করা হয়েছে। শুধু মাত্র একটি বাঁদী ব্যতীত যে পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করার কারণে মুক্তি পায়। [মাতালিবুল ‘আলিয়া, (বৈরূত : মুওয়াস্সাসাতুর রিসালাহ, তা.বি.), খ. ১২, পৃ. ২৫৯, হাদীস নং-৪৪২২] । ইবনে খাতাল বাঁচার জন্য কাবার গিলাফ ধরে ঝুলেছিলো। রাসূলুল্লাহ্ সা. কে বিষয়টি বলা হলো যে, ইবনে খাতাল বাঁচার জন্য কাবার গিলাফ ধরে ঝুলে আছে তখন রাসুলুল−াহ সা. তাকে ঐ অবস্থায় হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। এ প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সা. মক্কা বিজয়ের দিন মক্কায় প্রবেশ করে মাত্র মাথায় যে হেলমেট পরা ছিল তা খুললেন, এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে বললো, ইবনে খাতাল (বাঁচার জন্য) কাবার গিলাফ ধরে ঝুলে আছে। রাসূলুল্লাহ্ সা. বললেন : (ঐ অবস্থায়ই) তাকে হত্যা করো। [ সহীহ বুখারী: ৩৩৭৪]

আল−াহর রাসূল সা. কে নিয়ে কটুক্তিকারীর ব্যাপারে বিভিন্ন মাযহাবের বক্তব্য
হানাফী মাযহাবের মতে, যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সা. কে গালি-গালাজ করবে সে অবশ্যই মুরতাদ। ইসলামী শরিয়তে মুরতাদের যে বিধান তার ব্যাপারে সেই বিধানই প্রযোজ্য হবে। মুরতাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয় তার ব্যাপারে সেই আচরণই করা হবে। রাসূল সা. কে গালি-গালাজকারী মুরতাদ। ইমাম আবু হানীফা (র.) থেকে যারা এ ফতোয়া বর্ণনা করেছেনÑ তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, কাজী আয়াজ। এছাড়া এ মতের সাথে যারা একমত পোষণ করেন তাদের মধ্যে রয়েছেন, মালেক ইবনে আনাস, লাইস, আহমদ, ইসহাক এবং ইমাম শাফেয়ী রহ.। এ প্রসঙ্গে ‘কাজী আবুল ফজল বলেন : এ প্রসঙ্গে আবু বকর সিদ্দীক রা. বলেছেন : এ ধরণের লোকদের তওবা গ্রহণযোগ্য হবে না।’ [ আল বাহরুর রায়েক, খ. ১৩, পৃ. ৪৯৬।] হানাফী মাযহাবের আরেকটি প্রসিদ্ধ কিতাব ‘ফাতাওয়ায়ে শামী’তে বলা হয়েছে, ‘যারা রাসূলুল্লাহ্ সা. কে কটাক্ষ বা গালি-গালাজ করবে তাদের হত্যা করার ব্যাপারে সমস্ত ওলামায়ে কিরাম একমত। ইমাম মালেক, লাইস, আহমদ, ইসহাক, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আবু হানীফা (র.) ও তার সাথীবর্গ এবং ইমাম আওযা‘য়ী সকলেই একমত পোষণ করেন…। [ ফাতওয়ায়ে শামী, খ. ৪, পৃ. ৪১৭।]হানাফী মাযহাবের প্রসদ্ধি আলেম কাজী ইয়াজ (রহ.) বলেন : ‘উম্মতের ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, রাসূলুল্লাহ্ সা. কে গালি দেওয়া বা তাকে অসম্মান করার শাস্তি হচ্ছে হত্যা করা। এ ব্যাপারে সকলের ইজমা হয়েছে যে, যে ব্যাক্তি রাসূলুল্লাহ্ সা. কে গালি দিবে বা তার অসম্মান করবে সে কাফের হয়ে যাবে এবং তার শাস্তি মৃত্যুদন্ড।’ [সারিমুল মাসলূল, খ. ১. পৃ. ৯।] শাফেয়ী মাযহাবের প্রসিসদ্ধ আলেম ইবনুল মুনযির (রহ.) বলেন : ‘যে ব্যক্তি সরাসরী রাসূলুল্লাহ্ সা. কে গালি-গালাজ করবে তাকে হত্যা করা ওয়াজীব এবং এ ব্যাপারে সকলেই একমত।’ [কিতাবুল ইজমা, খ. ১, পৃ. ৩৫।] শাফেয়ী মাযহাবের প্রসিদ্ধ আলেম আবু বকর আল ফারসী বলেন : ‘শাফেয়ী মাযহাবের প্রসিদ্ধ আলেম আবু বকর আল ফারেসী তার ‘আল ইজমা’ নামক কিতাবে বলেন : যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সা. কে এমন কোনো গালি দেয় যাতে অপবাদের বিষয় রয়েছে সে স্পষ্ট কুফুরি করলো। সে তওবা করা সত্বেও তার হত্যার বিধান রহিত হবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সা. কে অপবাদ দেওয়ার শাস্তি হলো হত্যা যা তওবা করা সত্বেও রহিত হয় না’ [আল মাজমূ’ শারহুল মুহায্যাব খ. ১৯, পৃ. ৩২৬। ] বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে এক শ্রেণীর হটকারিতা ও ইসলাম বিদ্বেষীদের আবির্ভাব হয়েছে তারা রাসূলুল্লাহ্ সা. ও সাহাবায়ে কিরামদের ব্যাপারে যা প্রচারণা চালাচ্ছে, তাতে রাসূলুল্লাহ্ সা. ও সাহাবায়েকিরামদের বিরূদ্ধে জঘন্য অপবাদ দেওয়া হয়েছে। ইসলামী আইনানুযায়ী তাদের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড। এ প্রসঙ্গে ‘ইমাম আল-খাত্তাবী রহ. বলেন : যারা রাসূলুল্লাহ্ সা. কে নিয়ে কটাক্ষ বা গালি-গালাজ করে তাদের হত্যা করা ওয়াজিব। এ ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত আছে বলে আমার জানা নেই।’ [সারিমুল মাসলূল, প্রাগুক্ত, খ. ১. পৃ. ৯।]

রাসুলের অবমাননাকারীর তাওবাহ
মানুষ কোন পাপ কাজ করলে তার জন্য তাওবার বিধান রয়েছে। কিন্তু রাসুলের অবমাননাকারীরা তাওবাহ করলে তা গ্রহণ করা হবে কি না তা নিয়ে তিনটি অভিমত মত পাওয়া যায়।
এক. রাসূলের অবমাননাকারী মুসলিম হোক বা অমুসলিম হোক তার তাওবাহ গ্রহণযোগ্য হবে না। তাকে হত্যা করা হবে। এর পক্ষে যারা মত দিয়েছেন: ইমাম মালেক র. বলেন,‘কোনো মুসলমান যদি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে কটাক্ষ বা গালী-গালাজ করে তাকে অবশ্যই হত্যা করা হবে তার তওবা গ্রহণযোগ্য হবে না।’ [আত তালকীন ফী ফিকহিল মালেক, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ৫০৭]

ইমাম ইবন তাইমিয়া বলেন,‘ইমাম আহমদ (র.) একাধিক জায়গায় বলেছেন, যে সকল লোক রাসূলুল্লাহ (সা.) কে গালী-গালাজ করে অথবা কটাক্ষ করে তারা মুসলমান হোক বা কাফের হোক তাদেরকে অবশ্যই হত্যা করতে হবে। আমি মনে করি তাদেরকে তওবার সুযোগ না দিয়ে হত্যা করা হোক।’ [ আস সারেমুল মাসলূল আ’লা শাতিমির রাসূল সা.]

