দুআ কবুলের অনুকূল সময়

হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল

১. আযানের সময়
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : ্র ثِنْتَانِ لاَ تُرَدَّانِ أَوْ قَلَّمَا تُرَدَّانِ : الدُّعَاءُ عِنْدَ النِّدَاءِ وَعِنْدَ الْبَأْسِ حِينَ يُلْحِمُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا
অর্থ: সাহল বিন সাআদ রাদিআল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দুটো সময় এমন যাতে দুআ ফেরত দেয়া হয় না অথবা খুব কম ফেরত দেয়া হয়। আযানের সময়ের দুআ এবং যখন যুদ্ধের জন্য মুজাহিদগণ শক্রের মুখোমুখি হন। [সুনান আবু দাউদ:২৫৪৬, সহীহ ]
২. যুদ্ধের ময়দানে যখন মুজাহিদগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اثْنَتَانِ لاَ تُرَدَّانِ أَوْ قَلَّ مَا تُرَدَّانِ الدُّعَاءُ عِنْدَ النِّدَاءِ ، وَعِنْدَ الْبَأْسِ حِينَ يَلْتَحِمُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا
অর্থ: সাহল বিন সাআদ রাদিআল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : দুটো সময় এমন যাতে দুআ ফেরত দেয়া হয় না । আযানের সময়ের দুআ এবং যখন যুদ্ধের জন্য মুজাহিদগণ শক্রের মুখোমুখি হন। [সহীহ ইবন খুযাইমাহ: ৪১৯]
৩. আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ , قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّ الدُّعَاءَ لاَ يُرَدُّ بَيْنَ الأَذَانِ وَالإِقَامَةِ , فَادْعُوا
অর্থ: আনাস বিন মালিক রাদিআল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ে দুআ ফেরত দেয়া হয় না। সুতরাং তোমরা দুআ কর। [মুসনাদ আহমদ: ১২৬০৬, সহীহ]
৪. সিজদার মধ্যে
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ
অর্থ: আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয় যখন সে সেজদারত থাকে। সুতরাং তোমরা এ সময় বেশি করে দুআ কর। [সহীহ মুসলিম :১১১১]

৫. ফরজ সালাতের শেষে
عَنْ أَبِى أُمَامَةَ قَالَ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَىُّ الدُّعَاءِ أَسْمَعُ قَالَ ্র جَوْفُ اللَّيْلِ الآخِرُ وَدُبُرَ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوبَاتِ
অর্থ: আবু উমামাতা রাদিআল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল : কোন দুআ সবচেয়ে বেশি কবুল করা হয় ? তিনি বললেন, শেষ রাতে এবং ফরজ সালাতের শেষ ভাগে। [ সুনান আত তিরমীযি: ৩৪৯৯, হাসান]

৬. জুমআর দিনের শেষ অংশে :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
يَوْمُ الْجُمُعَةِ اثْنَتَا عَشْرَةَ سَاعَةً ، وَلاَ يُوجَدُ عَبْدٌ مُسْلِمٌ يَسْأَلُ اللَّهَ شَيْئًا إِلاَّ آتَاهُ اللَّهُ ، فَالْتَمِسُوهَا آخِرَ السَّاعَةِ بَعْدَ الْعَصْرِ
অর্থ: জুমআর দিন বারটি ঘন্টা। এর মধ্যে এমন একটি সময় আছে, সে সময় একজন মুসলিম বান্দা যা আল্লাহর কাছে চায়, তা-ই তিনি দিয়ে দেন। তোমরা সে সময়টি আছরের পর দিনের শেষ অংশে তালাশ কর। [আবু সুনান নাসায়ী:১৩৮৯, সহীহ]
৭. রাতের শেষ তৃতীয়াংশে :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : يَتَنَزَّلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى
ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ فَيَقُولُ مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَه
অর্থ: আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমাদের প্রতিপালক প্রতি রাতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন, যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে। তখন তিনি বলেন : কে আছে আমার কাছে দুআ করবে আমি কবুল করব? কে আমার কাছে তার যা দরকার প্রার্থনা করবে আমি তাকে তা দিয়ে দেব ? কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি ক্ষমা করে দেব।[সহীহ আলবুখারী:৭৪৯৪]
৮. বৃষ্টি বর্ষণের সময়:
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : ثِنْتَانِ لاَ تُرَدَّانِ : الدُّعَاءُ عِنْدَ النِّدَاءِ وَتحت المطر
অর্থ: সাহল বিন সাআদ রাদিআল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : দুটো সময় এমন যাতে দুআ ফেরত দেয়া হয় না । আযানের সময়ের দুআ এবং বৃষ্টি বর্ষণের সময় । [সহীহ আলজা‘মে: ৩০৬৮]
৯. লাইলাতুল কদরে :
আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহু বললেন ঃ হে আল্লাহর নবী ! যদি আমি লাইলাতুল কদর পেয়ে যাই তবে কি বলব ? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, বলবে ঃ
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّى
“হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।”
[সুনান আততিরমীযি : ৩৫১৩, সহীহ]