কাযী ইয়াদ রা. বলেন,যে সকল লোক রাসূলুল্লাহ (সা.) কে গালী-গালাজ করে অথবা কটাক্ষ করে তারা মুসলমান হোক বা কাফের হোক তাদেরকে অবশ্যই হত্যা করতে হবে। তার তাওবা কবুল হবে না। কেননা এটি শুধু রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে সম্পর্কিত বিষয়।’ [ আস সারেমুল মাসলূল আ’লা শাতিমির রাসূল সা.]

দুই. রাসূলের অবমাননাকারী যদি মুসলিম হয় তবে তার তাওবাহ গ্রহণযোগ্য হবে, অমুসলিম হলে হত্যা করা হবে । এক্ষেত্রে তাওবার শর্ত মানতে। এর পক্ষে যারা মত দিয়েছেন: ইমাম আবু হানিফা রা.এর মতে, রাসূলের অবমাননাকারী যদি মুসলিম হয় তবে তার তাওবাহ গ্রহণযোগ্য হবে, তাকে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি দিতে হবে। ইমাম শাফয়ী রা. এর মতে : রাসূলের অবমাননাকারী যদি মুসলিম হয় তবে তার তাওবাহ গ্রহণযোগ্য হবে।[আস সারেমুল মাসলূল আ’লা শাতিমির রাসূল সা.]

তিন. রাসূলের অবমাননাকারী যদি অমুসলিম হয়, আর সে ইসলাম কবুল করে তবে তার তাওবাহ গ্রহণযোগ্য হবে । ইমাম মালেক বলেন,‘আর যদি কোনো কাফের ঐ একই অপরাধ করে এবং পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করতে চায় সে ক্ষেত্রে দুটি মতামত রয়েছে। একটি হলো: সে ইসলাম কবুল করলে তাকে ক্ষমা করা হবে। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো, যদি ধরা পড়ার পূর্বেই নিজে সেচ্ছায় ধরা দেয় এবং তওবা করে। আরেকটি হলো: না! তাকেও ক্ষমা করা হবে না বরং হত্যা করা হবে।’ [ আত তালকীন ফী ফিকহিল মালেক, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ৫০৭]

আমাদের করণীয়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কটাক্ষ ও বিদ্রুপ করার মত জঘন্য অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পর নিশ্চুপ থাকার কোন সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে একজন ঈমানদার বান্দাহ হিসেবে প্রত্যেকরই যোগ্যতা অনুযায়ী ভূমিকা রাখতে হবে। যেসব করণীয় রয়েছে সেগুলো হলো :
এক. প্রতিবাদ করা : আমাদের প্রধান করণীয় হলো : যারা রাসূলের অবমাননা করে তাদের বিরুদ্ধে সামর্থ অনুযায়ী প্রতিবাদ করা। একজন মুসলিম কখনও এমন হতে পারে না যে, সে মহানবীর অবমাননা হওয়ার কথা জানার পরও নিশ্চুপ বসে থাকবে । কেননা এটি একটি মহা অন্যায় কাজ। আর ঈমানের লক্ষণ হলো অন্যায়ের প্রতিবাদ করা।
দুই. শাস্তির ব্যবস্থা করা : মহানবীর অবমাননাকারীদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করা ঈমানের দাবী। একশ্রেণির নামধারী মুসলিম তারা বলে এ বিচার আল্লাহ করবেন, অতএব আমাদের কিছুই করার দরকার নেই। ঈমানদার হিসেবে এ ধরণের কথা বলা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা রাসূল নিজেই তাকে অবমাননা করার শাস্তি কার্যকর করেছেন এবং সাহাবায়ে কিরামও তা বাস্তবায়ন করেছেন। তাই যে মহানবীর অবমাননা করে তাকে দুনিয়াতেই শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
তিন. জাতিকে সতর্ক করা : মহানবীর অবমাননা করার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে জাতিকে সতর্ক করা সময়ের দাবী। কেননা জেনে-না জেনে, বুঝে-না বুঝে নানানভাবে মহানবীর অবমাননা করা হচ্ছে। এর কারণে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। সেজন্য আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত জাতিকে সতর্ক করা।
চার. ঐক্যবদ্ধ হওয়া : রাসূলের অবমাননা বন্ধে ঈমানদার ব্যক্তিদের মধ্যে কোন বিরোধ থাকতে পারবে না। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নিজেদের মধ্যে কর্মপন্থা নিয়ে মতভেদ থাকতে পারে। কিন্তু রাসূলের অবমাননার মত ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মসূচি পালনে কোন ধরণের সংশয় রাখা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।
পাঁচ. আল্লাহর নিকট বেশি বেশি ক্ষমা চাওয়া : রাসূলের অবমাননা করার কারণে যে কোন সময় গোটা জাতির উপর আল্লাহর গযব আসতে পারে। সেজন্য আল্লাহর নিকট বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
ছয়. তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা : যারা অবমাননা করে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। এ বিষয়ে কুর‘আন মাজীদে বলা হয়েছে, “আর তিনি তো কিতাবে তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করা হচ্ছে এবং সেগুলো নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে, তাহলে তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় নিবিষ্ট হয়, তা না হলে তোমরাও তাদের মত হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদের সকলকে জাহান্নামে একত্রকারী।” [সূরা নিসা:১৪০]
সাত. রাসূলের সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করা : রাসূলের বিরুদ্ধে কোন অপপ্রচার এবং তাঁর মর্যাদার হানি করে এমন কোন কাজ পরিচালিত হলে উম্মাতের দায়িত্ব হলো তার সমস্ত শক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করা। আল্লাহ তা’আলা তাঁর সম্মানকে উচ্চকিত করেছেন। অতএব, তাকে যথযথ সম্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেক উম্মাতের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
আট. রাসূলের কটূক্তিকারীদের ঘৃণা করা : যারা রাসূলকে কটূক্তি করে তাদেরকে রাসূলের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে ঘৃণা করা ঈমানের দাবী। অনেকে রাসূলের উম্মাত দাবী করে কিন্তু রাসূলের শত্রুদের সাথে উঠা-বসা ও তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে, এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়
নয়. রাসূলের আদর্শ জাতির সামনে ব্যাপকভাবে তুলে ধরা : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের প্রিয় নেতা। তাঁর উম্মাত হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো তার আদর্শ জাতির সামনে তুলে ধরা।
দশ. নিজের অবস্থান স্পস্ট করা : আজকে অনেক মুসলিম নিজের অবস্থান কোন দিকে তা স্পস্ট করে না। যেহেতু কিছু লোক রাসুলের অবমাননাকারীর পক্ষাবলম্বন করেছে, সেহেতু নিজের অবস্থান কোন পক্ষে তা ঘোষনা দিতে হবে। কেননা রাসুলের অবমাননা হলে কোন ঈমানদার ব্যক্তির অবস্থান অস্পস্ট হতে পারে না। যে এমনটি করবে সে মুনাফিক।
এগার. সরকারের করণীয় : সরকার একটি রাষ্ট্রের পরিচালক এবং অভিভাবক। সরকারের অন্যতম কাজ হলো শিষ্টের লালন আর দুষ্টের দমন। অতএব সরকারের দায়িত্ব হলো যারা রাসূলের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছে তাদের সবাইকে এবং যারা তাদের সহযোগি তাদেরকেও গ্রেফতার করে বিচারের সস্মুখীন করা। কোন ধরণের অজুহাত তৈরি করে প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকা।

উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে এ কথা দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার যে, যারা আল্লাহকে অথবা আল্লাহর রাসূল সা. কে নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও ঠাট্রা-বিদ্রুপের মাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য করে, ইসলামী আইনে তাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। এ ব্যাপারে কুর’আন-হাদীসের অকাট্য প্রমাণসহ ইসলামের সকল মাযহাব ও দল-মত নির্বিশেষে সকলেরই ইজমা রয়েছে। রাসুলের অবমাননাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি না দেয়ার ফলে অপরাধীরা নির্বিঘেœ তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যেকোন সভ্য সমাজে এ ধরণের কাজ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই সরকারকে অনতিবিলম্বে রাসুলের অবমাননাকারীদেরকে মৃত্যদন্ড শাস্তির বিধান করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা সময়ের দাবী।

ইলমের ফযিলাত ও আলেমের মর্যাদা

-হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল

إن الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وصحبه أجمعين أما بعد:

ইলমের গুরুত্ব ও ফযিলাত
১. ইলম অর্জনের মাধ্যমে উত্তম সম্পদ লাভের বিশেষ সুযোগ
সম্পদ অর্জনের প্রতি প্রতিটি মানুষেরই বিশেষ আগ্রহ থাকে। আর ইলম অর্জনের মাধ্যমে উত্তম সম্পদ লাভের বিশেষ সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে উকবা ইবন আমের রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنْ يَغْدُوَ كُلَّ يَوْمٍ إِلَى بُطْحَانَ أَوْ إِلَى الْعَقِيقِ فَيَأْتِيَ مِنْهُ بِنَاقَتَيْنِ كَوْمَاوَيْنِ فِي غَيْرِ إِثْمٍ وَلَا قَطْعِ رَحِمٍ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ نُحِبُّ ذَلِكَ قَالَ أَفَلَا يَغْدُو أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَسْجِدِ فَيَعْلَمُ أَوْ يَقْرَأُ آيَتَيْنِ مِنْ كِتَابِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ خَيْرٌ لَهُ مِنْ نَاقَتَيْنِ وَثَلَاثٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ ثَلَاثٍ وَأَرْبَعٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَرْبَعٍ وَمِنْ أَعْدَادِهِنَّ مِنْ الْإِبِلِ
অর্থ : ‘‘তোমাদের কোন্ ব্যক্তির এটা পছন্দ যে, সে আল্লাহর অবাধ্যতা ছাড়াই এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট না করে বুতহান অথবা আকীক প্রান্তরে গিয়ে দু’টো বিশালকায় উট নিয়ে আসবে?’’ আমরা বললাম, আমাদের সবারই তা পছন্দ। তিনি বললেন, তোমাদের কেউ কোন সকালে মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কুরআন হতে দু’টি আয়াত পড়ে না বা শিক্ষা দেয় না? তাহলে সেটি তার জন্য দু’টি উট লাভ করার চেয়ে উত্তম হবে। তিনটি আয়াত তিনটি উট অপেক্ষা উত্তম। চারটি আয়াত চারটি উট অপেক্ষা উত্তম। অনুরূপ আয়াতের সংখ্যা অনুপাতে উটের সংখ্যা অপেক্ষা উত্তম।” [সহীহ মুসলিম : ১৩৩৬]

২. উত্তম জিহাদ হল ইলম অর্জন
জিহাদ অর্থ প্রচেষ্টা চালানো । বর্তমান সময়ে জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখতে হলে ইলম অর্জন খুবই জরুরী । আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জিহাদ হলো বিভিন্ন বিষয়ে ইলম অর্জন করা। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَلَا تُطِعِ الْكَافِرِينَ وَجَاهِدْهُمْ بِهِ جِهَادًا كَبِيرًا
অর্থ : ‘‘সুতরাং তুমি কাফিরদের আনুগত্য করো না এবং তুমি কুরআনের সাহায্যে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রাম (জিহাদ) কর।’’ [সূরা আল-ফুরকান : ৫২] ইবনুল কায়্যিম রহ. কুরআনের সাহায্যে জিহাদ করাকে বড় জিহাদ বলে উল্লেখ করেছেন। [মিফতাহু দারিস সাআদা : ১/৭০] এ বিষয়ে আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
جَاهِدُوا الْمُشْرِكِينَ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ وَأَلْسِنَتِكُم
অর্থ: তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে তোমাদের মাল,জীবন এবং ভাষা দ্বারা জিহাদ করো। [সুনান আবু দাউদ :২০৬]
৩. ইলম মানুষের অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করে
ইলম এমন একটি বিষয় যা মানুষের অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করে । এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ مِنْ قَبْلِهِ إِذَا يُتْلَى عَلَيْهِمْ يَخِرُّونَ لِلْأَذْقَانِ سُجَّدًا
অর্থ : ‘‘নিশ্চয় এর পূর্বে যাদেরকে ইলম দেয়া হয়েছে, তাদের কাছে যখন এটা পাঠ করা হয় তখন তারা সিজদাবনত হয়ে লুটিয়ে পড়ে।” [সূরা বনী ইসরাঈল : ১০৭]

৪. আমল করার পূর্বে ইলম অর্জন অপরিহার্য
আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদেরকে তার ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর তাই ইবাদাত পালনের পূর্বে এ বিষয়ে ইলম হাসিল করা জরুরী। তা নাহলে সহীহভাবে ইবাদাত পালন করা যাবে না। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ

অর্থ : ‘‘অতএব জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তুমি ক্ষমা চাও তোমার ও মুমিন নারীÑপুরুষদের ত্র“টি-বিচ্যুতির জন্য। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি এবং নিবাস সম্পর্কে অবগত রয়েছেন।” [সূরা মুহাম্মদ : ১৯]