১০. ইফতারের সময় :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ للهِ تَعَالَى عِنْدَ كُلِّ فِطْرٍ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ، وَذَلِكَ كُلّ لَيْلَةٍ
অর্থ: ‘ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়াটি রমাদানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে’। [আল জামিউস সাগীর : ৩৯৩৩]
১১. তাওয়াফের সময় :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ السَّائِبِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ بَيْنَ الرُّكْنِ الْيَمَانِي وَالْحَجَرِ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
অর্থ: আবদুল্লাহ বিন সায়িব রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হাজরে আসওয়াদ এবং রুকনে ইয়ামানীর মধ্যবর্তী স্থানে এই দুআ বলতে শুনেছি,
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
[মুসনাদ আহমাদ: ১৫৪৩৫, হাসান]

আলকুরআনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণাবলী

উম্মে মাবরুর

إن الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وصحبه أجمعين أما بعد :
আল্লাহ তা‘আলা সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব আলকুরআনকে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অবতীর্ণ করেছেন। এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বযুগের, সর্বকালের, সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। যার মধ্যে রয়েছে সকল গুণের সমাহার। সেই নবীর গুণাবলী সম্পর্কে কুরআন মাজীদে যা বলা হয়েছে তা নি¤েœ উল্লেখ করা হলো :

১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমিন বান্দার জন্য বড় অনুগ্রহ : আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করে মুমিনদের উপর বিরাট অনুগ্রহ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آَيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ .
অর্থ : “অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়। যদিও তারা ইতঃপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল। [সূরা আলে ইমরান : ১৬৪]

২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্ববাসীর জন্য প্রেরিত রাসূল : অন্যান্য নবীগণ তাদের কওম বা জাতির নিকট প্রেরিত হয়েছিলেন কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্ববাসীর জন্য প্রেরিত রাসূল । আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ لا إِلَهَ إِلاَّ هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ فَآمِنُواْ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَكَلِمَاتِهِ وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
অর্থ : “বল, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর রাসূল, যার রয়েছে আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব। তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু দেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আন ও তাঁর প্রেরিত উম্মী নবীর প্রতি, যে আল্লাহ ও তাঁর বাণীসমূহের প্রতি ঈমান রাখে। আর তোমরা তার অনুসরণ কর, আশা করা যায়, তোমরা হিদায়াত লাভ করবে। [ সূরা আল-আরাফ : ১৫৮]

৩. তিনি ঈমানদার বান্দাদের প্রতি স্নেহশীল : তিনি এমন একজন রাসূল যিনি ঈমানদার বান্দাদের প্রতি স্নেহশীল ও কল্যাণকামী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
অর্থ : “নিশ্চয় তোমাদের নিজদের মধ্য থেকে তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছেন, তা তার জন্য কষ্টদায়ক যা তোমাদেরকে পীড়া দেয়। তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, পরম দয়ালু। [সূরা আত-তাওবাহ : ১২৮]

৪. তিনি শেষ নবী : তার মাধ্যমে নবুওয়াতের সমাপ্তি ঘটানো হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا
অর্থ : “মুহাম্মাদ তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নয়; তবে আল্ল¬াহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী। আর আল্ল¬াহ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ।” [সূরা আল-আহযাব : ৪০]