৫. ইলম অর্জন জান্নাতে যাওয়ার পথে সহায়ক
জান্নাত হল মুত্তাকীনদের জন্য পরকালের আসল নিবাস। যা আল্লাহ তা‘আলা সৎকর্মশীলদের জন্য পুরস্কার হিসেবে প্রস্তুত রেখেছেন। একজন মুসলিমের জীবনের সবচেয়ে বড় সফলতা হলো জান্নাত পাওয়া । আর ইলম হাসিলের মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ হয়ে যায়। মা আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ: أَوْحَى إِلَيَّ أَنَّهُ مَنْ سَلَكَ مَسْلَكًا فِي طَلَبِ الْعِلْمِ: سَهَّلْتُ لَهُ طَرِيقَ الْجَنَّةِ،
অর্থ : ‘‘আল্লাহ আমার প্রতি ওহী করেছেন, যে ব্যক্তি ইলম অর্জনে কোনো রাস্তা অবলম্বন করে, আমি তার জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেই।” [বাইহাকী, শু‘আবুল ঈমান : ৫৩৬৭, সহীহ সনদে বর্ণিত]

৬. ইলম অর্জন করা ফরয
দীন ও দুনিয়া যাই হোক না কেন, ইলম ব্যতীত মানুষ কোন কিছুই অর্জন করতে পারে না। দীন ও দুনিয়ায় সফলতা লাভ করতে চাইলে ইলম অর্জ অতি জরুরী। তাই ইলম অর্জনকে ইসলামে ফরয করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ : طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ
অর্থ : আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ইলম অণে¦ষণ করা প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ফরজ। [সুনান ইবনে মাজাহ]

আলিমের মর্যাদা
১. আলিমগণ নবীগণের ওয়ারিশ
আল্লাহ তা‘আলার বান্দাদের মধ্যে প্রিয় হচ্ছেন নবীগণ। একজন সত্যিকারের আলিম নবীদের উত্তরাধীকারী হিসেবে মর্যাদা পাবার অধিকারী। এটি কতইনা সৌভাগ্যের বিষয়। তাইতো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলিমের মর্যাদা সম্পর্কে ইরশাদ করেন,
إِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلاَ دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ فَمَنْ أَخَذَ بِهِ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ
অর্থ : ‘‘আলিমগণ নবীদের উত্তরাধিকারী, আর নবীগণ দিরহাম ও দিনারের (বৈষয়িক কোনো সম্পদের) উত্তরাধিকার রেখে যাননি। তাঁরা উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে গেছেন ইলম। অতএব যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করেছে, সে বিপুল অংশ লাভ করেছে।’’ [সুনান আবু দাউদ : ৩৬৪৩]
২. মৃত্যুর পরও আলিমের আমল জারী থাকে
মানুষ মৃত্যুবরণ করার সঙ্গে সঙ্গে তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আলিমের আমল জারী থাকে। একজন আলিম জীবিত অবস্থায় ইলম বিতরণ করার কারণে অনেকে উপকৃত হয়েছেন, সেজন্য মৃত্যুবরণ করেও তার সওয়াব পাবেন তিনি। এ বিষয়ে আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةِ أَشْيَاءَ : مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ.
অর্থ : ‘‘মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি উৎস থেকে তা অব্যাহত থাকে : সাদাকায়ে জারিয়া, উপকারী ইলম অথবা নেক সন্তান যে তার জন্য দু‘আ কর।’ [সহীহ মুসলিম : ৪৩১০]
৩. আলিমের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়
কুরআর-সুন্নাহর ইলমে সমৃদ্ধ ব্যক্তির জন্য বড়ই সুসংবাদ যে, তাঁর জন্য আল্লাহর নিকট সকলেই দু‘আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করে। যেমন আনাস ইবন মালেক রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
صَاحِبُ الْعِلْمِ يَسْتَغْفِرُ لَهُ كُلُّ شَيْءٍ حَتَّى الْحُوتُ فِي الْبَحْرِ .
অর্থ : ‘ইলমের অধিকারী ব্যক্তির জন্য সব কিছুই মাগফিরাত বা ক্ষমা প্রার্থনা করে। এমনকি সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত।’’ [সহীহ মুসনাদ আবী ই‘আলা : ২/২৬০; সহীহ জামে‘ সগীর : ৩৭৫৩ কানযুল উম্মাল : ২৮৭৩৭]
৪. আলিমদের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশ লাভ করা অতি সুভাগ্যের বিষয়। এটা সকলের ভাগ্যে জুটে না। কিন্তু আলিমদের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশ রয়েছে। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ قَالَ : سَيَأْتِيكُمْ أَقْوَامٌ يَطْلُبُونَ الْعِلْمَ ، فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُمْ فَقُولُوا لَهُمْ : مَرْحَبًا مَرْحَبًا بِوَصِيَّةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ ، وَاقْنُوهُمْ.
অর্থ : ‘‘অচিরে তোমাদের সমীপে ইলম হাসিলের উদ্দেশ্যে নানা দল আসবে। তোমরা যখন তাদের দেখবে, বলবে স্বাগতম, স্বাগতম হে ওই সম্প্রদায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের ব্যাপারে সুপারিশ করেছেন। অতপর তোমরা তাদের ইলম শেখাবে।’’ [ইবন মাজা : ২৪৭, ‘হাসান’ সূত্রে বর্ণিত]

আলিমের পিতা-মাতার মর্যাদা
ইলম এমন একটি ফযিলাতপূর্ণ বিষয় যারাই এর সাথে সম্পৃক্ত হবেন, তারাই মর্যাদার অধিকারী হবেন। আলিম হওয়ার ক্ষেত্রে পিতা-মাতার অবদান অনেক। সেজন্য আলিমের পিতা-মাতা পিতা-মাতার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। সেগুলো হলো:
১. পিতা-মাতা পথপ্রদর্শনকারী হিসাবে সওয়াব পাবেন :
পিতা-মাতা সন্তানকে আলিম বানানোর জন্য লালন-পালন, অর্থ ব্যয় ও সময়দানসহ সামাজিক নানা প্রতকুলতা উপেক্ষা করে দীনি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়ে থাকেন। এর কারণে আলিম সন্তান যত ভাল কাজ করবেন, তার সওয়াবের অনুরুপ সওয়াব ভাল কাজের পথপ্রদর্শনকারী হিসাবে পিতা-মাতা পাবেন বলে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। আবু মাসউদ আল-আনসারী রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ
অর্থ: “ভাল কাজের পথপ্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে” [সহীহ মুসলিম : ৫১৩১]।
২. আলিমের পিতা-মাতার চক্ষু শীতল হবে:
একজন ইমানদার ব্যক্তি আল্লাহর নিকট দুআ করে নেক সন্তানের জন্য, যাকে দেখলে তার প্রাণ জুড়িয়ে যাবে। আর সত্যিকার একজন আলিম সন্তানের পক্ষেই সেটা সম্ভব। কুরআন মাজীদে এ দিকেই ইঙ্গিত দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
অর্থ : এবং যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্য আদর্শস্বরূপ কর। [সূরা :আল-ফুরকান : ৭৪]
৩. আলিমের পিতা-মাতা নেক সন্তানের কারণে মৃত্যূর পর ছাওয়াব পাবেন :
নেক সন্তান বলতে ইমানদার সন্তান রেখে যাওয়া। যারা মাতা-পিতা বেচে থাকা অবস্থায় তাদের অনুগত যেমনটি ছিল, তাদের মৃত্যুর পরও তারা মাতা-পিতার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যা একজন আলিম সন্তানই বেশি করে থাকে। আবু উমামাতা রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
أَرْبَعَةٌ تَجْرِى عَلَيْهِمْ أُجُورُهُمْ بَعْدَ الْمَوْتِ مُرَابِطٌ فِى سَبِيلِ اللَّهِ وَمَنْ عَمِلَ عَمَلاً أُجْرِىَ لَهُ مِثْلُ مَا عَمِلَ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَجْرُهَا لَهُ مَا جَرَتْ وَرَجُلٌ تَرَكَ وَلَدًا صَالِحًا فَهُوَ يَدْعُو لَهُ.
অর্থ: মানুষ মৃত্যুবরণ করার পর ৪ টি আমলের সওয়াব অব্যাহত থাকে: ১.যে ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দিল তার সওয়াব ২. ভাল কাজ চালু করার ফলে তাকে যারা অনুসরন করল তার সওয়াব ৩. যে ব্যক্তি এমন সদকাহ করলো, যা প্রবাহমান থাকে তার সওয়াব, ৪.এমন নেক সন্তান রেখে যাওয়া- যে তার জন্য দোয়া করে [মুসনাদ আহমাদ: ২২২৪৭]। এ বিষয়ে আরো হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : تُرْفَعُ لِلْمَيِّتِ بَعْدَ مَوْتِهِ دَرَجَتُهُ . فَيَقُولُ : أَيْ رَبِّ ، أَيُّ شَيْءٍ هَذِهِ ؟ فَيُقَالُ : وَلَدُكَ اسْتَغْفَرَ لَكَ.
অর্থ: আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মৃত্যুর পর কোন বান্দাহর মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে হে আমার রব, আমিতো এতো মর্যাদার আমল করিনি, কীভাবে এ আমল আসলো ? তখন বলা হবে, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় এ মর্যাদা তুমি পেয়েেেছা” [আলআদাবুল মুফরাদ:৩৬]।
৪. আনুগত্যশীল সন্তানের পিতা-মাতা হওয়ার গৌরব অর্জন :
প্রত্যেক পিতা-মাতাই চান যে, সন্তানেরা তাদের অনুগত হবে, খেদমাত করবে,তাদের সাথে নম্্র ব্যবহার করবে। একজন আলিম যেহেতু কুরআনের ধারক-বাহক, তাই এমন কাঙ্খিত সন্তান আলিমের পক্ষেই হওয়া বেশি সম্ভব। কেননা কুরাআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَآ أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا-وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
অর্থ : তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা। তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। [সূরা বনী ইসরাঈল : ২৩-২৪]

আলিমের বৈশিষ্ট্য
আলিমদের মর্যাদাকে যেমনিভাবে সমুন্নত করা হয়েছে, তেমনিভাবে তাদের বেশ কিছূ বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। আর সেগুলো হলো:
১. কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়া
একজন আলিম অবশ্যই কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞানে সমৃদ্ধ হবেন। তা নাহলে তিনি দীন ও দুনিয়ার সমস্যার সঠিক সমাধান দিতে পারবেন না। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ
অর্থ : “অবশ্যই আল্ল¬াহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়। যদিও তারা ইতঃপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল।” [সূরা আলে-ইমরান : ১৬৪]
২. দলীল-প্রমাণের ভিত্তিতে সমাধান দেয়ার যোগ্যতা থাকা
একজন আলিম অবশ্যই কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক দলীল-প্রমাণের ভিত্তিতে কথা বলবেন। মিথ্যা, বানেয়াট অবিশ্বাস্য কল্প-কাহিনী বলা থেকে সর্বদা বিরত থাকবেন। এ বিষয়ে জাবির বিন আবদুল্লাহ রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসে রাসূলূল্লাহ সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল¬াম বলেছেন,
إِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَخَيْرَ الْهَدْي هَدْيُ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم
অর্থ : “নিশ্চয় আল্লাহর কথা হলো উত্তম কথা, আর মুহাম্মাদ সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল¬ামের দেখানো পথ হলো উত্তম পথ ।” [সহীহ মুসলিম : ১৪৩৫]
৩. বক্তব্য অনুযায়ী আমল করা
ইলমের সাথে আমল একান্ত আবশ্যক বা অপরিহার্য্য। ইলম ব্যতীত আমল এবং আমল ব্যতীত ইলম কোনটাই উপকারী নয়। যে ইলমের সাথে আমল নেই, তা অজ্ঞতার পর্যায়ভূক্ত। একজন আলিমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তিনি যা বলবেন তার উপর আমল করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ – كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللَّهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ
অর্থ : “হে ঈমানদারগণ, তোমরা তা কেন বল, যা তোমরা কর না? তোমরা যা কর না, তা বলা আল্লাহর নিকট বড়ই ক্রোধের বিষয়।” [সূরা আসসফ : ০২]