৫. আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারক : আল্লাহ তা‘আলা মহানবী মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিচারক হিসাবে মনোনিত করেছেন । আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ حَتَّىَ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لاَ يَجِدُواْ فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسْلِيمًا ”
অর্থ : “অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়।” [ সূরা আন-নিসা : ৬৫]

৬. তাঁর সিদ্ধান্ত অমান্য করার সুযোগ নেই : তিনি যে সিদ্ধান্ত দেন সে বিষয়ে কোন এদিক-সেদিক করার কোন সুযোগ নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلالا مُّبِينًا
অর্থ : “আর আল্ল¬াহ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্ল¬াহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।” [সূরা আল-আহযাব : ৩৬]

৭. তিনি উত্তম চরিত্রের অধিকারী : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বোত্তম চরিত্রের উজ্জল দৃষ্টান্ত স্বরূপ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ
অর্থ : “আর নিশ্চয় তুমি মহান চরিত্রের উপর অধিষ্ঠিত।” [সূরা আল-কালাম : ৪]
৮. তাকে অনুসরণ আল্লাহকে মুহাব্বাত করার শামিল : আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করে মুমিনদের উপর বিরাট অনুগ্রহ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
অর্থ : “বল, ‘যদি তোমরা আল্ল¬াহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্ল¬াহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। [সূরা আলে ইমরান : ৩১]

৯. সকল ক্ষেত্রে তিনি আমাদের আদর্শ : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জীবন চলার সকল ক্ষেত্রে উত্তম আদর্শ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا
অর্থ : “অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্ল¬াহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। তাদের জন্য যারা আল্ল¬াহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্ল¬াহকে অধিক স্মরণ করে।” [সূরা আহযাব : ২১]

১০. তিনি আল্লাহর একজন বান্দাহ বা দাস : নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর একজন বান্দা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَأَنَّهُ لَمَّا قَامَ عَبْدُ اللَّهِ يَدْعُوهُ كَادُوا يَكُونُونَ عَلَيْهِ لِبَدًا

অর্থ : “আর নিশ্চয় আল্লাহর বান্দা যখন তাঁকে ডাকার জন্য দাঁড়াল, তখন তারা তার নিকট ভিড় জমাল।” [সূরা আল-জিন]

১১. তিনি অল্লাহর পক্ষ থেকে দলীল : মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দলীল হিসেবে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُم بُرْهَانٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَأَنزَلْنَا إِلَيْكُمْ نُورًا مُّبِينًا
অর্থ : “হে মানুষ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট প্রমাণ এসেছে এবং আমি তোমাদের নিকট স্পষ্ট আলো নাযিল করেছি।” [ সূরা আন-নিসা : ১৭৪]
১২. তিনি একজন সম্মানিত রাসূল : মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের একজন সম্মানিত রাসূল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّهُ لَقَوْلُ رَسُولٍ كَرِيمٍ
অর্থ : “নিশ্চয়ই এটি এক সম্মানিত রাসূলের বাণী।” [সূরা আল-হাক্কাহ : ৪০]

১৩. তিনি বিশ্ববাসীর জন্য রহমাত: মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লমকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য রহমাত সরূপ প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلاَّ رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
অর্থ : “আর আমি তো তোমাকে সৃষ্টিকুলের জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি।” [সূরা আম্বিয়া : ১০৭]

১৪. তিনি দায়ী ইলাল্লাহ : মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন দায়ী ইলাল্লাহ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا – وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُّنِيرًا
অর্থ : “হে নবী, আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। আর আল্ল¬াহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারী ও আলোকদীপ্ত প্রদীপ হিসেবে। [ সূরা আল-আহযাব : ৪৫-৪৬]

১৫. তার উপর সালাম প্রেরণ উম্মাতের জন্য বাধ্যতামূলক :
আল্ল¬াহ তা‘আলা তার নবীর প্রতি সালাত পাঠের নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
অর্থ : “নিশ্চয় আল্ল¬াহ (ঊর্ধ্ব জগতে ফেরেশতাদের মধ্যে) নবীর প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দু‘আ করে। হে মুমিনগণ, তোমরাও নবীর উপর দরূদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।” [সূরা আল-আহযাব : ৫৬]
১৬. তিনি নামাযীদের ইমাম : মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন নামাযীদের ইমাম । আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَإِذَا كُنْتَ فِيهِمْ فَأَقَمْتَ لَهُمُ الصَّلَاةَ فَلْتَقُمْ طَائِفَةٌ مِنْهُمْ مَعَكَ وَلْيَأْخُذُوا أَسْلِحَتَهُمْ فَإِذَا سَجَدُوا فَلْيَكُونُوا مِنْ وَرَائِكُمْ وَلْتَأْتِ طَائِفَةٌ أُخْرَى لَمْ يُصَلُّوا فَلْيُصَلُّوا مَعَكَ وَلْيَأْخُذُوا حِذْرَهُمْ وَأَسْلِحَتَهُمْ
অর্থ : “আর যখন তুমি তাদের মধ্যে থাকবে। অতঃপর তাদের জন্য সালাত কায়েম করবে, তখন যেন তাদের মধ্য থেকে একদল তোমার সাথে দাঁড়ায় এবং তারা তাদের অস্ত্র ধারণ করে। এরপর যখন সিজদা করে ফেলবে, তখন তারা যেন তোমাদের পেছনে অবস্থান নেয়। আর অপর একটি দল যারা সালাত আদায় করেনি তারা যেন তোমার সাথে এসে সালাত আদায় করে এবং তারা যেন তাদের সতর্কতা অবলম্বন ও অস্ত্র ধারণ করে।” [সূরা আন নিসা : ১০২]
১৭. তিনি কোমল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন : মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন বিনয়ী, কোমল এবং নিরহংকার। বাদশাহর সামনে তার সম্মানে তাদের সেবক ও গুণগ্রাহিরা যে রকম বিনয়াবনত ভঙ্গিতে দাড়িয়ে থাকে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সম্মানে সাহাবাদের এরূপ করতে নিষেধ করতেন। সাহাবায়ে কেরামদের সামনে তিনি সাধারণ মানুষের মতই বসতেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
অর্থ : “আর মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তুমি তোমার বাহুকে অবনত কর।” [সূরা আশ্-শু‘আরা : ২১৫]

১৮. তিনি ছিলেন সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী : মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতের জন্যে সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا
অর্থ : “হে নবী, আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে।” [সূরা আহযাব : ৪৫]

১৯. তিনি প্রতিদান প্রত্যাশী ছিলেন না : মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যপথ অবলম্বনকারীদের কাছে কোন প্রতিদান বা বিনিময় প্রত্যাশা করেননি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
قُلْ مَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِلَّا مَنْ شَاءَ أَنْ يَتَّخِذَ إِلَى رَبِّهِ سَبِيلًا
অর্থ : ‘‘বল, ‘আমি এর উপর তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না। তবে যার ইচ্ছা তার রবের দিকে পথ অবলম্বন করুক।’’ [সূরা ফুরকান : ৫৭]
২০. তিনি মনগড়া কোন কথা বলতেন না : মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কোন মনগড়া মিথ্যা বানোয়াট কথা বলতেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمْ وَمَا غَوَى (২) وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى
অর্থ “তোমাদের সঙ্গী পথভ্রষ্ট হয়নি এবং বিপথগামীও হয়নি। আর সে মনগড়া কথা বলে না।” [সূরা আন্-নাজ্ম : ২-৩]
২১. তিনি ছিলেন মিল্লাতে ইবরাহীমের অনুসারী : রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মিল্লাতে ইবরাহীমের অনুসারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
ثُمَّ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ أَنِ اتَّبِعْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِين
অর্থ : “অতঃপর (হে নবী) আমি আপনার ওপর ওহী পাঠালাম যে, আপনি একনিষ্ঠভাবে ইবরাহীমের মিল্লাত অনুসরণ করুন; আর সে কখনো মুশরিকদের দলভুক্ত ছিল না।” [সূরা নাহল : ১২৩]
২২. অন্য সব উম্মতের সাক্ষী : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যসব উম্মতের সাক্ষী হিসেবে আবির্ভূত হন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا

অর্থ : “আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত বানিয়েছি, যাতে তোমরা মানুষের উপর সাক্ষী হও এবং রাসূল সাক্ষী হন তোমাদের উপর।” [সূরা বাকারা : ১৪৩]
২৩. ফেরেশতা দর্শন প্রাপ্ত নবী : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন ফেরেশতা দর্শন প্রাপ্ত নবী। আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
ذُو مِرَّةٍ فَاسْتَوَى (৬) وَهُوَ بِالْأُفُقِ الْأَعْلَى (৭) ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّى (৮) فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى (৯) فَأَوْحَى إِلَى عَبْدِهِ مَا أَوْحَى (১০) مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى (১১) أَفَتُمَارُونَهُ عَلَى مَا يَرَى (১২) وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَى (১৩) عِنْدَ سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى (১৪) عِنْدَهَا جَنَّةُ الْمَأْوَى (১৫) إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَى (১৬) مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَا طَغَى (১৭) لَقَدْ رَأَى مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَى
অর্থ : “প্রজ্ঞার অধিকারী। অতঃপর সে স্থির হয়েছিল, তখন সে ঊর্ধ্ব দিগন্তে। তারপর সে নিকটবর্তী হল, অতঃপর আরো কাছে এল। তখন সে নৈকট্য ছিল দু’ ধনুকের পরিমাণ, অথবা তারও কম। অতঃপর তিনি তাঁর বান্দার প্রতি যা ওহী করার তা ওহী করলেন। সে যা দেখেছে, অন্তকরণ সে সম্পর্কে মিথ্যা বলেনি। সে যা দেখেছে, সে সম্পর্কে তোমরা কি তার সাথে বিতর্ক করবে? আর সে তো তাকে আরেকবার দেখেছিল। সিদরাতুল মুনতাহার নিকট। যার কাছে জান্নাতুল মা’ওয়া অবস্থিত। যখন কুল গাছটিকে যা আচ্ছাদিত করার তা আচ্ছাদিত করেছিল। তার দৃষ্টি এদিকÑসেদিক যায়নি এবং সীমাও অতিক্রম করেনি। নিশ্চয় সে তার রবের বড় বড় নিদর্শনসমূহ থেকে দেখেছে।” [সূরা নাজম : ৬-১৮]
২৪. তিনি ফেরেশতা কর্তৃক বক্ষ বিদীর্ণ লাভ করেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ পাক ফেরেশতাদের মাধ্যমে একাধিকবার বক্ষ বিদীর্ণ করান। আল্লাহর বাণী,
أَلَمْ نَشْرَحْ لَكَ صَدْرَكَ (১) وَوَضَعْنَا عَنْكَ وِزْرَكَ (২) الَّذِي أَنْقَضَ ظَهْرَكَ (৩) وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ (৪) فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا (৫) إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا (৬) فَإِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ (৭) وَإِلَى رَبِّكَ فَارْغَبْ (৮)

অর্থ : “আমি কি তোমার জন্য তোমার বক্ষ প্রশস্ত করিনি? আর আমি নামিয়ে দিয়েছি তোমার থেকে তোমার বোঝা। যা তোমার পিঠ ভেঙ্গে দিচ্ছিল। আর আমি তোমার (মর্যাদার) জন্য তোমার স্মরণকে সমুন্নত করেছি। সুতরাং কষ্টের সাথেই রয়েছে সুখ। নিশ্চয় কষ্টের সাথেই রয়েছে সুখ। অতএব যখনই তুমি অবসর পাবে, তখনই কঠোর ইবাদাতে রত হও। আর তোমার রবের প্রতি আকৃষ্ট হও।” [সূরা ইনশিরাহ : ১-৮]
২৫. তিনি মিরাজ বা উর্ধ্ব গমনে যাওয়া একমাত্র নবী : একমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর দীদার লাভের উদ্দেশে উর্ধ্ব গমনে আরোহনের অনুমতি দান করেন। আল্লাহর বাণী,
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِير
অর্থ : “পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা বনী ইসরাঈল : ১]