৪. সুন্নাহর বাস্তব নমুনা হিসেবে পেশ করা
পোশাক-পরিচ্ছেদ, দাড়ি, চলা-ফেরা কথা-বার্তাসহ সকল কাজে একজন আলিম নিজেকে সুন্নাহর বাস্তব নমুনা হিসেবে উপস্থাপন করবেন। এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে স্পষ্ট ঘোষণা এসেছে,
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا
অর্থ : ‘‘এবং রাসূল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও।” [সূরা আল-হাশর :৭]
عَنْ عِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ مِنْ بَعْدِي وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ ”
অর্থ : ‘‘তোমাদের উচিৎ আমার সুন্নাত এবং খুলাফায়ে রাশিদিনের সুন্নাতকে অনুসরণ করো [শরহে মুশকিলুল আসার:১১৮৬]
বাংলাদেশে যোগ্য আলিমের প্রয়োজনীয়তা
আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ, আমাদের গর্ব। এই দেশেই প্রায় ১৬ কোটি মানুষের বসবাস। অধিকাংশ মানুষই ইসলাম প্রিয়। কিন্তু এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, বিভিন্ন সংস্থা ও মিডিয়ার ভূমিকায় দিন দিন মানুষ ইসলাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। বিশেষ করে মোবাইল ও ইন্টারনেটের সংস্কৃতি যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে ইসলাম থেকে দূরে সরানোর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানাবিধ অপকৌশল। তাই নানাবিধ কারণে যোগ্য আলিমের প্রয়োজনীয়তা অনস্বিকার্য।
১. জাতিকে সজাগ সতর্ক করা
বর্তমান এই বিশ্বের পেক্ষাপটে মুসলিম জাতি আজ নানাভাবে দীন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় একদল যোগ্য আলিমের খুবই প্রয়োজন। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِنْهُمْ طَائِفَةٌ لِيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنْذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ
অর্থ : “অতঃপর তাদের প্রতিটি দল থেকে কিছু লোক কেন বের হয় না, যাতে তারা দীনের গভীর জ্ঞান আহরণ করতে পারে এবং আপন সম্প্রদায় যখন তাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে, তখন তাদেরকে সতর্ক করতে পারে, যাতে তারা (গুনাহ থেকে) বেঁচে থাকে।” [ সূরা আত-তাওবাহ : ১২২]
২. দীন শিক্ষা দেয়া
আল্লাহ তা‘আলা দীন শিক্ষা করাকে ফরয করে দিয়েছেন। আর ঈমান, সালাত, সিয়াম, হাজ্জ, যাকাতসহ দীনের বিভিন্ন বিষয় শিক্ষা করার জন্য আলিমদের নিকটই যেতে হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মুয়ায বিন জাবালকে ইয়ামানে পাঠঅলেন, তখন বললেন,
إِنَّكَ تَقْدَمُ عَلَى قَوْمٍ أَهْلِ كِتَابٍ فَلْيَكُنْ أَوَّلَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَيْهِ عِبَادَةُ اللهِ فَإِذَا عَرَفُوا اللهَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي يَوْمِهِمْ وَلَيْلَتِهِمْ فَإِذَا فَعَلُوا فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ فَرَضَ عَلَيْهِمْ زَكَاةً مِنْ أَمْوَالِهِمْ (زَكَاةً تُؤْخَذُ مِنْ أَمْوَالِهِمْ) وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ فَإِذَا أَطَاعُوا بِهَا فَخُذْ مِنْهُمْ وَتَوَقَّ كَرَائِمَ أَمْوَالِ النَّاسِ
অর্থ : “তুমি এমন এক কাওমের কাছে যাচ্ছ যারা আহলে কিতাব। [যারা কোন আসমানী কিতাবে বিশ্বাসী] সর্ব প্রথম যে জিনিসের দিকে তুমি তাদেরকে আহ্বান জানাবে তা হচ্ছে, “লা-ইলাহ ইল্লাল্লাহুর সাক্ষ্য দান।” অন্য বর্ণনায় আছে, আল্লাহর ওয়াহদানিয়্যাত বা একত্ববাদের স্বীকৃতি প্রদান। এ বিষয়ে তারা যদি তোমার আনুগত্য করে তবে তাদেরকে জানিয়ে দিও যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তারা যদি তোমার কথা মেনে নেয় তবে তাদেরকে জানিয়ে দিও যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর যাকাত ফরয করে দিয়েছেন, যা বিত্তশালীদের কাছ থেকে নিয়ে গরীবদেরকে দেয়া হবে। তারা যদি এ ব্যাপারে তোমার আনুগত্য করে তবে তাদের উৎকৃষ্ট মালের ব্যাপারে তুমি খুব সাবধানে থাকবে।” [সহীহ বুখারি : ১৪৫৮]
৩. মাসআলা-মাসআলা জানা
একজন ঈমানদারের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই প্রয়োজন নানাবিধ বিষয়ের সমাধান। আর এ সমাধানের জন্য আলিমের বিকল্প নেই। এ প্রসঙ্গে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল র. বলেন
الناس محتاجون إلى العلم أكثر من حاجتهم إلى الطعام والشراب لأن الطعام والشراب يحتاج إليه في اليوم مرة أو مرتين ، والعلم يحتاج إليه بعدد الأنفاس”مفتاح دار السعادة” (১/৬৫-৬৬)
অর্থ : “মানুষ প্রতিদিন এক বা দুবার খাবার ও পান করার প্রতি মুখাপেক্ষী হয়, কিন্তু প্রতিক্ষণেই ইলমের প্রতি ধাপিত হতে হয়।” [মিফতাহু দারুস সাআদাহ ,১/৬৫-৬৬]
৪. জান্নাতের পথে চলা
একজন ঈমানদার বান্দার জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো জান্নাত। আর জান্নাতে যাওয়ার সঠিক পথ কোনটি তা জানার জন্য আলিমের প্রয়োজন। আর জান্নাতে পথে চলার ঘোষণা দিয়ে কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
قُلْ أَؤُنَبِّئُكُمْ بِخَيْرٍ مِنْ ذَلِكُمْ لِلَّذِينَ اتَّقَوْا عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَأَزْوَاجٌ مُطَهَّرَةٌ وَرِضْوَانٌ مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِالْعِبَادِ
অর্থ : “বল, ‘আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়েও উত্তম বস্তুর সংবাদ দেব? যারা তাকওয়া অর্জন করে, তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের নিকট জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয় নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর পবিত্র স্ত্রীগণ ও আল্ল¬াহর পক্ষ থেকে সন্তুষ্টি।’’ আর আল্ল¬াহ বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা। [সুরা আলে-ইমরান : ১৫]
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ইলম অর্জনের তাওফীক দিন । আমীন ।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হক

হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল

إن الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وصحبه أجمعين أما بعد :
আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির হেদায়েতের জন্য যুগে যুগে নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমাদের প্রিয় নবী মুহম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ নবী হিসেবে গোটা বিশ্ব মানবগোষ্ঠীর জন্য প্রেরণ করেছেন। তাই আমরা শেষ নবীর উম্মাত। রাসূলের উম্মাত হওয়া আল্লাহর এক বিরাট অনুগ্রহ। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آَيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ .
অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়। যদিও তারা ইতঃপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল। (সূরা আলে ইমরান-১৬৪)
উম্মাত হিসাবে আমাদের উপর তাঁর হক বা অধিকার রয়েছে । সে অধিকারগুলো কুরআন সুন্নাহর আলোকে আলোকপাত করা হলো
এক. ঈমান আনা
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অধিকারসমূহের মধ্যে প্রধানতম অধিকার হলো তাঁর প্রতি ঈমান আনা। যদি মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান না এনে পূর্ববর্তী সকল নবী রাসূলদের প্রতি ঈমান আনলেও কোন লাভ হবে না । তাঁর প্রতি ঈমান আনার অর্থ হলো:
ক) তাঁর রিসালাতের প্রতি ঈমান-অর্থাৎ তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল । কুরআনে এসেছে,
فَآَمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالنُّورِ الَّذِي أَنْزَلْنَا (سورة التغابن(৮ :
‘অতএব তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের এবং আমি যে নূর অবতীর্ণ করেছি তার প্রতি ঈমান আন। আর তোমরা যে আমল করছ আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।’ (সূরা আততাগাবুন:০৮)।
খ) তিনি শেষ নবী এবং তারপর কোন নবী আসবে না। সূরা আহযাবের ৪০ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا
‘মুহাম্মাদ তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নয়; তবে আল্ল¬াহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী। আর আল্ল¬াহ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ।’
গ) তার রিসালাত পরিপূর্ণ এ কথা অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে। সূরা মায়িদার ৩ নং আয়াতে এসেছে,
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا فَمَنِ اضْطُرَّ فِي مَخْمَصَةٍ غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِإِثْمٍ فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
‘.. আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিআমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে।’
ঘ) তার প্রতি ঈমান আনার সাথে কোন প্রকার সন্দেহ থাকতে পারবে না। সূরা হুজুরাতের ১৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آَمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ
‘মুমিন কেবল তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, তারপর সন্দেহ পোষণ করেনি। আর আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে নিজেদের সম্পদ ও জীবন দিয়ে। এরাই সত্যনিষ্ঠ।’