২৬. তাঁর অনুসরণ করা উম্মতের জন্যে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করা তাঁর উম্মতের জন্যে বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ (৩১
অর্থ : “বল, ‘যদি তোমরা আল্ল¬াহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্ল¬াহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্ল¬াহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। [সূরা : আলে ইমরান : ৩১]

২৭. তার অমান্যকারীরা শাস্তিপ্রাপ্ত হবে : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করা তাঁর উম্মতের জন্যে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর যে ব্যক্তি তাঁকে অমান্য করবে তাকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
) قُلْ أَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِين
অর্থ : “বল, ‘তোমরা আল্ল¬াহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর’। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে নিশ্চয় আল্ল¬াহ কাফিরদেরকে ভালবাসেন না।” [সূরা : আলে ইমরান : ৩২]

২৮. তিনি হলেন পথপ্রদর্শক : গোটা বিশ্বের কল্যাণকামী মানুষের জন্য মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন সত্য পথের দিশারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنْ يُوحَى إِلَيَّ إِلَّا أَنَّمَا أَنَا نَذِيرٌ مُبِينٌ
অর্থ : “আমার কাছে তো এ ওহীই আসে যে, আমি একজন স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র।” [সূরা সোয়াদ : ৭০]

২৯. তিনি বলপ্রয়োগকারী নবী নন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবতার প্রতি কখনো বল প্রয়োগ করেননি। আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
وَكَذَّبَ بِهِ قَوْمُكَ وَهُوَ الْحَقُّ قُلْ لَسْتُ عَلَيْكُمْ بِوَكِيل
অর্থ : “আর তোমার কওম তা অস্বীকার করেছে, অথচ তা সত্য। বল, ‘আমি তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নই।” [সূরা আনয়াম : ৬৬]
৩০. তিনি সকল নবীদের মধ্যে অন্যতম : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নবীদের মধ্যে অন্যতম একজন। আল্লাহ বলেন,
إِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ (৩) عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيم
অর্থ : “নিশ্চয় তুমি রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত। সরল পথের উপর প্রতিষ্ঠিত।” [সূরা ইয়াসীন : ২-৩]

উল্লিখিত কুরআনুল কারীমের আলোচনার মাধ্যমে আমরা নবীর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণাবলী সম্পর্কে জানতে পারলাম। নবীর উম্মাত হিসেবে আমাদেরকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার অনুসরন করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাওফিক দিন। আমীন!

সন্তান আল্লাহর নিয়ামাত

-হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল

আল্লাহ তা‘আলা মানব জীবনকে সন্তান-সন্তুতির মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় করেছেন। পারিবারিক জীবনে সন্তান-সন্ততি কতবড় নিয়ামত তা যার সন্তান হয়নি তিনি সবচেয়ে বেশি উপলব্ধি করে থাকেন। যাদেরকে আল্লাহ রাববুল আলামীন সন্তান দান করেছেন তাদের উপর এক মহান দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। পিতা-মাতার জন্য সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হবে যদি সন্তানকে আদর্শবান রূপে গড়ে না তুলতে পারেন। কেননা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَا مِنْ مَوْلُودٍ إِلاَّ يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ ، أَوْ يُنَصِّرَانِهِ ، أَوْ يُمَجِّسَانِهِ
প্রতিটি নবজাতক তার স্বভাবজাত দ্বীন ইসলামের ওপর জন্ম গ্রহণ করে। অতঃপর তার মা-বাবা তাকে ইয়াহূদী, নাসারা অথবা অগ্নিপূজক হিসেবে গড়ে তোলে [সহীহ আলবুখারী: ১৩৫৮]।
সন্তান একটি বিশেষ নিয়ামাত। এই সন্তান সম্পর্কে নিম্নোক্ত কয়েকটি বিষয় জানা থাকা একান্ত জরুরী।

১. সন্তান আল্লাহর নিয়ামাত
সন্তান আল্লাহ তাআলার এতো বড় নিয়ামাত যে, যার সন্তান নেই সেই তা বেশি উপলব্ধি করে থাকে । আর যাদের সন্তান আছে তারাও এটা অনুভব করেন। এ নিয়ামাত সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ يَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ الذُّكُورَ
অর্থ: আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন [সূরা আশশুরা: ৪৯]

২. সন্তান পিতা-মাতার জন্য একটি পরীক্ষা
পিতা-মাতার জন্য সন্তান-সন্তুতি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে পরীক্ষার বস্তু। আল্লাহ তাআলা সন্তান দিয়ে পরীক্ষা করেন যে, বান্দাহ তার শুকরিয়া আদায় করে কি না, সন্তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে কি না । এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَاعْلَمُوا أَنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ وَأَنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ
অর্থ: আর জেনে রাখ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো ফিতনা বা পরীক্ষার বস্তু। আর নিশ্চয় আল্লাহ, তাঁর নিকট আছে মহা পুরস্কার। [সূরা আনফাল-২৮]

৩. সন্তান একটি আমানত
সন্তান একটি আমানত। এই আমানতের খেয়ানত তথা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে আদায় না করলে কিয়ামতে অবশ্যই জবাবদিহী করতে হবে। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে,
أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ
অর্থ: আবদুল্লাহ ইবন উমার রা.শুনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই একজন দায়িত্বশীল অভিভাবক এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহী করতে হবে [সহীহ আলবুখারী:৮৪৪]

৪.সন্তান জাতির ভবিষ্যত
আল্লাহ তায়ালা বলেন :
رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُسْلِمَةً لَكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَا إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
অর্থ: ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত কওম বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ
‘হে আমার রব, আমাকে সালাত কায়েমকারী বানান এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও, হে আমাদের রব, আর আমার দোয়া কবূল করুন।
৫.নেক সন্তান সদকায়ে জারিয়াহ :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেন, মানুষ যখন মারা যায় তখন তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩টি বিষয় এমন যা বন্ধ হয় না, বরং তার ছাওয়াব মৃত ব্যক্তির আমল নামায় পৌঁছতে থাকে। ১. যদি সে সদকায়ে জারিয়া করে থাকে (মসজিদ, মাদরাসা, রাস্তা তৈরি ইত্যাদি)। ২. যদি এমন জ্ঞান বিতরণ করে, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হতে থাকে। ৩. যদি এমন নেক সন্তান রেখে যায়, যে তার মা-বাবার জন্য দোয়া করে থাকে[।সহীহ মুসলিম]

৬. সন্তানের হক আদায় জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম
সন্তানকে নিয়ামাত হিসাবে নিয়ে তাদের হক আদায় করতে পারলে জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ حَتَّى تَبْلُغَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنَا وَهُوَ وَضَمَّ أَصَابِعَهُ.

অর্থ: আনাস বিন মালিক রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,যে ব্যক্তি দুজন কণ্যা সন্তান লালন-পালন করল, সে আর আমি জান্নাতে পাশাপাশি থাকবো । [সহীহ মুসলিম:৬৮৬৪]

৭. সন্তান কোনো কোনো সময় আল্লাহর বিধান পালনে প্রতিবন্ধক হতে পারে
সন্তান কোনো কোনো সময় আল্লাহর বিধান পালনে প্রতিবন্ধক হতে পারে। সেজন্য প্রত্যেক পিতা-মাতাকে সজাগ এবং সতর্ক থাকতে হবে। এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ
অর্থ:হে মুমিনগণ, তোমাদের ধনÑসম্পদ ও সন্তান- সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ করে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। [সূরা মুনাফিকুন: ০৯]

৮. সন্তানের হক আদায় না করলে পরকালে কঠিন অবস্থা
সন্তানকে আল্লাহ ও তার রাসুলের পথে পরিচালনা করার জন্য সর্বত্বক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাদের হক আদায় না করলে পরকালে কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। আল্লাহ তাআলঅ বলেন,
وَقَالُوا رَبَّنَا إِنَّا أَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلَا – رَبَّنَا آتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيرًا
অর্থ: তারা আরো বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমরা আমাদের নেতৃবর্গ ও বিশিষ্ট লোকদের আনুগত্য করেছিলাম, তখন তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল ওহে আমাদের রব, আপনি তাদেরকে দ্বিগুণ আযাব দিন এবং তাদেরকে বেশী করে লানত করুন। [সূরা আলআহযাব-৬৭-৬৮]