দুই. আনুগত্য করা
রাসূলের অন্যতম অধিকার হলো তাঁর আনুগত্য করা। ঈমান আনার সাথে সাথে তাঁর আনুগত্যও করতে হবে ।
ক. তিনি যেসব বিষয়ে আদেশ করেছেন তা পালন করা এবং যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা। কুরআনে এসেছে,
(وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ )
‘এবং রাসূল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও (সূরা হাশর:৭)।’
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : لا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يَكُونَ هَوَاهُ تَبَعًا لِمَا جِئْتُ بِهِ ”
আবদুল্লাহ বিন আমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমাদেও প্রবৃত্তি আমার অনুসরন করে। (সারহুস সুন্নাহ)
খ. জীবনের সকল বিষয়ে তার আনুগত্য করতে হবে। সূরা আননিসার ৬৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا (৬৫)
‘অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়।’
গ.তাঁর আদেশ অমান্য করলে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে । সূরা আন-নূরের ৬৩ নং আয়াতে এসেছে,
..فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
‘ … অতএব যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে।’
ঘ. আল্লাহর ভালবাসা পাওয়ার জন্যও তাকে অনুসরণ করতে হবে । কুরআনের ঘোষণা,
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ (৩১) قُلْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَالرَّسُولَ فإِن تَوَلَّوْاْ فَإِنَّ اللّهَ لاَ يُحِبُّ الْكَافِرِينَ) . (৩২) آل عمران
বল, ‘যদি তোমরা আল্ল¬াহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্ল¬াহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্ল¬াহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’(সূরা আলে ইমরান:৩১)।’
ঙ.তাকে অনুসরণ করার মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য করা হয়ে থাকে । সূরা আননিসার ৮০ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ وَمَنْ تَوَلَّى فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا
‘যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, তবে আমি তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ করিনি।’
চ. যে ঈমান আনার ঘোষনা দেয়ার পরও তাকে অনুসরন করে না তাকে জাহান্নামে যেতে হবে।
সূরা আননিসার ১৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِينٌ
‘আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে এবং তাঁর সীমারেখা লঙ্ঘন করে আল্লাহ তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর তার জন্যই রয়েছে অপমানজনক আযাব।’
ছ. আর যে ব্যক্তি রাসূলের অনুসরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সূরা নিসার ১৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
‘এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এটা মহা সফলতা।’
জ. যারা মুখে রাসূলের প্রতি ঈমান আনার ঘোষণা দিয়ে তাকে সকল ক্ষেত্রে অনুসরণ করবে না সে তার দাবীতে মিথ্যাবাদী হিসাবে বিবেচিত হবে এবং তাদের পরিনতি মুনাফেকদের মত হবে । কারণ তারা মুখে রাসূলের প্রতি ঈমান আনার ঘোষণা দিলেও তার আনুগত্য করত না।
কুরআনে এসেছে,
إِذَا جَاءَكَ الْمُنَافِقُونَ قَالُوا نَشْهَدُ إِنَّكَ لَرَسُولُ اللَّهِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِنَّكَ لَرَسُولُهُ وَاللَّهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ
‘যখন তোমার কাছে মুনাফিকরা আসে, তখন বলে, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় আপনি আল্লাহর রাসূল এবং আল্লাহ জানেন যে, অবশ্যই তুমি তাঁর রাসূল। আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, অবশ্যই মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী (সূরা মুনাফিকুন:১)।’
إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَلَنْ تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا
নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। আর তুমি কখনও তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী পাবে না।(সূরা আননিসা-১৪৫)
তিন. মহানবীকে ভালবাসা
আমরা যারা নিজেদেরকে মহানবীর উম্মাত দাবী করি উম্মাত হিসাবে তাঁর অধিকার হলো আন্তরিকভাবে ভালবাসা। যে ব্যক্তির মধ্যে রাসূলের ভালবাসা থাকবে না যে কোন দিন মুমিন হতে পারবে না।
ক. সবার চেয়ে তাকে বেশি ভালবাসতে হবে:
عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
ইমাম বুখারী ও মুসলিম আনাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার সন্তান, পিতা ও সমগ্র মানুষ হতে প্রিয়তম হবো।’ অর্থাৎ সবার চেয়ে তাকে বেশি ভালবাসতে হবে।
খ.নিজের জীবনের চেয়েও বেশী ভালবাসতে হবে: কুরআনে বলা হয়েছে,
النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِم
‘নবী, মুমিনদের কাছে তাদের নিজদের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর’ (সূরা আলআহযাব ৬)।

قُلْ إِنْ كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّى يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ (২৪)
‘বল, ‘তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের সে সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, আর সে ব্যবসা যার মন্দা হওয়ার আশঙ্কা তোমরা করছ এবং সে বাসস্থান, যা তোমরা পছন্দ করছ, যদি তোমাদের কাছে অধিক প্রিয় হয় আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর পথে জিহাদ করার চেয়ে, তবে তোমরা অপেক্ষা কর আল্লাহ তাঁর নির্দেশ নিয়ে আসা পর্যন্ত’। আর আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হিদায়াত দার করেন না (আত-তাওবাহ:২৪)।’

قَالَ حَدَّثَنِي أَبُو عَقِيلٍ زُهْرَةُ بْنُ مَعْبَدٍ أَنَّهُ سَمِعَ جَدَّهُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ هِشَامٍ قَالَ
كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ آخِذٌ بِيَدِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فَقَالَ لَهُ عُمَرُ يَا رَسُولَ اللَّهِ لَأَنْتَ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ إِلَّا مِنْ نَفْسِي فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْكَ مِنْ نَفْسِكَ فَقَالَ لَهُ عُمَرُ فَإِنَّهُ الْآنَ وَاللَّهِ لَأَنْتَ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ نَفْسِي فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْآنَ يَا عُمَرُ
উমার রাদি আল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একদা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমার নিকট আমার নিজের জীবন বাদে সকল বিষয়ের চেয়ে অধিক প্রিয়। উত্তরে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, আমার আত্মা যার কবজায় তাঁর কসম, আমাকে তোমার নিজের জীবন থেকেও বেশি ভালবাসতে হবে । উমার রাদি আল্লাহু আনহু এবার বললেন, আল্লাহর কসম, নিশ্চয় আপনি এখন আমার নিকট আমার নিজের জীবনের চেয়েও অধিক প্রিয়। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখন হয়েছে হে উমর (সহীহ বুখারী)।’

চার. রাসূলের পক্ষাবলম্বন করা ও তাকে সাহায্য করা
উম্মাতের উপর অন্যতম অধিকার হলো রাসূলের পক্ষাবলম্বন করা। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবিত থাকা অবস্থায় সাহাবীগণ তাঁর পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। রাসূলের বিরুদ্ধে কোন অপপ্রচার এবং তাঁর মর্যাদার হানি করে এমন কোন কাজ পরিচালিত হলে উম্মাতের দায়িত্ব হলো তার সমস্ত শক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করা। তাকে সাহায্য করা অর্থ তাঁর সুন্নাহকে প্রতিষ্ঠিত করা, তার উম্মতকে সাহায্য করা।
عن أبي هريرة رضي الله عنه : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال : كل أمتي يدخلون الجنة إلا من أبى قيل : يا رسول الله و من يأبى قال : من عصاني فقد أبى
আবূ হুরায়রা রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে আমাকে অস্বীকার করবে সে ব্যাতীত আমার প্রত্যেক উম্মত জন্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাবায়ে কিরাম প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, কে অস্বীকারকারী হবে? উত্তরে নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেলেন, যে আমার পক্ষ ত্যাগ করেছে সেই অস্বীকারকারী’ (মুসতাদরিক লিলহাকিম)।

পাঁচ. মহনবীর দাওয়াতী কাজে নিয়োজিত হওয়া
আল্লাহ তায়ালা রাসূলকে দায়ী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। তাঁর উম্মাতের অন্যতম কাজ হলো দাওয়াতী কাজে আত্ম-নিয়োগ করা। কুরআনে এসেছে,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا (৪৫) وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرًا (৪৬)
‘হে নবী, আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। আর আল্ল¬াহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারী ও আলোকদীপ্ত প্রদীপ হিসেবে’ (সূরা আলআহযাব: ৪৫ ও ৪৬)। কুরআন মাজীদে আল্লাহর পথে দাওয়াত দান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ (১০৮)
‘বল, ‘এটা আমার পথ। আমি জেনে-বুঝে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেই এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও। আর আল্লাহ পবিত্র মহান এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (সূরা ইউসুফ: ১০৮)। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيةً ‘একটি বাণী হলেও আমার পক্ষ থেকে পৌঁছিয়ে দাও।’(সহীহ বুখারী ও মুসলিম)। আর দাওয়াতী কাজের চেয়ে উত্তম কাজ আর নেই । এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে,
لَأَنْ يَهْدِيَ اللهُ بِكَ رَجُلاً وَاحِدًا، خَيْرٌ لَكَ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ
আল্লাহ যদি তোমার মাধ্যমে একজন মাত্র ব্যক্তিকেও হিদায়াত দান করেন তা হবে তোমার জন্য লাল উট থেকেও উত্তম (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)।
ছয়.যথাযথ সম্মান করা
আল্লাহ তায়ালা তাঁর সম্মানকে উচ্চকিত করেছেন। অতএব, তাকে যথযথ সম্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেক উম্মাতের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সূরা ফাতহের ৮ ও ৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا ﴿৮﴾ لِتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ وَتُسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا ﴿৯﴾.
‘নিশ্চয় আমি তোমাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে। (হে মুমিনগণ!) যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, তাকে সাহায্য কর ও সম্মান কর। আর আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা কর সকাল-সন্ধায়।’ সাহাবায়ে কিরাম রাসুলকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন। যখন কুরআনের সূরা হুজুরাতের ২ নং আয়াত আবতীর্ণ হলো,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَنْ تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تَشْعُرُونَ
হে ঈমানদারগণ, তোমরা নবীর আওয়াজের উপর তোমাদের আওয়াজ উঁচু করো না এবং তোমরা নিজেরা পরস্পর যেমন উচ্চস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরকম উচ্চস্বরে কথা বলো না। এ আশঙ্কায় যে তোমাদের সকল আমলÑনিষ্ফল হয়ে যাবে অথচ তোমরা উপলব্ধিও করতে পারবে না।’ আবু বকর রাদিআল্লাহু আনহু বললেন,আল্লঅহর কসম, আমি নিতান্তই আপনার সাথে ক্ষীণ আওয়াজ ব্যতিত কথা বলব না।
সাত.তাঁর প্রতি দরূদ পড়া
আল্ল¬াহ তায়ালা তার নবীর প্রতি সালাত পাঠের নির্দেশ প্রদান করেছেন। সূরা আলআহযাবের ৫৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে, নিশ্চয় আল্ল¬াহ (ঊর্ধ্ব জগতে ফেরেশতাদের মধ্যে) নবীর প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দো‘আ করে।
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا (৫৬)
হে মুমিনগণ, তোমরাও নবীর উপর দরূদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’ আনাস ইবনে মালিক রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তার উপর দশটি রহমাত নাযিল করবেন, দশটি গুনাহ মুছে দেবেন এবং দশটি মর্যাদায় ভূষিত করবেন। (সুনান নাছায়ী)
قَال رَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ ذُكِرْتُ عِنْدَه فَلَمْ يُصَلّ عَلَيَّ” [رواه مسلم[
ঐ ব্যক্তি অপদস্থ হল, যার কাছে আমি আলোচতি হলাম অথচ সে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করল না।
আট. তাঁর বন্ধুদের ভালবাসা এবং শত্র“দের ঘৃণা করা
উম্মাতের উপর রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম হক রয়েছে যে,তারা নবীর বন্ধুদের ভালবাসবে এবং শত্র“দের ঘৃণা করবে। অনেকে রাসুলের উম্মাত দাবী করে কিন্তু রাসুলের বন্ধুদেরকে ভালবাসে না এবং তাদের সাথে চলাফেরাও করে না। পক্ষান্তরে রাসুলের শত্র“দের সাথে উঠা-বসা ও তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে, এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।কুরআনের ঘোষনা হলো,
لَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آَبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ أُولَئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُمْ بِرُوحٍ مِنْهُ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ أُولَئِكَ حِزْبُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
‘তুমি আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী এমন কোন সম্প্রদায় পাবে না যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচারীদের ভালবাসে। হোক না এ বিরুদ্ধাচারীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা তাদের জ্ঞাতি-গোত্র’ (সূরা মুজাদালাহ : ২২)।
উল্লেখিত হক বা অধিকারসমূহ প্রত্যেকটিই আমাদেরকে পালন করতে হবে। আংশিক পালন করার কোন সুযোগ নেই। কুরআনের ঘোষনা,
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآَخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا
‘নিশ্চয় তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর মাঝেই রয়েছে উত্তম আদর্শ, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহ তায়ালাকে অধিক স্মরণ করে’ (সূরা আহযাব : ২১)। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমাদের প্রিয়নবীর প্রত্যেকটি হক যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দিন। আমীন।
وصلى الله على نبينا محمد وعلي اله وأصحابه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين
وأخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين